• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বিশ্বের নেতৃত্ব দিতে হবে এশিয়াকেই : হাসিনা

ছবি : সংগৃহীত

বিদেশ

বিশ্বের নেতৃত্ব দিতে হবে এশিয়াকেই : হাসিনা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ৩১ মে ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব আজ অনেক প্রত্যাশা নিয়ে উদীয়মান এশিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। উদ্ভাবনে, অনুপ্রেরণায় বিশ্বকে শান্তি আর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে এশিয়াকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। উন্নত এশিয়া গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাঁচটি ধারণা পেশ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার জাপানের স্থানীয় একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত নিক্কেই সম্মেলনে যোগ দিয়ে তার উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলেন। নিক্কেই সম্মেলনের শিরোনাম হচ্ছে ‘এশিয়ার ভবিষ্যৎ’। সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য ‘বিশৃঙ্খলা দূর করে একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা চাই’।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও তাত্ত্বিকদের অংশগ্রহণে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে এ সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। বাসস।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ছাড়াও ‘আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি’ হিসেবে পরিচিত মাহাথির মোহাম্মদ, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন এবং ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে সম্মেলনে অংশ নেন।

জাপানি সম্প্রচার মাধ্যম নিকেই-এর এ আয়োজনকে এশিয়ার সম্ভাবনা ও উত্থান নিয়ে এ অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এর আগে জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি বাংলাদেশের জন্য আরো জাপানি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে জাইকার সহায়তা কামনা করেন।

এশিয়ার নেতাদের সামনে একটি সমৃদ্ধ এশিয়া গড়ে তোলার জন্য পাঁচটি ধারণা উপস্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একে বাস্তবে রূপদান করতে সরকার হিসেবে আমরা আমাদের ভূমিকা পালন করেছি এবং এ সম্পর্কে আপনাদের অভিমত ব্যক্ত করার জন্য এখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

প্রথম ধারণায় তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন এবং সংঘাতে পরিপূর্ণ। তাই আমাদের বৃহৎ উদারতায় বিশ্বকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করা প্রয়োজন, বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জগুলো যৌথভাবে মোকাবেলা করা, স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার সুরক্ষা করা, উদ্ভাবনী ধারণা এবং পদক্ষেপের ব্যবহার করে সহযোগিতার নতুন উদ্দীপনা জোরদার করা।

প্রধানমন্ত্রী তার দ্বিতীয় ধারণায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, দলগত কর্মকাণ্ডকে অতিক্রম করে অর্থনীতিকে উদ্ভাবনী চর্চার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সম্মানের ওপর ভিত্তি করে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে, জনগণের লাভের জন্য এবং সাধারণ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সবার জন্য সমান সুবিধাজনক কৌশল গ্রহণ করতে হবে। তৃতীয় ধারণায় তিনি বলেন, এশীয় দেশগুলোকে খোলা মন নিয়ে পরস্পরের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে, অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে, সমতা, অংশীদারিত্ব এবং যৌথ অনুদানের ভিত্তিতে। চতুর্থ ধারণায় শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক ধারাবাহিকতা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবার জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই এবং সমতাভিত্তিক উন্নয়নের ওপর এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

তিনি বলেন, আমাদের সংঘবদ্ধভাবে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে। সে জন্য আমরা একটি গোত্রবদ্ধ হয়ে দলগতভাবে বিশ্ব শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে পারি, যার লক্ষ্য হবে একটি বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর যথাযথ অধিকার এবং স্বার্থকে সংরক্ষণ করা।

সবশেষে যোগাযোগ সম্প্রসারণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা যোগাযোগ ব্যবস্থারই একটি গতিশীলতা যেটি বিশ্বজুড়ে শান্তি এবং সমৃদ্ধির ভিত রচনা করেছে। অবকাঠামো, মুক্ত বাণিজ্য এবং সহজ বিনিয়োগ এশিয়ার উন্নয়নের ভিত্তি ।

সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সংলাপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চায় বাংলাদেশ, যা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবেলার ক্ষেত্রে বিশ্ববাসীর জন্য একটি উদাহরণ হতে পারে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শুধু মানবিক আবেদনেই সাড়া দিচ্ছি না; এই সংকট যেন বিশৃঙ্খলা ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার দিকে না যায় সে বিষয়েও সচেতন রয়েছি। তীব্র উত্তেজনা ও সংকটের মুখেও এ সমস্যা সমাধানের জন্য সংলাপ ও ঐকমত্য চেয়েছি আমরা।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য আরো জাপানি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করার জন্য জাইকার সহায়তা কামনা করেছেন। জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক (সচিব) মো. নজরুল ইসলাম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য আরো জাপানি বিনিয়োগের ব্যবস্থা করার জন্য জাইকার সাহায্য চেয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাপানের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধান করে আরো বিনিয়োগের অনুরোধ জানান।

স্বাধীনতা লাভের পর থেকে জাপানকে বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে জাপান আমাদের অনেক সাহায্য করেছে।’ তিনি তরুণ প্রজন্মকে সুদক্ষ করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জাইকার প্রতি আহ্বান জানান।

জাইকার প্রেসিডেন্ট অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে মানবসম্পদের বিকাশের জন্য কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী জাইকার প্রেসিডেন্টকে জানান যে, জাপানের মতোই কৃষি থেকে শিল্পায়নের পথে চলতি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে এগিয়ে চলছে। এই প্রসঙ্গে, তিনি জাপানকে রোল মডেল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলায় জাপানের নাগরিকদের মৃত্যুর কথাও স্মরণ করেন এবং তার দুঃখ ও সহানুভূতি প্রকাশ করেন।

জাইকা প্রেসিডেন্ট তৃতীয় মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশ ও জাপানের দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনাকে ফলপ্রসূ হিসেবে বর্ণনা করে জাইকার প্রেসিডেন্ট বলেন, তারা এখন বাংলাদেশের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। জাইকা প্রেসিডেন্ট বলেন, তারা বাংলাদেশে গবেষণা কর্মসূচি আরো জোরদার করবে।

অন্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী এ এইচ এম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads