• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের নামে মিথ্যা নালিশ

ছবি : সংগৃহীত

বিদেশ

ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের নামে মিথ্যা নালিশ

প্রিয়া সাহার অভিযোগ দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২০ জুলাই ২০১৯

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার তার ওভাল অফিসে ধর্মের নামে অত্যাচারিত হয়েছেন এমন বিভিন্ন দেশের মানুষদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়া মানুষের কথা শোনেন। ওই প্রতিনিধিদলে বাংলাদেশি নারী সদস্য প্রিয়া সাহা বলেন, প্রেসিডেন্ট আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। আমাদের দেশে প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে বাস করতে চাই।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে এখনো ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ সংখ্যালঘু হিসেবে বাস করছে। তারা অনেক ঝুঁকি নিয়ে সেখানে বাস করছে। দয়া করে আপনি আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। সেখানে আমি আমার ঘরবাড়ি হারিয়েছি। তারা আমার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। তারা আমার জমিজমাও দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এর কোনো বিচার হয়নি।

তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই নারীকে প্রশ্ন করেন, জমি দখল করেছে, কারা ঘরবাড়ি দখল করেছে? প্রেসিডেন্টের প্রশ্নের জবাবে ওই নারী বলেন, মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন। তারা সবসময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়। সবসময়।

জানা গেছে, প্রিয়া সাহার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলায় চরবানিরীর মাটিভাঙ্গাতে। তার স্বামীর নাম মলয় সাহা। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কর্মচারী। থাকেন ঢাকায়। দুই মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করছেন। সেই সুবাদে প্রিয়া সাহা প্রায়ই সে দেশে যাতায়াত করেন।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়দানকারী প্রিয়া সাহার উদ্ভট দেশবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক অভিযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তুমুল সমালোচনার ঝড় বইছে। তার এই অভিযোগকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন অনেকেই।

প্রিয়া সাহার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেছেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশি নারীর নালিশ চক্রান্ত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থায় একাধিকবার ভরা হাউসে পৃথিবীর সব দেশের এবং বাংলাদেশ ও বাইরের দেশের এনজিওদের মানবাধিকারসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। যেখানে শ্রদ্ধেয় রানা দাশগুপ্তর মতো মানুষও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দেওয়া প্রিয়া সাহার অভিযোগের মতো কোনো অভিযোগ বা প্রশ্ন কাউকে করতে দেখিনি। তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি কেন এটা করলেন তা খতিয়ে দেখা হবে। তার অভিযোগগুলোও সরকার শুনবে এবং খতিয়ে দেখবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পও জানেন, তার কাছেও মিথ্যা অভিযোগ করা হয়। মার্কিন প্রশাসন তাদের এখানকার দূতাবাসের মাধ্যমেই প্রতিনিয়ত তথ্য পেয়ে থাকে এবং আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগে থাকি।

তিনি আরো বলেন, প্রিয়া সাহার সমালোচনা করতে গিয়ে অনেকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সমালোচনা করছেন। এটাও ঠিক নয়। যেমনটি নয় প্রিয়া সাহার করা অভিযোগ। সমাজের সর্বস্তরে যার বিচরণ এবং সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যার যোগাযোগ তার একই রকম আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃস্টান্ত বাংলাদেশ। অনেকেই ব্যক্তি স্বার্থে বা না বুঝে এটার ক্ষতি করে ফেলেন। সবার উচিত এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা।

প্রিয়া সাহার বক্তব্য নিয়ে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল বলেন, ওই মহিলার এ ধরনের বক্তব্য ফেসবুকে দেখলাম। কী বলব? তার সব কথাই মিথ্যা। সে দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে চরম মিথ্যাচার করেছে। দেশের বিরুদ্ধে কথা বলা ও কর্মকাণ্ড করা তো অবশ্যই দেশদ্রোহিতা। আমি তার বিচার দাবি করি।

গণমাধ্যম কর্মী প্রতীক ইজাজ সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, প্রিয়া সাহা, নিতান্তই ব্যক্তি স্বার্থের জন্য আপনার উচিত হয়নি দেশকে হেয় করা। দেশ ও দেশের মানুষকে এমনভাবে ছোট করা উচিত হয়নি আপনার। আপনি মিথ্যা বলেছেন। সম্পূর্ণ মিথ্যা। আপনাদের জন্য আমাদের অর্জন শেষ বেলায় এসে নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের এগোতে কষ্ট হয়। ছি।

শিরিনী আফরোজ নামের পিরোজপুরের অপর এক সংবাদ কর্মী লিখেছেন, প্রিয়া শাহার দুই মেয়ে আমেরিকায় পড়াশুনা করে। ওর স্বামী মলয় সাহা দুদকের বদনামী একজন কর্মকর্তা। কদিন আগে এই মহিলা প্রায় কোটি টাকার গাড়ি কিনেছেন। এই মহিলা আর তার দোসররা দেশে বসে সরকারের পা চেটে রাজকীয় জীবন নিশ্চিত করে আর বিদেশে গিয়ে আমার সোনার বাংলার বদনাম করে। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। সরকারের কিছু এমপি-মন্ত্রীর এখন থেকেই এদের ব্যাপারে সাবধান হওয়া উচিত।

সিনিয়র সাংবাদিক লাবণ্য ভূঁইয়া বলেন, দেশে রাজার হালে থেকেও ট্রাম্পের কাছে নালিশ করতে গেছে এই মহিলা..বাংলাদেশে ৮% হিন্দু ৩৩% সরকারি চাকরি করছে...অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে ৩০% মুসলিম ২% সরকারি চাকরি করছে... বাংলাদেশে নাকি ৩৭ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান গুম হয়ে গেছে..? বাংলাদেশের মুসলিম মৌলবাদীরা নাকি তার জায়গা-জমি দখল ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে...? বিচার দিয়ে এসেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এবং ট্রাম্পের সাহায্য কামনা করছে...যে অপশক্তি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করার জন্য তাদের দোসররা আবার সক্রিয়। এ দেশে সংখ্যালঘুরা হাজার গুণে ভালো আছে। ভালো ভালো পজিশনে থেকে, রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বদনাম করার সাহস পায় কীভাবে?

তরুণ সংবাদ কর্মী সুশান্ত সাহা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার এ ধরনের বক্তব্য ও পদক্ষেপ আমাদের দেশের বিরুদ্ধে নিছক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু নয়। বাংলাদেশ শান্তির দেশ। এখানে ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই। আমি ওই মহিলার দেশবিরোধী অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

হাবীবাহ নাসরীন নামের আরেক সংবাদ কর্মী বলেন, বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে এ মহিলা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলছে বাংলাদেশ থেকে নাকি ৩৭ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩ কোটি ৭০ লাখ বাংলা নামধারীদের (হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান) গুম করা হয়েছে! নিজের পরিবার ও নিজেকে একজন ভুক্তভোগী দাবি করা এ মহিলা বলছে এখনো নাকি বাংলাদেশে ১৮ মিলিয়ন বা এক কোটি ৮০ লাখ ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিম মৌলবাদীদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে কি সবমিলিয়ে সাড়ে পাঁচ কোটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু রয়েছে বা ছিল? এ মহিলাকে বিচারের সম্মুখীন করা দরকার।

উল্লেখ্য, ওই নারী মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে যে অভিযোগ করেছেন তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তিনি বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিখোঁজের যে অভিযোগ করেছেন কোনো পরিসংখ্যানে এমন তথ্যের উল্লেখ নেই। তার বক্তব্যের পর এমন ঘটনার কোনো সত্যতাই পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষের মধ্যে যথেষ্ট সম্প্রীতি রয়েছে বলে বিশ্বের কাছে এ দেশের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads