• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
‘খাঁচাবন্দি কাশ্মীর’

ছবি : সংগৃহীত

বিদেশ

কাশ্মীর ঘুরে আসা রাজনৈতিক ও সমাজকর্মীদের প্রতিবেদন

‘খাঁচাবন্দি কাশ্মীর’

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৬ আগস্ট ২০১৯

ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫ ধারায় জম্মু ও কাশ্মীরকে যে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সেখানকার জনগণ এখন ক্ষোভে ফুঁসছে। পাঁচদিন ধরে কাশ্মীরের নানা প্রান্ত ঘুরে সেই ক্ষোভের আঁচ পেয়েছেন ভারতের কয়েকজন রাজনীতিক ও সমাজকর্মী।

সমাজকর্মীরা প্রত্যক্ষ করেছেন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করারও পরিস্থিতি নেই সেখানে। সেই ক্ষোভ যাতে সামনে না আসে, তার জন্য একদিকে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে চলছে সংবাদমাধ্যমের ওপর অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ। গত বুধবার দিল্লিতে সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন রাজনীতিক ও সমাজকর্মী।

পাঁচদিনের সফর শেষে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে তারা যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কাশ্মীর কেজড’ অর্থাৎ খাঁচাবন্দি কাশ্মীর। তারা রাজধানী শ্রীনগরসহ রাজ্যের নানা প্রান্তে ঘুরে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছেন ৩৭০ ধারা বিলোপ এবং যেভাবে গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, তা নিয়ে একটা ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে এখানকার মানুষের মধ্যে। কিন্তু সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করার কোনো সুযোগ নেই। ওই দলের সদস্য, অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রঁজ বলেন, ‘শ্রীনগর হোক বা তার বাইরে, সব জায়গাতেই মানুষ ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, যেন একটা জেলখানায় তাদের রেখে দেয়া হয়েছে। খুব বেশি প্রতিবাদ করতে পারছেন না তারা। সরকার নিষেধাজ্ঞা একটু শিথিল করলেই মানুষ প্রতিবাদ জানাতে বেরিয়ে পড়ছেন, তাই আবারো নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হয়ে যাচ্ছে। আর সৌরার মতো যেখানে কিছুটা প্রতিবাদ হচ্ছে, সেখানেই ছররা গুলি চালাচ্ছে।’

হাসপাতালগুলোতে ছররা গুলিতে আহত এরকম বেশ কয়েকজনকে তারা দেখেছেন বলে জানান দ্রঁজ। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৬০০ রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে আটকে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শহরে বা গ্রামে যেখানেই তারা গেছেন, সেখানেই দেখেছেন তরুণ বা যুবক, এমনকি স্কুলছাত্রদেরও আটক করে রাখা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী মাঝরাতেও বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালিয়ে আটক করছে। এক বৃদ্ধকে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই কেন রাস্তায় যেতে দিতে অনুরোধ করেছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীকে, এই অভিযোগে ছররা গুলি ছোড়া হয়েছে এক যুবকের দিকে।

প্রতিনিধি দলটির আরেক সদস্য ‘সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি’র নেত্রী মাইমুনা মোল্লা জানান, ‘মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের নেতাদের আটক তো করা হয়েছেই; উপরন্তু প্রায় প্রতিটি গ্রাম থেকেই অনেক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ সংগঠিত করার দক্ষতা আছে, এমন লোকদেরই আটক করা হয়েছে। কত লোক যে জেলে আছে, কেউ জানে না।’

অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রঁজ আরো জানান, ‘সেখানে সংবাদমাধ্যমের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। কাশ্মীরি সংবাদমাধ্যম তো কোনো কাজই করতে পারছে না। তাদের কাছে কোনো সংবাদও পৌঁছাচ্ছে না। তাদেরও খবর সংগ্রহ করার কোনো উপায় নেই। দু-একটি খবরের কাগজ হয়তো কোনোভাবে বেরুচ্ছে। কখনো দুই কিংবা চার পাতার কাগজ ছাপছে। তাও সেই কাগজ বিক্রি করার সুযোগ তেমন নেই। তাদের ওপরও খবরদারি চলছে। আর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের হাতেগোনা কয়েকজন সাংবাদিক আছেন, যারা সত্য চিত্রটি তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।’

তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো কাশ্মীরের আসল চিত্র তুলে ধরতে পারছে বলে মন্তব্য করেন দ্রঁজ। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বেশিরভাগ ভারতীয় সাংবাদিকই শ্রীনগরের যে অংশ থেকে কাজ চালাচ্ছেন, সেখানে মাঝে মাঝে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না, তা নয়। কিন্তু সেটাকেই কাশ্মীরের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে যে সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে, সেটা অসত্য।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads