• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
উত্তপ্ত কাশ্মীরকে শান্ত করবে কে?

ছবি : সংগৃহীত

বিদেশ

উত্তপ্ত কাশ্মীরকে শান্ত করবে কে?

  • মোমেনা আক্তার পপি
  • প্রকাশিত ২২ আগস্ট ২০১৯

উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কাশ্মীর। অবরুদ্ধ কাশ্মীরের জনমনে ক্রোধ চরম পর্যায়ে রয়েছে। যেকোনো সময় সেই ক্রোধের চূড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। উপত্যকাজুড়ে হিংসাত্মক কার্যকলাপ শুরুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে সেখানকার সড়কগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি আর কিছুই দেখা যায় না। ঘরের সামনে অস্ত্র হাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও প্রাণের ভয় না করে নরেন্দ্র মোদি সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে শুরু করেছে জনগণ। গতকাল বুধবার সকালেও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কাশ্মীর। নিহত হন দুজন। এর আগে শ্রীনগরের কারফিউ প্রত্যাহার করা হলে সেখানকার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে। নিহত হয় একজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হলে সেখানে ফের কারফিউ জারি করা হয়।

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান শুরু থেকেই মোদি সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে। তারা এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে বলে জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চীনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়। সর্বশেষ এ বিষয়ে মধ্যস্থতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

স্বাধানীতার দাবিতে বছরের পর বছর ধরে আন্দোলন করে যাওয়া কাশ্মীরিদের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদাটুকুও কেড়ে নেওয়ার ফলে তাদের মনের অবস্থা কি হতে পারে তা সহজেই বোধগম্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই কাশ্মীরিদের অশান্ত মন শান্ত করবে কে? ইমরান খান, ট্রাম্প নাকি মোদি। তারা কেউ কি আদৌ কাশ্মীরের জনগণের কথা ভাবছে নাকি মাটি দখলের চিন্তায় মত্ত। নাকি শুধু রাজনৈতিক কারণে এই ইস্যুতে তারা নিজেদের জড়ানোর চেষ্টা করছে।

যে মোদি সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে তারা কখনো সেখানকার মানুষের কথা ভাববে না তা স্পষ্ট। উত্তাল হওয়া কাশ্মীরকে দমাতে তাদের সামনে অস্ত্র ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তবে ইতিহাস বলে অস্ত্র দিয়ে মানুষকে ঘরে বন্দি করা যায়, মনের আগুনকে নয়। অস্ত্রের ব্যবহার করলে আরেকটা কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা হবে। মারা যাবে অসংখ্য মানুষ। তবে যেসব অঞ্চলে অস্ত্রের মাধ্যমে জনগণকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে সেখানে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছে নারী ও শিশুরা। ১৯৯১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ভারত সরকার কাশ্মীরে সামরিক অভিযান চালায়। সে অভিযানে সেনারা কুপওয়ারা জেলার কুনান ও পসপোরা গ্রামের ৩০ জন মহিলাকে ধর্ষণ করে। যদিও ভারতীয় সেনারা বরাবরই ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে ওই বছরের জুলাইয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কুনান ও পসপোরা গ্রামে গণধর্ষণের মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। কর্তৃপক্ষ বিচারপ্রার্থীদের ক্রমাগত নানাভাবে বাধা দিয়েছে।   

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনী গত মঙ্গলবার রাতেই জম্মু-কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলায় তল্লাশি চালাতে শুরু করে। তাদের ওই এলাকায় প্রবেশের খবর পেয়েই গুলি চালায় জঙ্গিরা। দুপক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় শুরু হয়। তখনই সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয় একজন। সেনা ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, জম্মু-  কাশ্মীর পুলিশ এবং ভারতীয় জওয়ানরা যৌথভাবে অভিযান চালিয়েছে। জঙ্গিদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক গুলিবিনিময় হয়েছে। এতে স্পেশাল পুলিশ ফোর্সের এক সদস্যও নিহত হয়েছেন।

কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা না গেলেও ভারতের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বলছে মোদি সরকারের এই পদক্ষেপে ফুঁসছে জম্মু-কাশ্মীরের জনগণ। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের পর কাশ্মীরিদের মধ্যে একটা উদ্বেগ কাজ করছে। কাশ্মীর সম্পর্কে অভিজ্ঞতা রয়েছে বা সেখানে কাজ করেছেন-এমন একাধিক অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সেখানে উত্তেজনার আশঙ্কা করছেন। কেন্দ্রীয় সরকার যাতে কাশ্মীর নিয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপগুলো দ্রুত শুরু করে, সেই পরামর্শও তারা দিয়েছেন।

গত ৪ আগস্ট থেকে কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর। সেখান সাবেক মুখ্যমন্ত্রীরাসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফলে, সেখানকার সাধারণ মানুষ নেতৃত্বহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছে। তাই এখনো সে অর্থে উত্তেজনা মাথাচাড়া দিতে পারেনি। তবে কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী নেতারা আগামীকাল শুক্রবার সেখানে গণবিক্ষোভোর ডাক দিয়েছেন।

স্বাধীনতাকামী প্রধান গ্রুপগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী জয়েন্ট রেজিসট্যান্স লিডারশিপের একটি পোস্টারে বলা হয়েছে, প্রত্যেক ব্যক্তি-তরুণ, বৃদ্ধ, পুরুষ ও নারীর উচিত কাল জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ-মিছিলে যোগ দেওয়া। পোস্টারে মিছিল নিয়ে শ্রীনগরে জাতিসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষক দপ্তরে যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম যুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে শ্রীনগরে জাতিসংঘের এই পর্যবেক্ষক দপ্তর খোলা হয়। আরেকটি পোস্টারে লেখা রয়েছে, অন্য রাজ্য থেকে লোক এনে কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরের জনমিতি পরিবর্তনের পরিকল্পনা করেছে। ইমামরা যেন জুমার নামাজে এই আশঙ্কার কথা মুসল্লিদের কাছে তুলে ধরেন।

এদিকে কাশ্মীর ইস্যুতে প্রয়োজনে মধ্যস্থতা করবেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা জানান। শিগগিরই তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আবারো কাশ্মীর ইস্যুতে কথা বলবেন বলে জানান। ট্রাম্প বলেন, ভৌগোলিকভাবে কাশ্মীরের অবস্থান খুব জটিল। সেখানে হিন্দু, মুসলিম সবাই বসবাস করে। আমি বলব না যে তারা এখন একসঙ্গে খুব ভালো আছে। যদিও এর আগে তিনি কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন, ফ্রান্সে অনুষ্ঠিতব্য জি-সেভেন সম্মেলনে কাশ্মীর ইস্যু তোলা হবে। এ ছাড়া ফ্রান্সের কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, এ সম্মেলনের সাইডলাইনে মোদির সঙ্গে বৈঠকে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে কথা বলবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। আগামী ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট ফ্রান্সের বিয়ারিৎসে ৪৫তম জি-সেভেন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads