• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

প্রবাস

মালয়েশিয়ার জঙ্গলে আতঙ্কে দিন কাটছে বাংলাদেশিদের

১৪ বছরে মারা গেছেন ৪,৩২১ শ্রমিক

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

পরিবার ও নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে ভালো চাকরির আশায় মালয়েশিয়া পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশিরা আতঙ্কিত জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকের কাজের পারমিট বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। নিয়োগদাতাদের কাছ থেকে পালাতে গিয়ে দেশের বনে- জঙ্গলে অস্থায়ী খুপড়িতে দিনাতিপাত করছেন তারা। ধরা পড়লে দেশে ফেরত আসতে হবে। এক বছর ধরে জঙ্গলেই দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন এমন ১৬ বাংলাদেশির সংবাদ দিয়েছেন মালয়েশিয়ার অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মালয়সিয়াকিনি ও মালয় মেইল।

জঙ্গলে দিনাতিপাত করা ১৬ বাংলাদেশির একজন হচ্ছেন আল আমিন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমার বাড়ির গরুরাও এর চেয়ে ভালো পরিস্থিতিতে থাকে। তিনিসহ আরো কয়েকজন বাংলাদেশিকে সম্প্রতি কাজ থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগ, সম্প্রতি তাদের মজুরি কমিয়ে দেওয়া হয়। তারা সেলানগরের কাপারে একটি ছাপা কারখানায় কাজ করতেন। সেখানে শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত মেসে থাকতেন। তবে শ্রমিক সংখ্যা বেশি হওয়ায় চারজনের কক্ষে ২০ জন পর্যন্ত মানুষ থাকত। অতিরিক্ত লোক থাকায় ও ঋণের নামে তাদের মজুরি কমিয়ে দেওয়া হয় গত বছর। যদিও তাদের ঋণ নিয়োগদানের সময়ই চুক্তির আওতায় শোধ হয়ে যাওয়ার কথা। নিয়োগদাতাদের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানালে আল আমিনসহ অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়।

তারা জানান, তাদের নিয়োগদাতা ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়নি। দেওয়া হয়নি নতুন কাজের পারমিট। তাদের দুই সহকর্মীকে আটক করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের প্রাপ্য বেতনও পরিশোধ করা হয়নি। এরপরই বাকিরা ভয়ে হাইওয়ের কাছে এক জঙ্গলে পালান। অদূর ভবিষ্যতে কাজের পারমিট ফিরে পাওয়ার আশায় রয়েছেন তারা।

মালয়সিয়াকিনির প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা মুকসেদ আলীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ফোনে কথা বলা, সিগারেট খাওয়া ও প্রতিষ্ঠানের দেওয়া জুতা না পরার কারণে ওই শ্রমিকদের শাস্তি দেওয়া হতো। শেষমেশ প্রতিষ্ঠানের বিধি ভঙ্গের দায়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।

জঙ্গলে বাসরত দলের আরেক সদস্য হচ্ছেন কিশোরগঞ্জের নোয়াকান্দি গ্রামের মান্নান মিয়া। তিনি জানান, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য কামাল চন্দ্র দাস নামের এক দালালকে ১২ হাজার রিঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই লেনদেনের কোনো কাগজপত্র নেই তার কাছে। ওই দালাল তার টাকা মেরে দিয়েছে। তাকে বৈধ কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। প্রফেশনাল ভিসায় গিয়েও অবৈধ রয়ে গেছেন তিনি।

তিনি বলেন, আমার সব স্বপ্ন গিলে খেয়েছে দালালরা। পরিবারকে সাহায্য করা তো পরের কথা, নিজের জীবন নিয়েই আতঙ্কে আছি আমি। সারা দিন কঠোর পরিশ্রম করেও রাতে এসে এই জঙ্গলে ঘুমাতে হচ্ছে।

মালয় মেইল জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় গত এক বছরে প্রতিদিন গড়ে দুজন করে বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে। বেশিরভাগেরই মৃত্যু হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়ে। তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৮ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে। সব মিলিয়ে গত এক বছরে এ রকম মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৭৩৬ জন শ্রমিকের। আর ২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন মোট ৪ হাজার ৩২১ জন। সম্প্রতি বছরগুলোয় মৃত্যুর হার বেড়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads