• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বিদেশে নারীকর্মী পাঠানো বন্ধ হতে পারে

ছবি : সংগ‍ৃহীত

প্রবাস

বিদেশে নারীকর্মী পাঠানো বন্ধ হতে পারে

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৬ নভেম্বর ২০১৯

প্রবাসী বাংলাদেশি নারীশ্রমিকদের নির্যাতন ঠেকাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে। শিগগিরই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এই কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সহায়তা চাওয়া হবে। এতেও বন্ধ করা না গেলে স্থায়ীভাবে বিদেশে নারীশ্রমিক পাঠানো বন্ধ করা হতে পারে।

অত্যাচার নির্যাতনের মুখে সৌদি আরব থেকে হাজারো নারীর ফিরে আসার কাহিনী, এমনকি প্রাণহানির খবর সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। তবে এখনো অনেক নারী বিদেশে কাজ নিয়ে যাচ্ছে। যদি নির্যাতন বন্ধ করা না যায় প্রয়োজনে বিদেশে নারীশ্রমিক পাঠানো বন্ধ করতে নীতিগত সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে কথা বলেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ। জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা বাংলাদেশের খবরকে টেলিফোনে জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কীভাবে বিদেশে বাংলাদেশি নারীদের নির্যাতন বন্ধ করা যায় সেটি আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করছি।

তিনি বলেন, কয়েকটি দেশে এই ঘটনা ঘটছে। আমাদের রাষ্ট্রদূতসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাজ করছেন। ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সহায়তা দিতে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের চিঠি দিয়ে উদ্বেগ জানানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে।  

জানা গেছে, যারা নির্যাতিত হয়ে ফিরে এসেছেন তারা সবাই চান, সৌদি আরবে নারীশ্রমিক পাঠানো বন্ধ করা হোক। কিন্তু বিদেশ যেতে ইচ্ছুক নারীরা বন্ধ করাটাকে সমাধান মনে করছেন না। তারা চাইছেন নিরাপদ অভিবাসন।

জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদের ‘প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়’ সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৬ষ্ঠ বৈঠক গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সদস্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, মৃণাল কান্তি দাস, আয়েশা ফেরদাউস, পংকজ নাথ এবং মো. ইকবাল হোসেন বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত নারীশ্রমিক ফেরত আসার কারণ এবং কর্মরতদের ওপর নির্যাতন বন্ধে মন্ত্রণালয় কর্তৃক (দূতাবাসসমূহ এবং বায়রাসহ) গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আাালোচনা করা হয়।

ঢাকার বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে তথ্য পাওয়া গেছে, এখনো অনেক নারী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন জীবিকা অর্জনে বিদেশে পাড়ি জমাতে। আরবি ভাষার প্রাথমিক জ্ঞান, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহূত আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার শিখছেন অনেকে। সাবিনা নামের একজন সৌদি আরবে চার বছর কাজ করে এসেছেন। বেতন এবং কাজের পরিবেশ ভালো পেয়েছিলেন বলেই আবার যাচ্ছেন। সৌদি আরবই তার পছন্দের দেশ।

অন্যদিকে কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই দালালের মাধ্যমে সৌদি গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরেছেন অনেক নারী। তারা বলছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কোনো নারীকে যেন বিদেশে পাঠানো না হয়। বিদেশে যেতে ইচ্ছুক নারীদের বেশির ভাগই অল্প শিক্ষিত ও দরিদ্র। জীবনের তাগিদে তারা বিদেশে যাচ্ছেন। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানকে চিঠি দিলেও খুব বেশি অগ্রগতি হবে বলে মনে হয় না। তবে এটি একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া যাবে তাদের কাছে। বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত সোয়া ৩ লাখ নারী সৌদি আরবে গেছেন। ব্র্যাক মাইগ্রেশনের তথ্যে চলতি বছরে এ সংখ্যা ৫৩ হাজার ৭৬২ জন। এর মধ্যে কেউ কেউ ফিরে এসেছেন ভয়ংকর নির্যাতনের অভিজ্ঞতা নিয়ে। গত চার বছরে লাশ হয়ে ফিরেছেন ১৫৭ জন নারী। চলতি বছরের এ পর্যন্ত কেবল সৌদি থেকে ৫৩ জন বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীর মৃতদেহ এসেছে। সব মিলিয়ে এই সংখ্যা প্রায় ৬০।

বিদেশ ফেরত কর্মীদের বিমানবন্দরে হয়রানি দূর করার বিষয়ে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads