• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

বিদেশ

সু চির মিথ্যাচার

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

শান্তিতে নোবেল পাওয়া অং সান সু চি এখন অশান্তির প্রতীক। গণতন্ত্রের নেত্রী হিসেবে পরিচিত সু চি পরিণত হয়েছেন গণহত্যাকারীতে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও একের পর এক করে যাচ্ছেন মিথ্যাচার। গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনের দায়ে ১৫ বছর ধরে তাকে গৃহবন্দি করে রাখে সামরিক জান্তা সরকার। অথচ সেই সেনাবাহিনীর জন্য তিনি মিথ্যাচার করছেন ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে)। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে গাম্বিয়ার করা মামলায় সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে গণহত্যার দায় এড়াতে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ালেন সু চি। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার।

রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও গণহত্যার অভিযোগে আইসিজে দায়েরকৃত মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানি হয় গতকাল বুধবার। শুনানিতে অংশ নিয়ে মিয়ানমারের নেত্রী সু চি বলেন, দুঃখজনকভাবে রাখাইনের অসম্পূর্ণ এবং বিভ্রান্তিকর চিত্র উপস্থাপন করেছে গাম্বিয়া। এখানে শুধু অনুমানের ওপর ভিত্তি করে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা হতে পারে না। সামরিক বাহিনীর অভিযানে রক্তপাত হলেও গণহত্যার মতো কিছু হয়নি। আমরা আদালতের কাছে আর্জি জানাই তারা যেন এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকে, যা রাখাইনের বর্তমান সহিংস পরিস্থিতিকে আরো তীব্র করে তোলে। তিনি রাখাইনের সহিংস পরিস্থিতির জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেন।

বক্তব্যের শুরুতে তিনি আন্তর্জাতিক আইন ও সনদসমূহের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, গণহত্যার উদ্দেশে অভিযান পরিচালনার অভিযোগে বিচার শুরু হয়েছে। রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘন কোনোভাবেই মেনে নেবে না আমাদের সরকার। দেশের বিচার ব্যবস্থা যখন ব্যর্থ হবে, শুধু তখনই আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এর বিচার করতে পারবে।

যেসব সেনার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো কোনো কাজ যদি করে তাহলে দেশের সংবিধান অনুযায়ী বিচার হবে। রাখাইন পরিস্থিতি জটিল এবং রোহিঙ্গারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, যে কারণে অনেকে নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশে পালিয়েছে। ২০১৭ সালের রক্তাক্ত অভিযানকে তিনি বারবার তিনি অভ্যন্তরীণ সংঘাত বলে দাবি করে আসছেন। সু চি বলেন, স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার জবাবে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়েছে।

এ মামলায় গণহত্যার অভিপ্রায় শুধু অনুমাননির্ভর হতে পারে না। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন গণহত্যার উদ্দেশ্য কী হতে পারে; যা অন্যায় কাজ করার দায়ে অভিযুক্ত সৈনিক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে তদন্ত, বিচার ও শাস্তি দেয়? যদিও এখানে সবার মনোযোগ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ওপর তারপরও আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বেসামরিক অপরাধীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সেনা সদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করে থাকলে তা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে। এ বিষয়টিকে আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ নেই। ১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদ এখানে প্রযোজ্য নয়। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে চালানো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অপারেশনকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল শুধু সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবিলা।

ক্লিয়ারেন্স অভিযান পরিচালনার সময় কখনো কখনো অননুমোদিত শক্তি প্রয়োগ করে থাকতে পারে সেনাবাহিনী। তবে এটি ঠিক যে, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইনের পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল এবং এটি বাইরে থেকে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। তখন আইনজীবী অধ্যাপক সাবাস বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জোর করে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রাক-তদন্তে জোরপূর্বক বিতাড়নকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। সু চি বলেন, রোহিঙ্গাদের বাধ্যতামূলক দেশ ত্যাগের অভিযোগটি মানবতাবিরোধী অপরাধ হলেও গণহত্যা হতে পারে না।

আরাকানে মুসলমানদের ইতিহাস বর্ণনা করে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে সংঘাতের ফল হিসেবে অভিহিত করে সু চি বলেন, কয়েকশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও বিচারব্যবস্থা এ নিয়ে কাজ করছে। ভবিষ্যতে রাখাইনে কোনো ধরনের বৈষম্য করা হবে না। মুসলমান শিশু ও ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তি চালু করা হচ্ছে। তিনটি আইডিপি (ইন্টারন্যালি ডিসপ্লেসড পিপল) শিবির বন্ধ করা হয়েছে। দেশান্তরিত লোকজনকে স্বেচ্ছামূলক ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ রকম অবস্থায় কীভাবে বলা হয় যে গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে সেখানে কার্যক্রম চলছে?

গতকাল মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসে রাজধানী দ্য হেগে জাতিসংঘের শীর্ষ এ আদালতে সাবেক গণতন্ত্রের প্রতীক সু চিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানায় মামলার বাদী আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।  আজ (বৃহস্পতিবার) দুবেলা অধিবেশন বসবে। উভয় পক্ষই ৯০ মিনিট করে সময় পাবেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে সামরিক অভিযানের মুখে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। রক্তাক্ত এ অভিযানে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও চালানো হয়। প্রাণে বাঁচতে সে সময় রোহিঙ্গাদের ঢল নামে প্রতিবেশী বাংলাদেশে। পশ্চিম আফ্রিকার ক্ষুদে মুসলিম দেশ গাম্বিয়া ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্যদের উৎসাহে গণহত্যার দায়ে মামলা করে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতে তোলে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads