• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

বিদেশ

রোহিঙ্গা সংকট : নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে বিচারের রায় আজ

রায়ের পর মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়বে

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৩ জানুয়ারি ২০২০

আজ বৃহস্পতিবারই হতে পারে মিয়ানমারের হিসাব মেলানোর দিন। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার করা মামলার রায় দেওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ আশা করছে, নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার হবে। এর মাধ্যমে মিয়ানমারের প্রতি আইনি চাপ বাড়বে। আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোও সহজ হবে।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ কয়েক দশকের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আজ রায় আসবে। জাতিগত নির্মূল অভিযান ২০১৭ সালের আগস্টে ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার রূপ নেয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে গণহত্যাসহ সব ধরনের নিপীড়নের হাত থেকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের কাছে আবেদন করে গাম্বিয়া।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) আইসিজের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। আইসিজে কোনো ব্যক্তির বিচার করছে না। ব্যক্তির বিচার করে আইসিসি। অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না, তা যাচাই করা বা তদন্তের কাজটি আইসিসির একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কিন্তু আইসিজে কোনো তদন্ত করে না, বরং আন্তর্জাতিক চুক্তির বাধ্যবাধকতাগুলো কোনো দেশ মানছে কি না, সেটি নির্ধারণ করে। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে থাকে।

সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে গত ১১ নভেম্বর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলাটি করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।  ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে মামলা করা দেশটি মিয়ানমারের গণহত্যার আচরণ অবিলম্বে বন্ধ করার ব্যবস্থা বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে জরুরিভাবে আদেশ দেওয়ার আহ্বান জানায়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) তথ্যমতে, ১৯৯৩ সালের আন্তর্জাতিক আদালতে প্রথম গণহত্যাবিষয়ক মামলায় সার্বিয়ার বিরুদ্ধে অস্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কারণ ওই মামলায় প্রমাণিত হয়েছিল, বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তি স্থাপনে দায়িত্ব লঙ্ঘন করে সার্বিয়া। তথ্যমতে, ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এক কঠোর বিদ্রোহ দমন অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এতে গণধর্ষণ, হত্যা ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়াসহ জাতিগত নির্মূল অভিযান থেকে বাঁচতে সাত লাখের অধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশ অবস্থান করছে। তারা এখন বাংলাদেশের জন্য সংকট হিসেবে সামনে আসতে শুরু করেছে। সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন ঊর্ধ্বতনরা বিভিন্ন সময় বলেছেন, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা দেশের জন্য সমস্যা।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের অভিযোগের মধ্যে ছিল হত্যা, গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিসাধন, ভৌত বিনাশ বয়ে আনার মতো পরিস্থিতি তৈরি, জন্মরোধের ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া ও জোরপূর্বক স্থানান্তর। এগুলো গণহত্যার বৈশিষ্ট্য। কারণ এসবের উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করে দেওয়া।

গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী আবুবাকার মারি তামবাদো ওই সময় এক বিবৃতিতে বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের চালানো গণহত্যার বিচার ও জবাবদিহি চাইতে এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক আচরণ যা সব রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক তাকে সমর্থন ও জোরদার করতে গাম্বিয়া এ পদক্ষেপ নিচ্ছে। মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান গত অক্টোবরে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, সেখানে গণহত্যার পুনরাবৃত্তির গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে।

অবশ্য এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার চার দিন আগে সোমবার মিয়ানমারের গঠিত একটি তদন্ত কমিটি বলেছে, ২০১৭-এর রোহিঙ্গা সংঘাতে যুদ্ধাপরাধ এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটেছে। তবে সেগুলোতে গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল না। ইনডিপেনডেন্ট কমিশন অব ইনকোয়ারি (আইসিওই) গতকাল মঙ্গলবার দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এবং স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে দেখা করে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করেছে।

গণহত্যা সনদের স্বাক্ষরকারী দেশ মিয়ানমার। তারা সত্তর বছর আগে এই সনদে সই করেছে। মিয়ানমার একটি জাতিগোষ্ঠীকে তার সব ধরনের মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে যে ধরনের পদ্ধতিগত বৈষম্য ও নিপীড়ন চালিয়ে এসেছে তা এই সনদের লঙ্ঘন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিগত বৈষম্য, নিপীড়ন, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও বাস্তুচ্যুতির মতো গুরুতর অপরাধগুলোর কোনোটিই অস্বীকারের উপায় খুঁজে পায়নি মিয়ানমার। অবশ্য দেশটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এতে অপরাধ হয়ে থাকলেও হতে পারে। কিন্তু সেসব অপরাধে গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল না। দেশটির পক্ষে সাফাই দিতে হাজির হয়ে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারজয়ী অং সান সু চি দাবি করেছেন, সন্ত্রাস মোকাবেলায় যেসব অপরাধ ঘটেছে, তাকে গণহত্যা বলা যায় না।

সু চি অজুহাত দিয়েছেন, আদালতের যে কোনো অন্তর্বর্তী আদেশ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া উদ্বাস্তুদের সম্ভাব্য পুনর্বাসনে বাধা তৈরি করবে। এই মানবিক সংকটে গাম্বিয়া সরাসরি কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায় আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে আসার কোনো অধিকার দেশটির নেই দাবি করে আবেদনটি খারিজ করারও অনুরোধ জানিয়ে ছিলেন তিনি।

কোনো অন্তর্বর্তী আদেশ দেওয়ার আগে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে এমনটি নিশ্চিত হওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী কোনো রাষ্ট্র কোনো সংঘাতের ক্ষেত্রে কোনো জনগোষ্ঠীকে সম্ভাব্য গণহত্যা থেকে সুরক্ষা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে কি না, তা বিচারের ক্ষমতা আন্তর্জাতিক আদালতকে দেওয়া আছে। এই আলোকে বিষয়টি পুরোপুরি ১৭ বিচারপতির বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads