• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

বাংলাদেশ

কৃষিশিক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

  • বাসস
  • প্রকাশিত ০১ মার্চ ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষা তাদের পাঠ্যক্রমে থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, মাটিতে হাত দিয়ে চারা রোপন করলে বা কাজ করলে লজ্জার কিছু নেই।

তিনি বলেন, বরং নিজের হাতে বাগান করলে সেই বাগানে যখন একটা ফল হয় সেটা ছিঁড়ে খেতে আরো বেশি গর্ববোধ হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের আমরা লেখাপড়া শিখাচ্ছি। এখন লেখাপড়া শেখার পর অনেকে আর জমিতে কাজ করতে যেতে চাইছে না। আমি বলব আমাদের ছেলে-মেয়েরা যাতে কৃষিকাজে অন্তত আন্তরিক হয় সেজন্য তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কৃষির ব্যবহারিক শিক্ষাটা যেন থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য আমি বিশেষভাবে আহবান জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার - ১৪২৩’ বিতরণকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

কৃষি আমাদের জীবন এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষি থেকে ধীরে ধীরে আমরা শিল্পে উন্নীত হব, কিন্তু কৃষিকে বাদ দিয়ে নয়। কারণ, কৃষিইতো আমার কাঁচামালের যোগানটা দেবে; আর আমাদের খাদ্যের যোগান দেবে।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ৩২ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাঝে ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার – ১৪২৩’ প্রদান করেন। এরমধ্যে ৫টি স্বর্ণ, ৯টি রোপ্য এবং ১৮টি ব্রোঞ্জ পদক প্রদান করা হয়।

স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক প্রাপ্তদের মাঝে পদকের সঙ্গে যথাক্রমে নগদ এক লাখ টাকা, ৫০ হাজার টাকা এবং ২৫ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়।

পুরস্কারের ক্যাটাগরিতে ক্রপ এগ্রিকালচার, মৎস, প্রাণিসম্পদ ও বনায়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

দেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি মাছ রপ্তানি করে জাতীয় অর্থনীতিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ মৎস অধিদপ্তর স্বর্ণ পদকে ভূষিত করা হয়।

ব্যক্তি পর্যায়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খামার স্থাপন করে অনুকরণীয় নজির স্থাপনের মাধ্যমে কৃষিতে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ আলহাজ মো. মকবুল হোসেন এমপি স্বর্ণ পদক লাভ করেন।

প্রতিকূল পরিবেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কৃষি খামার স্থাপনের জন্য নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ কৃষি ও কৃষি সহায়ক গবেষণার মাধ্যমে ফসলের মানোন্নয়ন ও নতুন জাত উদ্ভাবনে কাঙ্খিত জীন প্রতিস্থাপন পদ্ধতি উদ্ভাবনের স্বীকৃতি স্বরূপ কৃষি গবেষণা ক্যাটাগরিতে প্রফেসর রাখহরি সরকার এবং প্রচলিত কৃষি পণ্যের পাশাপাশি অপ্রচলিত কৃষি পণ্য উৎপাদনের স্বীকৃতি স্বরূপ মো. আমিনুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণ পদক গ্রহণ করেন।

কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়ন সচিব মইনুদ্দিন আব্দুল্লাহ স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং পদক বিতরণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

পদক বিজয়ের অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন যশোরের ফারহানা ইয়াসমিন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে এখন অনেকেই ছাদের ওপর বাগান করছেন উল্লেখ করে বলেন, গ্রাম-গঞ্জ পর্যায় পর্যন্ত সবাইকে এই কাজে উৎসাহিত করা উচিত। প্রত্যেকে অন্তত নিজের ঘরেও যদি বাগান করে বা নিজের যেসব জমি আছে সেখানে বাগান করেন অথবা অব্যবহৃত যেসব জমি পড়ে আছে কো-অপারেটিভের মাধ্যমে সেসব যদি চাষ করা যায় তাহলে আমাদের খাদ্যের অভাবতো হবেই না উপরন্তু আমরা বিশ্বের অনেক দেশের মানুষকে খাদ্য সাহায্য দিতে পারবো, সেই সক্ষমতা আমরা অর্জন করবো।

তিনি বলেন, এই জন্য আমরা চাচ্ছি আমাদের ছেলে-মেয়েরা ছোটবেলা থেকেই যেন এই কাজটা শিখে নেয়। তাদের জানা উচিত, শেখা উচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষবাস শুরু করেছি। কৃষিকে আমরা যান্ত্রিকীকরণ করছি। এখন হাত দিয়ে চারা রোপন করা লাগবে না আমরা মেশিন দিয়ে চারা রোপন করতে পারবো। জমি চাষ করতে পারবো, ফসল কাটতে পারবো, ফসলকে আলাদা করতে পারবো; সবই করা যাবে মেশিন দিয়ে। বিশ্বে গবেষণার মাধ্যমে এগুলো আস্তে আস্তে উঠে আসছে। আমরা সেগুলো ব্যবহার করতে পারি।

 

দেশে ১শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আহ্বান জানাবো এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে যে বিনিয়োগ হবে সেখানে যেন কল-কারখানা অন্যকিছুর সঙ্গে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পও তারা গড়ে তোলেন।

তিনি বলেন, আমাদের জমিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফসল এবং অনেক ধরনের ফলমূল ও তরি-তরকারিও আমরা উৎপাদন করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরেকটি বিষয় হচেছ আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ফসল উৎপাদন, ফলমূল উৎপাদন এবং সেই সাথে সাথে বৃক্ষ রোপন, মৎস উৎপাদন, হাঁস-মুরগী পালন-সবকিছুতেই আমরা বিশ্বে এখন একটা অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছি। এগুলো প্রক্রিয়জাত করে যেন বিদেশে আমরা রপ্তানী করতে পারি আমরা চাই সকলে সেভাবেই কাজ করবেন।

সরকার প্রধান এ সময় পরিবেশের দিকেও দৃষ্টি রাখার আহবান জানিয়ে বলেন, আমাদের পরিবেশের দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে আর জৈব সারের দিকেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি এবং আমাদের কৃষিবিদ এবং কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য তাদেরকে আরো প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রয়োজন রয়েছে।

এ সময় দুই ফসলী ও তিন ফসলী জমিগুলো রক্ষার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার একটি বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটা কথা সবসময় বলতেন, ‘বাংলাদেশের মাটি হচ্ছে সোনার মতন খাঁটি-আমাদের দেশের মাটি এত উর্বর যে একটা বীজ ফেললেই এখানে গাছ হয়, ফল হয়, কাজেই আমার দেশের মানুষ কেন না খেয়ে থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ করায় কৃষিতে আধুনিকায়ন ঘটছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের কৃষি সমাদৃত হচ্ছে।  

তিনি বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা থাকার কারণে কৃষিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন কৃষিতে। এই কারণে তিনি জানতেন, কৃষিই বদলে দিতে পারে মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে কৃষি উন্নয়নে অনুপ্রেরণা যোগাতে কৃষিক্ষেত্রে অবদানের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ প্রবর্তন করেন। তিনি উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ, উন্নতবীজ, সার, সেচ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ করে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যে স্ব-নির্ভরতা অর্জনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে কৃষির সার্বিক উন্নয়নে কৃষিবান্ধব নীতি ও সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সার, বীজসহ সকল কৃষি উপকরণের মূল্যহ্রাস, কৃষকদের সহজশর্তে ও স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা প্রদান, ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগসহ তাঁদের নগদ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এই টাকা থেকে কৃষক যতটুকু পারছে খরচ করছে, আবার ব্যাংক একাউন্ট থাকার কারণে সেখানে কিছু সঞ্চয়ও হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিএনপি বিদেশি সাহায্যের আশায় দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ দেশকে খাদ্য ঘাটতি থেকে খাদ্য স্বনির্ভর করে তুলেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে আমাদের খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ২ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা প্রায় ৩ কোটি ৮৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। আজ আমরা আবার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ ধান উৎপাদনে বিশ্বে ৪র্থ স্থান অর্জন করেছি।

তিনি বলেন, গত নয় বছরে সকল খাত মিলিয়ে মোট ৬০ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে। কৃষি প্রণোদনা এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম বাবদ গত ৯ বছরে ৭৮৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সারের ক্রয়মূল্য চার-দফা কমিয়ে কৃষকদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। গত ৯ বছরে বিএডিসি’র মাধ্যমে বিভিন্ন ফসলের সাড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন মানসম্পন্ন বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

এসময় তিনি কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চালু করা ‘কৃষি বাতায়ন’ ও ‘কৃষক বন্ধু ফোন সেবা’র কথা উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন কোনো কৃষক চাইলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে তার কৃষিকাজ করতে পারবেন।

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ক্ষমতায় থাকতে কৃষিখাত পিছিয়ে পড়েছিল। সার চাওয়ায় কৃষককে হত্যা করেছিল বিএনপি সরকার। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কৃষকের ঘরে ঘরে সার পৌঁছে দিয়েছে। খাদ্য ঘাটতির দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণে রূপান্তর করেছে। এ দেশে আর কোনো মানুষ না খেয়ে থাকবে না।

আওয়ামী লীগ কৃষিতে প্রযুক্তি ও গবেষণার প্রতি বেশি জোর দেয়ায় দেশ এর সুফল ভোগ করছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads