• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

বাংলাদেশ

বাংলাদেশের জাতীয় ফলে বিশ্বের ক্ষুধা জয়

  • তপু রায়হান
  • প্রকাশিত ১০ মার্চ ২০১৮

বর্তমান বিশ্বে প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ালেখা করে এমন ৬ কোটি ৬০ লাখ শিশু পেটে ক্ষুধা নিয়ে স্কুলে যায়। প্রতি নয়জনের একজন অপুষ্টির শিকার। জাতিসংঘ চাইছে, ২০৩০ সালের মধ্যে এই অবস্থার অবসান হোক। তাই সংস্থাটি বিশ্বের উন্নয়ন টেকসই করতে যে ১৭টি লক্ষ্য (এসডিজি) নির্ধারণ করেছে তার মধ্যে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী অন্যতম। এজন্য বন্যা, খরাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও টেকসই কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিতে জোর দিয়েছে সংস্থাটি। গবেষণায় বলা হচ্ছে, এসডিজির এই লক্ষ্য অর্জনে অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। গবেষকরা বলছেন, বিস্ময়কর এই ফলটি বিশ্বের কোটি মানুষকে অনাহারের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। তাদের দাবি, পাকা ফলের পাশাপাশি বীজ ও কাঁচা ফল হতে পারে ভুট্টা, গম ও মাংসের বিকল্প। কেননা খরা বা অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর কারণে গম বা ভুট্টার চাষ ব্যাহত হলেও কাঁঠালে এই আবহাওয়া পরিবর্তনের বিষয়টি খুব ভূমিকা রাখতে পারে না।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইল ইউকে বলছে, সম্প্রতি সে দেশের কয়েকজন তরুণ কাঁঠাল নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। তারা শূকরের মাংসের বিকল্প হিসেবে কাঁচা কাঁঠালের নানা ধরনের রান্না নিয়ে গবেষণা করেছেন। তৈরি করেছেন বার্গার, মিট বলের মতো খাবার।

‘প্রজেক্ট জ্যাকফ্রুট’ নামের এ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন ব্রিটিশ তরুণ জর্ডান গ্রেসন ও অ্যাবি রবার্টসন। দীর্ঘদিন ধরেই তারা নিজেদের প্রতিদিনের খাবারে মাংসের বিকল্প কিছু খুঁজছিলেন।

কাঁঠাল নিয়ে ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন দেখে বাংলাদেশের খবরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় জর্ডান গ্রেসনের সঙ্গে। তিনি জানান, কাঁচা কাঁঠালের রান্না ও এর পুষ্টিগুণ নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি বীজের উপকারিতা নিয়েও গবেষণা করছেন তারা। তাদের ইচ্ছা, গম ও ভুট্টার বিকল্প হিসেবে কাঁঠাল বীজের প্রচলন করা।

তিনি বলেন, ময়দার বিকল্প হিসেবে কাঁঠালের বীজের গুঁড়োর রুটি বা কেক তৈরির চেষ্টা করছি। প্রাথমিকভাবে কিছু পরিমাণ ময়দার সঙ্গে বীজের গুঁঁড়ো মিশিয়ে রুটি ও কেক তৈরিতে সফল হয়েছি। আশা করি, শিগগিরই প্রজেক্ট জ্যাকফ্রুটের অধীনে কাঁঠালের বীজের ময়দাও বাজারজাত করতে পারব।

কাঁঠাল সংগ্রহের বিষয়ে তিনি জানান, মৌসুমে তারা ভারত থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করেন। কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল জেনে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকেও কাঁঠাল সংগ্রহের আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, কাঁঠাল নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টির পর একদিন অ্যাবি রবার্টসনের চোখে পড়ে কাঁঠালবিষয়ক একটি নিবন্ধ। সেখান থেকে তিনি জানতে পারেন, একটি প্রমাণ সাইজের পাকা কাঁঠালে একটি পরিবারের একবেলার খাবার হয়ে যায়। এ ছাড়া এর বীজও তরকারি বা ভেজে খাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, তিনি জানতে পারেন বাংলাদেশ, ভারত বা ভিয়েতনামে কাঁচা কাঁঠাল সবজি হিসেবেও খাওয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে আরো অনুসন্ধান শুরু করেন ওই যুবক। তিনি আরো জানতে পারেন, একটি কাঁঠাল পাঁচ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। আর একটি ফলের ভেতরে থাকতে পারে শত শত কোষ-বীজ। আর এই বীজগুলোতে আছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রণ ও পটাশিয়াম।

এরপর থেকেই অ্যাবি রবার্টসন ও জর্ডান গ্রেসন ভারত থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে স্বল্প পরিসরে বিপণন শুরু করেন। পাশাপাশি কাঁঠালের পুষ্টিগুণ ও নানা ধরনের রান্না নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তারা।

প্রাথমিকভাবে তারা কাঁচা কাঁঠালই সবজি ও বিকল্প মাংস হিসেবে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেন। তখন প্রতিটি কাঁঠালের সঙ্গে অবশ্য রেসিপিও দিতে হয়েছে ভোক্তাদের। তবে বর্তমানে ‘প্রজেক্ট জ্যাকফ্রুট’ বেশ ভালোভাবেই চলছে বলে মেইল অনলাইনকে জানান অ্যাবি রবার্টসন।

তারা জানান, ইউরোপের মানুষ প্রাথমিক পর্যায়ে এই অদ্ভুত ফলটিকে গ্রহণ করতে চাননি। তবে তাদের কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে কিনে লাভবানই হয়েছেন। যারা মাংসের বিকল্প হিসেবে এখনো এটি চেখে দেখেননি তারা বিশ্বাসও করতে পারবেন না এর স্বাদ কেমন! এটি মাংসের চেয়ে ভালো, বলেন গ্রেসন।

ওই দুই ব্রিটিশ যুবক ইতোমধ্যে ভারতে কাঁঠালের নানা ধরনের খাবার উপাদনের জন্য আলাদা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। পাশাপাশি খুব শিগগিরই যুক্তরাজ্যের খুচরা বাজারে বিকল্প মাংস হিসেবে কাঁঠালের বিপণন শুরু করবেন তারা।

গবেষকদের বরাতে মেইল অনলাইন বলছে, প্রতি এক কেজি কাঁঠালে কমপক্ষে ৯৫ ক্যালরি শক্তি রয়েছে। ভারতের জৈব প্রযুক্তিবিদ ড. শ্যামলা রেড্ডি বলেন, এটা একটা ‘দৈব ফল’। এর থেকে একই সঙ্গে পুষ্টি ও ক্যালরি মিলতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয়- ভারত, বাংলাদেশ বা ভিয়েতনামে উৎপাদিত কাঁঠালের ৭৫ শতাংশই নষ্ট হয়।

শ্যামলা রেড্ডির সঙ্গে কণ্ঠ মেলান অ্যাবি রবার্টসন ও জর্ডান গ্রেসন। নিজেদের ওয়েবসাইটে তারা লিখেছেন, কাঁঠাল নিয়ে এশিয়ায় একটা দারুণ বৈপরিত্য দেখি। সেখানে হাজার হাজার মানুষ না খেয়ে থাকে অথচ সেখানকার দৈব ফল কাঁঠাল নষ্ট হচ্ছে।

অ্যাবি রবার্টসন বলেন, বিশ্বজুড়ে পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতে যে গবেষণা ও বিনিয়োগ হচ্ছে তা একটু বাড়াবাড়িই। সময় এসেছে এসবের বিকল্প কিছু করার। আর প্রাথমিকভাবে সেটা কাঁঠালই হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খাদ্যঝুঁকি মোকাবেলায়ও আগামীতে কাঁঠাল ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা মাংসের বিকল্প হিসেবে পুরো ইংল্যান্ডে কাঁঠালের প্রচলন শুরুর চেষ্টা করছি।

কাঁঠালে নানা রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতার পাশাপাশি ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষমতাও থাকতে পারে বলে আশা গবেষকদের। ফলটি মানবদেহে ম্যাগনেসিয়াম বাড়ায়। এছাড়া হূদরোগ প্রতিরোধসহ হজমশক্তি বাড়াতেও সহায়তা করে।

প্রতি এক কাপ কাঁঠালে ১৫৫ কিলোক্যালরি শক্তির পাশাপাশি আছে ২ দশমিক ৪ গ্রাম ফাইবার, একই পরিমাণ প্রোটিন, ৩৯ দশমিক ৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেড ও দশমিক ৫ গ্রাম ফ্যাট।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads