• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

বাংলাদেশ

অগ্নিপরীক্ষায় খালেদা জিয়া

সামনে একগুচ্ছ শর্ত

  • আফজাল বারী
  • প্রকাশিত ২৮ মার্চ ২০১৮

নির্বাচন এবং চলমান ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সামনে রেখে সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য পর্দার আড়ালে চলছে দরকষাকষি। তবে দেশের বিবদমান দুই প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মধ্যে তা হচ্ছে না। এ সমঝোতার চেষ্টা চলছে ভিন্ন কৌশলে। এর আয়োজন খোদ কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ঘিরে। এজেন্ডা ও আলোচনার বাহক তারই স্বজন। এরই মধ্যে কারাগারে তার বিশ্বস্ত স্বজনের মাধ্যমে সমঝোতার বার্তা দেওয়া হয়েছে। এ বার্তায় রয়েছে একগুচ্ছ শর্ত।

কারাগারে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যেসব স্বজন দেখা করেছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের একজন বাংলাদেশের খবরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসা, বর্তমান সরকারপ্রধানের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ, বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে মেনে নেওয়া, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন, প্রয়োজনে আগাম নির্বাচন, নির্বাচনের আগে প্যারোলে মুক্তি, চাইলে চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমন এবং নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশে প্রত্যাবর্তন, ন্যূনপক্ষে ১০০ আসন নিয়ে প্রধান বিরোধী দলে অবস্থান, তারেক রহমানকে দলের চেয়ারম্যান বা নীতিনির্ধারকের ভূমিকা থেকে বিরত রাখা।

ওই সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কারাগার থেকে এর কোনো জবাব মেলেনি। ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব এলে বিরাজমান অচলায়তনের অবসান ঘটবে। গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে।

সূত্র বলছে, এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য সৌদি আরবের প্রস্তাব এসেছে। সেদেশে এখনো অবস্থান করছেন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদি, ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তিউনিশিয়ার সাবেক প্র্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদিন বেন আলীসহ অনেকে। এ ছাড়া খালেদা জিয়া নিজেও সৌদিতে প্রথম পায়ের চিকিৎসা নিয়েছিলেন। সৌদি সরকারও রাজি বলে শর্তে বলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক আইনজীবীর ভাষায়, পরিবার ও দলের বৈরী পরিস্থিতিতে এবার আরো কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি ৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত দিতে হবে তাকে। দুই দফায় সাক্ষাৎকালে নিজের আইনজীবীদের কাছে খালেদা জিয়া জানতে চেয়েছেন, তিনি তো অপরাধ করেননি, তারপরও তিনি জেলে কেন? গত রোববারও তাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন জামিনযোগ্য মামলায় তার জামিন হচ্ছে না কেন? একপর্যায়ে আইনজীবী প্যানেল নিয়ে উষ্মাও প্রকাশ করেন তিনি।

বিষয়গুলোর অংশবিশেষ জানেন বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দীন আহমদও। গত ২৪ মার্চ সিলেটের একটি সভায় আকার-ইঙ্গিতে তিনিও অনুরূপ শর্তের আভাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে কোনো নির্বাচন নয়। সরকার খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহম্মেদও বলেছেন, সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পণ চায়। অর্থাৎ একতরফা নির্বাচনকে বিপদমুক্ত করতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে নির্বাচনের বাইরে রাখার জন্যই সরকার ষড়যন্ত্র করছে। তার ওপর চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চাইছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দেন আদালত। ওইদিন থেকে কারাগারে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

কারাগারে যাওয়ার পরদিনই খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার বড় বোন সেলিনা ইসলাম, ছোটভাই শামীম এস্কান্দার ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, ছেলে অভি এস্কান্দার। দ্বিতীয় দফায় তারা আবার সাক্ষাৎ করেন ১৩ মার্চ। এর মধ্যে দলের শীর্ষ নেতা ও আইনজীবীরা কয়েক দফায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। স্বজনরা আবার দেখা করবেন ২-৪ দিনের মধ্যে।

জিয়া পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় পারিবারিক বৈঠকও করেছেন। গত ২৩ মার্চ তারেক রহমানের শ্বশুরবাড়ি ধানমন্ডিতে বৈঠক করেছেন খালেদা জিয়ার স্বজনরা। ওই বৈঠকে ছিলেন খালেদা জিয়ার এক আইনজীবী। এর আগে খালেদার স্বজনরা আলোচনা করেন বিশ্বস্ত আইনজীবী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের সঙ্গে। এ ছাড়া তারা পরামর্শ নিচ্ছেন বিএনপি ও জিয়া পরিবারের শুভাকাঙ্ক্ষী বিজ্ঞজনদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads