• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিচ্ছে আন্দোলনকারীরা

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ

কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১১ এপ্রিল ২০১৮

সরকারি চাকরিব্যবস্থায় সংরক্ষিত কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের উত্তাপ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে এই আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন বুধবার সকাল থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মিছিল করছেন তারা। কোটা সংস্কার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত দাবিতে অনড় থাকবেন বলে বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাস্তায় বসে স্লোগান দিতে শুরু করে। এতে কুষ্টিয়া–ঝিনাইদহ মহাসড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কোনো ভাবেই রাজপথ ছাড়ছে না।  বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রক্টর মাহবুবুর রহমান শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢোকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা শুনছে না। 

ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। সকাল সাতটা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। সেখানে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ৫০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছে।

একই দাবিতে ঢাকা–আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে ওই সড়কের দুই দিকেই শত শত গাড়ি আটকা পড়েছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা–আরিচা মহাসড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের প্রান্তিক গেট থেকে এনএইচ গেট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। অবরোধ শুরুর প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশ দেখা গেলেও এখন আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে দেখা যাচ্ছে না।

আন্দোলনকারীদের অবরোধের মুখে পড়ে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন। চলমান দাবিতে ষোলোশহর এলাকায় ট্রেন আটকে স্লোগান দিচ্ছে তারা। সকাল থেকে শাটল ট্রেনটি মাত্র তিনবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করেছে। ষোলোশহর স্টেশনমাস্টার এস এম শাহাবুদ্দিন বলেন, আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের মুখে ট্রেন চলাচল আপাতত বন্ধ। কখন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে, এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। 

ঢাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও দাবির সমর্থনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছেন। বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা। বেলা ১১টার দিকে কালবৈশাখী শুরু হলে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের পার্শ্ববর্তী কৃষি অনুষদ করিডরে অবস্থান করছেন। সেখানে হামলার প্রতিবাদে এবং কোটা সংস্কারের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বুধবারের আন্দোলনে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশ নিয়েছেন ছাত্রীরাও। এর আগে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে মেয়েদের অংশগ্রহণ তেমন লক্ষণীয় ছিল না।  সহস্রাধিক শিক্ষার্থী সকাল থেকেই প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হয়েছেন। অনেকেই বিভিন্ন দাবির প্ল্যাকার্ড বহন করছেন।

কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবি ও কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে ও ছাত্রদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের প্রতিবাদে খুলনায় শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে। বুধবার দুপুর থেকে নগরের শিববাড়ি মোড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। এর আগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের হাদি চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১১টার দিকে কয়েক হাজার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাতে প্লাকার্ড নিয়ে নগরের গল্লামারী হয়ে ময়লাপোতা মোড়ে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। তাদের হাতে জাতীয় পতাকা, ঢোল, গিটারসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ছিল। এ সময় পুরো খুলনা শহরের যান চলাচল কার্যত অচল হয়ে যায়। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা নগরের শিববাড়ী মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যোগ দিয়েছেন। এসব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারি চাকরিপ্রত্যাশী বেকার তরুণ-তরুণীরা যোগ দেন। এদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুয়েটের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস বর্জন করেছেন।
নগরের সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমতাজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের জন্য বলা হয়েছে। পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

ক্লাস বর্জন করে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মহাসড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে সকাল ১০টায় সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে সিনেট ভবনের সামনে আসে। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর সাড়ে ১০টায় প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে যান। 

কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। মহাসড়ক অবরোধের কারণে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করে। কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা সড়কের ওপর গাছ এবং ইট রেখে অবরোধ সৃষ্টি করে। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে মহাসড়কের দুই প্রান্তে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। 

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এবং অবরোধে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যে কারণে ওই সড়ক দিয়ে সকাল ১০টা থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল ১০টায় শত শত শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। এরপর সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের সামনে দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কে বসে পড়েন। এরপর শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের এবং সংসদে দেওয়া কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যেও প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। মহাসড়কের ওপর শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে ওই মহাসড়কে সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads