• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ

বেশি উপার্জন এর আশায় সরকারি চাকরি ছাড়ছেন চিকিৎসকরা

বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১২ এপ্রিল ২০১৮

বেশি টাকা উপার্জনের আশায় সরকারি হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বেসরকারি হাসপাতালে তারা মোটা অঙ্কের বেতন পাচ্ছেন। ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখে টাকা উপার্জন করছেন। সরকারি বিধিনিষেধের আওতার অনেকটা বাইরে থাকায় বাড়তি চাপও বোধ করতে হচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞদের চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় সরকারি হাসপাতালগুলো চিকিৎসক সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে। এর ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। তারা বঞ্চিত হচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের সেবা থেকে। সদ্য পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসেবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরতরাও বঞ্চিত হচ্ছেন দক্ষ শিক্ষকের দিকনির্দেশনা থেকে।

তবে সরকারি হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পেছনে একমাত্র কারণ টাকা উপার্জন নয় বলে জানান কয়েকজন চিকিৎসক। তাদের মতে, সরকারি বেতন ছাড়াও চিকিৎসকদের বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানির জন্য বিশেষজ্ঞদের এমন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও বদলি করা হয়, যেখানে ওই চিকিৎসকের সেবা দেওয়ার মতো সংশ্লিষ্ট বিভাগও নেই। এ ছাড়া রাজনৈতিক মত ভিন্ন হওয়ায় বছরের পর বছর ধরে পদোন্নতি না পেয়েও অনেকে ক্ষোভ ও হতাশা থেকে চাকরি ছেড়ে দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসে ঢাকা থেকে ১১০ চিকিৎসককে দেশের বিভিন্ন এলাকার সরকারি হাসপাতালে বদলি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই এখনো নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি। তারা বদলি ঠেকাতে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত ঢাকায় থাকতে না পারলে তাদের মধ্যে কয়েকজন চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন।

চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ করলে জানা যায়, সরকারি হাসপাতালে একজন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চিকিৎসকরা যে বেতন-ভাতা পান, এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পান বেসরকারি হাসপাতালে। দেশের নামিদামি ও অভিজাত হাসপাতালগুলোতে বেতনের পরিমাণ আরো বেশি। কোথাও কোথাও সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বেতন প্রায় দশগুণ বেশি।

এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালে চাকরি করে সহকারী থেকে সহযোগী অধ্যাপক বা অধ্যাপক হতে অনেক বছর সময় লাগে। রাজনৈতিক তদবিরের কারণে তা-ও যথাসময়ে হওয়া যায় না। পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আনুগত্যকে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়। বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করলে সহজেই অধ্যাপক হওয়া যায়। তখন অনেক রোগীর কাছেও ওই চিকিৎসকের চাহিদা বাড়ে। আবার অধ্যাপক হওয়ায় সামাজিক মর্যাদাও বাড়ে বলে মনে করেন অনেকে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে চাকরি ছাড়েন পাঁচ চিকিৎসক। ২০১৬ সালে ৩ জন, ২০১৫ সালে ১০ জন ও ২০১০ সালে চাকরি ছাড়েন ২৭ চিকিৎসক। ২০১১ সালে এ সংখ্যা বেশি ছিল। ওই বছর চাকরি ছেড়ে দেন ৪৪ জন। ২০০৬ সালে ২২ জন, ২০০৭ সালে ২৮ জন, ২০০৮ সালে ৩১ জন ও ২০০৯ সালে ৩৩ জন চাকরি ছাড়েন। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গিয়ে অনেকে আর দেশে ফিরছেন না। তারা সেসব দেশের হাসপাতালে চাকরি করছেন। তাদের দেশে ফেরার লক্ষণ নেই।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সরকার আমলে ২০০৯ ও ২০১৬ সালে দুই দফায় চিকিৎসকদের বেতন বাড়ে। এতেও একজন অধ্যাপকের বেতন এক লাখ টাকার বেশি নয়। বিপরীতে ঢাকার অ্যাপোলো, শমরিতা, স্কয়ার ও ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপকের বেতন এক লাখ টাকার বেশি। সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের বেতন ১ লাখ ২০ হাজার থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। হাসপাতাল ভেদে ও চিকিৎসকের ব্যক্তিগত খ্যাতি বিবেচনায় বেতনে কম-বেশি আছে।

তথ্য মতে, গত কয়েক বছরের মধ্যে সরকারি হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দেওয়া আলোচিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে আছেন ঢাকার হূদরোগ প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের নিউরো সার্জন ডা. খন্দকার আবু তালহা। ঢাকার বাইরে বদলি করায় তিনি চাকরি ছাড়েন। পছন্দের এলাকায় পদায়ন না হওয়ায় চাকরি ছাড়েন চক্ষু সার্জন ডা. এস এ ওয়াহেদ, ল্যাপারোস্কপি সার্জন ডা. শিব শংকর সাহা, ডা. ফারুকুর রশিদ, ডা. সৈয়দ জাবেদ, হূদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এসকে মল্লিক, অর্থোপেডিকস বিশেষজ্ঞ ডা. হুমায়ুন কবির, মেডিসিন ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. দিদারুল আলম, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন আহমেদ, ডা. কামরুন নেসা লুনা, ডা. রেশমা ফিরোজ ও অধ্যাপক ডা. মাহতাব উদ্দিন। তারা ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরের নামী হাসপাতালে এখন চাকরিরত। ব্যক্তিগত চেম্বারেও রোগী দেখছেন তারা।

রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হয়ে চাকরি ছেড়ে দেওয়া আলোচিত চিকিৎসকদের মধ্যে আছেন হূদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. লোকমান হোসেন। নবম বিসিএসের স্বাস্থ্য ক্যাডারের এই কর্মকর্তা চারদলীয় জোট সরকারের আমলে অদক্ষদের রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি হওয়ার প্রতিবাদে সরকারি হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads