• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ

সংস্কার ও নির্মাণ হচ্ছে ৫৫০ আশ্রয় কেন্দ্র

·                     নাম হবে মুজিব কিল্লা   ·                     প্রাধান্য পাবে বন্যাপ্রবণ এলাকা

  • প্রকাশিত ১৬ এপ্রিল ২০১৮

ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে গুরুত্ব দিয়ে আসছে সরকার। ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী এই ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয় উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা। আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে সরকারের উদ্যোগে সহায়তার আগ্রহ জানিয়েছে বিশ্বব্যাংকের মতো বড় দাতা সংস্থা।

মধ্যপ্রাচ্যের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দাতার আর্থিক সহায়তায় ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সহায়তা নিয়েও উপকূলে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এ সময় অবহেলিত থেকে গেছে বন্যাপ্রবণ এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ। পুরনো আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর দশাও প্রায় জরাজীর্ণ। এ অবস্থায় দেশের উপকূলের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ৫৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ ও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ ও মেরামতের লক্ষ্যে সম্প্রতি ‘মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটির বিষয়ে অ্যাপ্রাইজাল সভার আয়োজন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে ৩৭৮টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। আর সংস্কার করা হবে আরো ১৭২ আশ্রয় কেন্দ্র। নতুন ও পুরনো এসব আশ্রয় কেন্দ্রের নাম হবে মুজিব কিল্লা। দুর্যোগে মানুষের আশ্রয়ের বিষয়টি বিবেচনায় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও প্রস্তাবিত মুজিব কিল্লায় গবাদিপশুর আশ্রয়ের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।

সাত বিভাগে বন্যা ও দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পের আওতায় কাজ হবে ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ; চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা; বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি; খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর ও নড়াইল; রাজশাহী বিভাগের বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও রাজশাহী; রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট; সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রোকোনা, জামালপুর ও শেরপুর জেলায়।

এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. শাহ কামাল বলেন, দেশের বিদ্যমান আশ্রয় কেন্দ্র মানুষ ও গবাদিপশুর জন্য যথেষ্ট নয়। আবার সাধারণ আশ্রয় কেন্দ্রে গবাদিপশুর জন্য তেমন জায়গা থাকে না। ফলে গৃহপালিত পশু-পাখির ক্ষতির কারণে মানুষের আর্থিক অবস্থাও শোচনীয় হয়ে পড়ে। নতুন আশ্রয় কেন্দ্রে এসব ব্যবস্থা থাকবে। বন্যার সময় মানুষ সাধারণত কোনো বাঁধের ওপর আশ্রয় নেয়। এতে বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রস্তাবিত কিল্লায় মানুষ তাদের গবাদিপশুসহ আশ্রয় নিতে পারবে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ১৯৭০ সালে ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় তিন লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। কয়েক লাখ গবাদিপশুসহ বিভিন্ন প্রাণী মারা যায়। এ জন্য স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় নির্মিত এসব আশ্রয় কেন্দ্রের নাম রাখা হয় মুজিব কিল্লা।

সমতল থেকে উঁচু গড়নের এসব আশ্রয় কেন্দ্রের বেশিরভাগ ছিল মাটির তৈরি। তাই এগুলোকে মাটির কিল্লাও বলা হতো। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নির্মিত এসব মুজিব কিল্লা ক্ষতিগ্রস্ত ও বেদখল হয়ে পড়ে। এজন্য সরকার বিদ্যমান কিল্লা সংস্কার ও নতুন কিল্লা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত কিল্লাগুলো অনেক উঁচু করে গড়ে তোলা হবে। একই সঙ্গে আকারেও অনেক বড় হবে এসব কিল্লা। এর ফলে বন্যার সময় মানুষকে বেড়িবাঁধ বা অন্যান্য স্থানে আশ্রয়ের জন্য ছুটতে হবে না। স্বাভাবিক মৌসুমে এসব কেন্দ্র সাপ্তাহিক বা দৈনন্দিন বাজার হিসেবেও ব্যবহার হবে। কিল্লার স্থায়ী পাকা ভবন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

প্রকল্পের আওতায় তিন ‘এ’ ক্যাটাগরির ১৮১ আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে নতুন নির্মাণ করা হবে ১২৬টি। এ ছাড়া সংস্কার করা হবে ৫৫ কেন্দ্রের। ‘এ’ ক্যাটাগরির আশ্রয় কেন্দ্রে মাঝারি আকারের প্রাণিসম্পদ শেড রাখা হবে। ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত ১৭৫টির মধ্যে নতুন নির্মাণ ১১৩টি, সংস্কার ৬২টি। এ ধরনের প্রতিটি কিল্লায় একটি বড় প্রাণিসম্পদ শেড রাখা হবে। ‘সি’ ক্যাটাগরির ১৯৮টির মধ্যে নতুন নির্মাণ হবে ১৩৯টি আশ্রয় কেন্দ্র। আর সংস্কার করা হবে মোট ৫৫টি। এ ধরনের প্রতিটি কেন্দ্রে একটি বড় প্রাণিসম্পদ শেড ও তিনতলা আশ্রয় ভবন থাকবে।

এর বাইরে প্রকল্পটির আওতায় ২৭৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক, সোলার প্যানেল ও নলকূপও স্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে চায় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। এর আওতায় চলতি বছর ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী অর্থবছরে ব্যয় হবে ৫৮৬ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬০৬ কোটি ও সর্বশেষ অর্থবছরে ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads