• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

বাংলাদেশ

অপরিকল্পিত বাস রুটে যানজট বাড়ছে ঢাকায়

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ১৯ এপ্রিল ২০১৮

অতিরিক্ত, অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রাজধানীর বাস রুটগুলো ঠিক করা হচ্ছে। এতে তীব্র যানজটের পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপদে যাতায়াতও হয়ে উঠছে অসম্ভব। ঢাকার যানজট নিরসন ও গণপরিবহনের শৃঙ্খলা নিশ্চিতে বাস রুট র্যাশনালাইজেশন (করণীয় নিরসন) ও কোম্পানির মাধ্যমে সমীক্ষা করে গাড়ি নিবন্ধনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

রাজধানীর প্রতি সড়কে ১০ থেকে ১৫ কোম্পানির শত শত বাস চলছে। এসব কোম্পানির কেউ বিআরটিএ থেকে রুট পারমিট নিয়েছে। আবার অনেকে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো রুট ঠিক করে বাস চালাচ্ছে। সড়কের সক্ষমতা বিবেচনায় রুট পারমিট দিয়ে থাকে পরিবহন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। এটাই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম। কিন্তু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) তৎপর না হওয়ায় অনুমোদনহীন অসংখ্য বাস রুট তৈরি হয়েছে। এতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায়। এর ফলে ব্যর্থ হচ্ছে যানজট নিরসনে সরকারের সব প্রকল্পই।

বিআরটিএ’র হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ঢাকায় বাসের রুট পারমিট ছিল ২৪৬টি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এর সংখ্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫৯টিতে। বর্তমানে ঢাকায় পাঁচ হাজার ১৪৩টি বাস ও দুই হাজার ৮৩৩টি মিনিবাস চলাচল করছে।

২০১৬ সালে রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে রুট র্যাশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনার উদ্যোগ নেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মেয়র হ্যাভিটেড কনসালট্যান্ট লিমিটেডের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীতে চলাচলকারী বাসের ওপর জরিপ করান। প্রতিষ্ঠানটি বিআরটিএ’র তথ্য এবং মাঠপর্যায়ের জরিপ অনুযায়ী ২০১৬ সাল পর্যন্ত ঢাকার ভেতরে চলাচলকারী অনুমোদিত ২৪৬টির পাশাপাশি আরো শতাধিক রুটের সন্ধান পায়।

অনুমোদিত রুটের মধ্যে কোনাবাড়ী, গাজীপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর ও চেরাগ আলী থেকে ঢাকার শিমরাইল, পোস্তগোলা, সদরঘাট, ঝিলমিল, মিরপুর, গাবতলী ও আজিমপুর রাস্তার ৪৬টি রুটে এক হাজার ১৩২টি বাস ও ৮৪৯টি মিনিবাস চলাচল করে।

আবদুল্লাপুর, টঙ্গী ব্রিজ, কুড়িল, কালিয়াকৈর, চন্দ্রা, বাইপাইল ও আশুলিয়া থেকে সদরঘাট, ঝিলমিল ও শিমরাইল রাস্তার ২২টি রুটে ৪৪৪টি বাস ও ৫২৪টি মিনিবাস চলাচল করে।

চন্দ্রা, সাভার, ইপিজেড, জিরানি বাজার, নবীনগর, হেমায়েতপুর, ধামরাই, মানিকগঞ্জ ও কালামপুর থেকে শিমরাইল, স্টাফ কোয়ার্টার, ঝিলমিল, সদরঘাট, মিরপুর ও আবদুল্লাহপুরের রাস্তার ৫৩টি রুটে এক হাজার ২৯০টি বাস ও ৪৬৮টি মিনি বাস চলাচল করে।

মিরপুর, চিড়িয়াখানা, দুয়ারিপাড়া ও পল্লবী থেকে শিমরাইল, আজিমপুর, সদরঘাট, ঝিলমিল, তালতলা, পোস্তগোলা, নতুনবাজার, মতিঝিল, সাইনবোর্ড, ধূপখোলা, কমলাপুর, বেরাইদ, মেরাদিয়া ও স্টাফ কোয়ার্টার রাস্তার ৭১টি রুটে এক হাজার ২৪৩টি বাস ও ৫৮২টি মিনি বাস চলাচল করে।

আটি বাজার, বসিলা, মোহাম্মদপুর, নবাবগঞ্জ ও মাওয়া থেকে শিমরাইল, বনশ্রী, খিলগাঁও, পোস্তগোলা, উত্তরা, ফুলবাড়িয়া ও মিরপুর রাস্তার ২৮টি রুটে ৫৮৮টি বাস ও ৭০টি মিনিবাস চলাচল করে।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, আদমজী, ভুলতা, ঘোড়াশাইল, কালীগঞ্জ, মেঘনাঘাট ও মদনপুর থেকে মতিঝিল, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, পলাশী, চানখাঁরপুল ও আবদুল্লাহপুর রাস্তার ২৬টি রুটে ৪০৭টি বাস ও ৩৪০টি মিনিবাস চলাচল করে। এরপর গত এক বছরে এসব রাস্তায় নতুন করে রুট পারমিট দেওয়া হয়েছে আরো ১১৩টি।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এসএম সালেহউদ্দিন বলেন, একই রুটে একাধিক কোম্পানিকে রুট পারমিট দেওয়ায় যানজট তৈরি হচ্ছে। এখনই আইন করে এ প্রক্রিয়ায় রুট পারমিট দেওয়া বন্ধ করা উচিত। বাস রুট র্যাশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে সমীক্ষা করে গাড়ি নিবন্ধন দিতে হবে। এটা করা না গেলে আগামী দিনে এই শহর গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামসুল হক বলেন, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ঢাকায় গণপরিবহনের রুট তৈরি হয়েছে। অতিরিক্ত রুটের কারণে গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, কমছে না যানজট।

তিনি বলেন, কিছু অপেশাদার লোক পরিবহন খাতটি নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের কারণে কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়া রুট পারমিট এবং বাস রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে আগে এসব বন্ধ করতে হবে।

নগর গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত বাস রুটের কারণে রাজধানীতে যানজট হচ্ছে। সুষ্ঠু যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগরে বাস রুট সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে।

কোন পদ্ধতিতে রুট পারমিট দেওয়া হচ্ছে তা জানেন না বিআরটিএ’র সচিব শওকত আলী। বলেন, ঢাকায় চলাচল করা বাসের রুট পারমিট দেওয়া হয় ঢাকা আঞ্চলিক অফিস মিরপুর থেকে। তারাই বিষয়টি ভালো জানেন।

বিআরটিএ’র মিরপুর আঞ্চলিক অফিসের উপপরিচালক মাসুদ আলম বলেন, আমাদের কাছে কেউ রুট পারমিটের জন্য আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ডিসি ট্রাফিকদের কাছে এটার মতামতের জন্য পাঠানো হয়। তারা সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ করে সম্ভাব্যতা যাচাই করে ডিএমপি কমিশনারের কাছে পাঠান। সেখানে এডিশনাল কমিশনারদের নিয়ে একটি কমিটি আছে, ওখানে আলোচনা হয়। সেখানে যেগুলো গ্রহণযোগ্য হয় সেগুলোকে রুট পারমিট দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় বর্তমানে রুট পারমিট দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads