• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি : কাল্পনিক

বাংলাদেশ

সড়কে দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড হচ্ছে

রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ বাস মিনিবাস নৈরাজ্যে জড়িত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ এপ্রিল ২০১৮

সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। গত এক মাসে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে ‘সড়ক নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা’ নিয়ে আয়োজিত আলোচনায় এ অভিমত উঠে আসে। আলোচকরা বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় শৃঙ্খলা নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা সংস্থার নিয়ন্ত্রণ পরিবহন খাতে নেই। চাঁদাবাজি, অর্থ আত্মসাতে দিন দিন পরিবহন খাতে নৈরাজ্য আরো বাড়ছে। এ নিয়ে সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গত শুক্রবার তিনি বলেন, ‘আমি বড় অসহায়।’

চলতি মাসের ৩ তারিখে কারওয়ান বাজারে সার্ক ফোয়ারা সিগন্যালে বেপরোয়া গতির দুই যাত্রীবাহী বাসের চাপায় হাত ছিঁড়ে যায় সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হোসেনের। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণও যায় এ শিক্ষার্থীর, যা ছিল সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ঘটনা। গত শুক্রবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে মোটরসাইকেলসহ আধা কিলোমিটার টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় সরকারি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামকে। এতে তার মোটরসাইকেলে আগুন ধরে দগ্ধ হয়ে মারা যান এ কর্মকর্তা। গত শুক্রবার রাতে ধানমন্ডির সাতমসজিদ সড়কে পিষ্ট হন এক নারী। ঢাকা ও নাটোরে বাস-ট্রাকের বেপরোয়া গতিতে হাত-পা ছিন্ন আরো তিন যাত্রীর।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সড়ক নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচনায় আরো অংশ নেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সালেহ উদ্দীন আহমেদ, বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মাহবুব আলম তালুকদার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।

প্রবন্ধে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাজধানীতে ৮৭ শতাংশ বাস-মিনিবাস নৈরাজ্য-বিশৃৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত। প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কে কমপক্ষে ৬৪ প্রাণ ঝরছে। পঙ্গুত্বের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে দেড় শতাধিক মানুষ। সড়কে বাস-মিনিবাস চলাচলে বিদ্যমান নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ব্যর্থ। মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পরিসংখ্যান দেখে এ মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায় হচ্ছে না বলে বলা যায় হত্যা।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ সেলের তথ্য মতে, সারা দেশে জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ২০ এপ্রিল ২০১৮ পর্যন্ত ১ হাজার ৭৭৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৮৪১ ব্যক্তির প্রাণহানি, পাঁচ হাজার ৫ হাজার ৪৭৭ জন আহত হয়েছে। পঙ্গু হয়েছে ২৮৮ ব্যক্তি।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মানবাধিকারের অন্যতম শর্ত মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, আমাদের সড়কে এ অধিকার অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্যের চাকায় পৃষ্ট হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে আইনের প্রয়োগ থাকলেও আমাদের এখানে প্রকৃতপক্ষে আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। সড়ক পরিবহন সেক্টরে নতুন যে আইন করা হচ্ছে, তাতে সবার মতামতের প্রতিফলন হয়নি। ফলে এ সেক্টরের সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা কঠিন। প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন বিল আকারে পাস করার আগে সবার মতামত নিয়ে আইনের সন্নিবেশনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ডিটিসিএর সাবেক নির্বাহী পরিচালক গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এসএম সালেহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত ৩১ লাখ যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনিবন্ধিত ভুয়া নামজারি ও অযান্ত্রিক যান মিলে প্রায় ৫০ লাখ যানবাহন সড়কে চলছে। এগুলোর ৭২ শতাংশের ফিটনেস নেই। অন্যদিকে সারা দেশে ৭৯ লাখ চালকের মধ্যে বিআরটিএ লাইসেন্স আছে মাত্র ১৬ লাখ চালকের হাতে। রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা ইতোমধ্যে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের নেতৃত্বে কাজ করে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সরকারের কাছে দিয়েছি। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে ঢাকা শহরের গণপরিবহনের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা দূর হবে।

বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, ঢাকার চালকদের অর্ধেকই কম বয়সী ও মাদকাসক্ত। এরা সড়ক দুর্ঘটনার নামে এক ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। তা ছাড়া তাদের অধিকাংশের বৈধ লাইসেন্স নেই। তাই মাদকের হাত থেকে পরিবহন সেক্টরকে রক্ষা করা না গেলে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি আরো বাড়তে থাকবে। অনতিবিলম্বে নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। এ জন্য জনগণকে সড়ক দুর্ঘটনার ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। কারণ জনগণ ধাক্কা না দিলে সরকার কাজ করে না।

আলোচনায় সংগঠনের পক্ষ থেকে ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads