• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

কারওয়ান বাজার বর্তমান জায়গা থেকে নবনির্মিত তিনটি পৃথম পাইকারি বাজারে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তবে উগ্যোগের কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বাংলাদেশ

কারওয়ান বাজার কবে মুক্ত হবে?

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ১০ মে ২০১৮

‘ছয় মাসের মধ্যে কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে কাঁচাবাজারসহ সব ধরনের পাইকারি মার্কেট সরিয়ে নেওয়া হবে।’ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আনিসুল হকের এমন ঘোষণা ছিল ২০১৬ সালে। তারপর দুই বছর পার হয়ে গেছে। মাঝে মারা গেছেন মেয়র আনিসুল হক। যেন তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সেই ঘোষণাও চাপা পড়ে গেছে। কী কারণে ৬ মাসের কাজ শেষ করা গেল না ২৫ মাসেও- এ প্রশ্নের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে দুই সিটি করপোরেশনের নানা দুর্বলতা ও অযোগ্যতার নমুনা। 

দুই বছর আগের ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গে এক বৈঠকে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা সেপ্টেম্বরের মধ্যে কারওয়ান বাজার থেকে তাদের ব্যবসা সিটি করপোরেশন নির্ধারিত তিনটি মার্কেটে সরানোর ওয়াদা করেন| এ সময় কারওয়ান বাজারের বিকল্প তিনটি মার্কেট ব্যবহার উপযোগী করে দেওয়ার দাবিও জানান ব্যবসায়ীরা। বৈঠকে মেয়র আনিসুল হক ব্যবসায়ীদের সে দাবি মেনে ছয় মাসের মধ্যে কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে কাঁচাবাজারসহ সব ধরনের পাইকারি মার্কেট সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন। তার ওই ঘোষণার দুই বছর পার হলেও ব্যবহার উপযোগী হয়নি মহাখালী, আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ীর মার্কেট তিনটি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মার্কেট তিনটির মূল ভবনের শতভাগ কাজ ২০১৬ সালের আগেই শেষ হলেও এখনো সেগুলো মোটেই ব্যবহার উপযোগী নয়। তখন মার্কেট তিনটিতে সড়ক যোগাযোগ না থাকা, নকশাবহির্ভূতভাবে বেজমেন্টে মার্কেট করা, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার অভিযোগ ছিল।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীতে চারটি আধুনিক পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ৬০০ কোটি টাকা অর্থায়নে যাত্রাবাড়ী, লালবাগ মোড়, মহাখালী ও আমিনবাজারে মার্কেট চারটি করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে যাত্রাবাড়ী, মহাখালী ও আমিনবাজারে মার্কেট করা গেলেও নানা জটিলতা ও আর্থিক সঙ্কটে লালবাগেরটি হয়নি। এদিকে নির্মিত তিনটি মার্কেট নিয়েও রয়েছে নানা অনিয়ম ও অভিযোগ। যাত্রাবাড়ীর আধুনিক পাইকারি বাজারের মালিকানা ও দোকান বরাদ্দ নিয়ে জটিলতা রয়েছে দুই সিটির মধ্যে। বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে উত্তরের মার্কেট দুটি নিয়ে। অভিযোগ রয়েছে, মহাখালী ও আমিনবাজারে মার্কেট করা হয়েছে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য দিয়ে ডোবা ভরাট করে নিয়ম ও নির্মাণকৌশল না মেনেই। ফলে দুই বছরের মধ্যেই ভবনগুলোয় দেখা দিয়েছে ফাটল, খসে পড়ছে পলেস্তারা। এদিকে শুরু হয়নি মার্কেট দুটোর সংযোগ সড়কের কাজও। রাখা হয়নি মালবাহী ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহনের পার্কিংয়ের জায়গা। আমিনবাজারের মার্কেটে নকশা অনুযায়ী বেজমেন্ট উন্মুক্ত থাকার কথা থাকলেও সেখানে দোকান করে শাটার লাগিয়েছে ডিএনসিসি। সব মিলিয়ে ব্যবসার জন্য কোনোভাবেই উপযোগী নয় মার্কেট দুটো।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, মার্কেট দুটো ব্যবহার উপযোগী করতে নতুন করে কাজ করা প্রয়োজন। এজন্য প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। পর্যাপ্ত বরাদ্দ পেলেই নতুন করে কাজ শুরু হবে। কারওয়ান বাজার থেকে ব্যবসা স্থানান্তরের বিষয়ে কথা হয় দোকান মালিক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. লোকমান হোসেনের সঙ্গে। বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, ব্যবসা সরাতে সিটি করপোরেশন অনেক দিন ধরেই চাপ দিচ্ছে। কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযানও চালিয়েছে| দোকান মালিক সমিতি বহুবার সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে| কিন্তু আসল কথা কেউ জানে না। সাংবাদিকরাও লিখে যাচ্ছেন- কারওয়ান বাজার থেকে সরছেন না ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কেন আমরা সরছি না, সে খবর কেউ লিখছেন না। কারওয়ান বাজারের চেয়ে আধুনিক মার্কেটে সুযোগ দিলে কেন যাব না? কিন্তু আমাদের জন্য যে তিনটা মার্কেট করা হয়েছে, সেগুলোতে কি ব্যবসা করার অবস্থা আছে? একবার ঘুরে দেখে আসুন। ক্ষুব্ধ লোকমান বলেন, মহাখালী আর আমিনবাজারে মার্কেট করা হয়েছে ডোবার মধ্যে। এখনই পিলারগুলোতে ফাটল ধরেছে। যেখানে ঢাকার অলিগলির খুপরি দোকান খালি থাকে না, সেখানে বড় বড় বিলবোর্ডে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েও কেন মার্কেট দুটোয় ব্যবসায়ী পাওয়া যাচ্ছে না। এতেই বোঝা যায়, ঘটনা কী। দোকান বরাদ্দ দিতে কয়েকবার দামও কমিয়েছে ডিএনসিসি। কিন্তু যেখানে কোনোদিনই লাভ হবে না, সেখানে আমরা কেন বিনিয়োগ করব?

কারওয়ান বাজার আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি এটিএম ফারুক বলেন, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা মার্কেট সরিয়ে নেওয়ার ওয়াদা করেছিলাম। সিটি করপোরেশনও ওয়াদা করেছিল মার্কেট তিনটি ব্যবহার উপযোগী করে দেবে। কিন্তু গত দুই বছরে কী কাজ হয়েছে? উল্টো আমিনবাজার ও মহাখালী মার্কেট দুটো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারের চেয়ে ভালো কোথাও জায়গা দিলে আমরা অবশ্যই যাব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, রাজধানীর ফুটপাথেও দোকান পেতে ব্যবসায়ীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে; দেনদরবার করে| সেখানে মহাখালী আর আমিনবাজারের মার্কেট দুটোয় দোকানের বরাদ্দমূল্য বার বার কমিয়েও সাড়া মিলছে না| আদৌ মার্কেট দুটি জনপ্রিয়তা পাবে কি না- তা নিয়ে সংশয় রয়েছে|

ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি বাজার সরিয়ে ফেলার ঘোষণা সত্য। কিন্তু ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী এখনো মার্কেট দুটো প্রস্তুত হয়নি। সংযোগ সড়কসহ বেশ কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এজন্য যথেষ্ট অর্থ প্রয়োজন। আমরা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। পাস হলে নতুন করে কাজ শুরু হবে। নির্মিত ভবনের ফাটল নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই, প্রকৌশল বিভাগই বলতে পারবে। তবে প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তাই মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads