• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা

সংরক্ষিত ছবি

বাংলাদেশ

কোটার প্রজ্ঞাপন নিয়ে উত্তেজনা

আজ থেকে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ১৪ মে ২০১৮

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় এখন সরকার ও আন্দোলনকারীরা মুখোমুখি অবস্থানে। সরকার বলছে, প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেও কোনো দিনক্ষণের কথা উল্লেখ করেননি। সরকারের আরো সন্দেহ, এই আন্দোলনের পেছনে বিএনপির মদদ থাকতে পারে। জবাবে আন্দোলনরত ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেছেন, সরকারদলীয় ছাত্রছাত্রীরাও এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিরোধে জড়িয়ে পড়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এটা চাই না। আমরা একটা সমঝোতার চেষ্টা করেছি। এখনো এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতিই নেই। সে ক্ষেত্রে আমরা কী করব? এভাবে বসে থাকব?

কয়েক দিন আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, কোটা নিয়ে কোনো অগ্রগতি ও দিকনির্দেশনা নেই। পাঁচ দিন আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব সাংবাদিকদের বলেন, কোটা বাতিল বা সংস্কার করতে একটি কমিটি গঠনের রূপরেখা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছে। দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। আর গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বিবিসিকে বলেন, বিষয়টি দেখার জন্য কমিটি করে দেওয়া হয়েছে এবং এতে সময় লাগবে। একই সঙ্গে তিনি প্রজ্ঞাপন জারির জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যে আল্টিমেটাম দিয়েছেন তাকে শিষ্টাচারবহির্ভূত আখ্যা দেন। আর গত শনিবার কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি এক সভায় বলেন, কোটা সংস্কারের দাবির কারণে মুক্তিযোদ্ধা কোটা কিছুটা কমতে পারে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনরা সম্মানজনক পদে যাতে চাকরি পান, সে বিষয়টি নিয়ে ভাবছে সরকার। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে দেশকে শ্রেষ্ঠ উপহার দিয়ে গেছেন। তাদের পাশাপাশি সন্তানদেরকেও সরকার মূল্যায়ন করতে চায়।

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী দিলেও এ নিয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। বরং মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা একেক সময় একেক রকম মন্তব্য করায় আন্দোলনকারীরা চটে গিয়ে আজ সোমবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফের ধর্মঘট শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন। মূলত দুই পক্ষের সন্দেহ আর অবিশ্বাস থেকেই পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

প্রজ্ঞাপন জারি না করাটা সরকারের কোনো কৌশল কি না এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তাদের মতে, সরকারে যারা থাকেন তারা স্বাভাবিকভাবেই কৌশলী হন। সরকার ভাবছে একদিকে হয়তো মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা আত্মীয়স্বজন যারা আছেন তারা দাঁড়িয়ে যাবেন। এতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা তাদের মুখোমুখি হয়ে যাবেন। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, নির্বাচনের বছরে সরকার কোটা নিয়ে কৌশলী ভূমিকা নিতে চাইছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটা বাতিলে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ঘোষণা দেওয়ার পরও প্রজ্ঞাপন প্রকাশের দাবিতে ফের আন্দোলনের হুমকি সমীচীন নয়। এ বিষয়ে শিগগিরই সমাধান মিলবে জানিয়ে আন্দোলনকারীদের ক্যাম্পাসে ফিরে পড়াশোনায় মন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার সচিবালয়ে তিনি আরো বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিনি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে কোটার বিষয়টি ফয়সালা করে দিয়েছেন- কোটা থাকবে না। এরপর এখানে কখন গেজেট হলো কি হলো না, এখানে একটু চিন্তাভাবনাও আছে? ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, অনুন্নত জেলা, মুক্তিযোদ্ধা, নারী আছে। এখানে সুসমন্বিত কিছু করার চিন্তাভাবনা হচ্ছে এবং এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী অনেক দিন বিদেশে ছিলেন। তবে এ প্রক্রিয়াটা থেমে নেই। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আন্দোলনকারীদের আস্থা রাখার পরামর্শ দেন কাদের। তবে এখন এখানে যদি কেউ রাজনীতি করতে চান তাহলে ভিন্ন কথা।

আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক : কোটা ব্যবস্থা বাতিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার প্রজ্ঞাপন দাবিতে গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে মিছিল হয়। রোববার বিকালের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে আজ সোমবার থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দেন তারা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল রোববার সকালে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ৩২ দিন পার হলেও প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। আমরা আর অপেক্ষা করতে চাই না। আজ (গতকাল) বিকাল ৫টার মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে কাল থেকে সারা দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট চলবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করা হবে। নূর বলেন, সরকার যখন ডেকেছে, আমরা সাড়া দিয়েছি। ৭ মের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির কথা ছিল, কিন্তু তা না হওয়ায় ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়েছেন। বাংলার ছাত্রসমাজ তাদের অধিকার আদায়ে আর ছাড় দেবে না। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না করা হয়, তাহলে কঠোর আন্দোলনে যাব। ছাত্রদের সঙ্গে কেন এমন প্রহসন করা হচ্ছে? বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মুহম্মদ রাশেদ খানও বক্তব্য দেন। এর আগে বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হয়ে মধুর ক্যান্টিন, লেকচার থিয়েটার, সূর্য সেন হল, মুহসীন হল, নীলক্ষেত মোড়, ভিসি চত্বর, ফুলার রোড, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০, নারী ১০, জেলা ১০, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫ ও প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি তুলেছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের কথা বলার পর তারা এখন সেই প্রজ্ঞাপন প্রকাশের দাবিতে আন্দোলন করছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads