• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
এমন মৃত্যু দেশের বহু সাফল্য ম্লান করছে

বাংলাদেশে ৩৮ বছরে কমপক্ষে ১৩৮ জন পদপিষ্ট হয়ে মারা গেছে

সংরক্ষিত ছবি

বাংলাদেশ

এমন মৃত্যু দেশের বহু সাফল্য ম্লান করছে

পদদলনে ৩৮ বছরে নিহত ১৩৮

  • শরীফ খিয়াম
  • প্রকাশিত ১৭ মে ২০১৮

বাংলাদেশে ৩৮ বছরে কমপক্ষে ১৩৮ জন পদপিষ্ট হয়ে মারা গেছে। এর মধ্যে বিগত চার বছরেই নিহতের সংখ্যা ৬১, যাদের ৫১ জন ধনীদের ঘোষিত সাহায্য সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারায়। এদের সকলেই দরিদ্র নারী ও শিশু। সর্বশেষ সোমবার চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির মালিক মোহাম্মদ শাহজাহানের বাড়িতে পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার জন্য দারিদ্র্যকেই দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, এটা দেশে বিদ্যমান সামাজিক বৈষম্যের চরম প্রকাশ। বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে আলাপকালে তারা সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ এভাবে পদদলিত হয়ে এত মানুষের মৃত্যু দেশের বহু সাফল্য ম্লান করে দিচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন এলাকার, বিশেষত চট্টগ্রামের ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে রোজা-ঈদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে ঘোষণা দিয়ে খাদ্য, বস্ত্র আর অর্থ বিতরণের রেওয়াজ আছে। বিভিন্ন উপলক্ষে মেজবানে দাওয়াত দিয়ে অজস্র মানুষকে খাওয়ানোর রেওয়াজও জেলাটিতে পুরনো। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানিতে এমনই এক মেজবান খেতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ১০ জন প্রাণ হারান। এর আগে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে ঢাকা বিভাগের ময়মনসিংহে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই বছরের মার্চে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী পুণ্যস্নানের সময় পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই রমজানের ঈদের দুই দিন আগে মানিকগঞ্জের গার্লস স্কুল রোডে ব্যবসায়ী মাহবুব হাসান মোর্শেদ রুনুর বাড়িতে জাকাত প্রদানের সময় একইভাবে দুই নারীর মৃত্যু হয়। একই দিন বরিশালের কাঠপট্টি এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে জাকাত নেওয়ার সময় আরো দুই নারীর মৃত্যু হয়।

অর্থনীতিবিদ ড. এবি মীর্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে এখনো দেশের মোট জনসংখ্যার ২২-২৩ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। যে কারণে তারা যখন কোনো সাহায্য বিতরণের ঘোষণা শোনে, স্বভাবতই আগ্রহী হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে দাতাদের মনোভাব বদলাতে হবে। ঢাকঢোল পিটিয়ে সাহায্য প্রদানের সংস্কৃতি ধর্মও সমর্থন করে না। ‘ইসলাম পরিপন্থি’ এই কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সরকার চাইলে মসজিদের ইমামদের সাহায্য নিতে পারে। দেশের সাবেক এই অর্থ উপদেষ্টা আরো বলেন, ধর্মে বরং বলা হয়েছে, তুমি এক হাত দিয়ে দান করলে অন্য হাত যাতে জানতে না পারে।

সাতকানিয়ার একই স্থানে একই কারণে ২০০৫ সালেও পদদলনে নিহত হয়েছিলেন আট নারী। জাকাত নিতে গিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটিও চট্টগ্রামে ঘটে। ১৯৯০ সালের ২৬ এপ্রিল পাহাড়তলীর আবুল বিড়ি ফ্যাক্টরিতে জাকাত নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ৩৫ জন নিহত হন। ১৯৮৯ সালের ৫ মে চাঁদপুরে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মারা যায় ১৪ জন। ১৯৮৭ সালের ২৩ মে ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় সরকারিভাবে জাকাত দেওয়ার সময় জনগণ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্যে পড়ে চারজন মারা গিয়েছিল। ১৯৮৩ সালের ৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জাকাতের টাকা নিতে গিয়ে ভিড়ের চাপে পড়ে মারা যায় তিন শিশু। এ ছাড়া ১৯৮০ সালে ঢাকার জুরাইনে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এ জাতীয় ঘটনা দেশে বিদ্যমান সামাজিক বৈষম্যের চরম প্রকাশ। সম্পদের সুষম বণ্টন থেকে আমরা বহুদূরে আছি। তিনি মনে করেন, দান-সদকার নামে এভাবে প্রাণহানির ব্যাপারে রাষ্ট্রকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। তিনি আরো বলেন, ঘোষণা দিয়ে দান-সদকার সঙ্গে ধর্মের আদৌ কোনো সংশ্লেষ নেই। ধর্মের নামে এই অনাচার আর বাড়তে দেওয়া ঠিক হবে না।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সাবেক এই সভাপতি আরো বলেন, ব্যক্তিগত সাহায্য-দানের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে আনতে হবে। কারণ পদদলিত হয়ে এত মানুষের মৃত্যু দেশের বহু সাফল্য ম্লান করে দিচ্ছে। সরকার শক্ত না হলে এটা ঠেকানো যাবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads