• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
‘তোরা তো কেউ বাঁচবি না’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের একাংশ

সংরক্ষিত ছবি

বাংলাদেশ

‘তোরা তো কেউ বাঁচবি না’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ মে ২০১৮

regular_2213_news_1526516919

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর ও রাশেদ খানকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলের ১১৯ নম্বর রুমে ঢুুকে ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি বলেন, ‘এই আন্দোলন করছিস তোরা সরকারের বিরুদ্ধে। তোদের একটাকেও ছাড়া হবে না। প্রজ্ঞাপনটা জারি হলে তোদের কুত্তার মতো পিটানো হবে। কুকুরের মতো গুলি করে রাস্তায় মারা হবে। তোরা তো কেউ বাঁচবি না। বেশি বাড়াবাড়ি করিস না। শেষবারের মতো মা-বাবার দোয়া নিয়ে নিস। শুধু প্রজ্ঞাপনটা জারি হোক। দেখিস তোদের কী অবস্থা করি।’ এ সময় মহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী ও চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম লিমন তাদের ওপর হামলা করার জন্য বার বার তেড়ে আসেন বলে দাবি করেন আন্দোলনের দুই নেতা। ছাত্রলীগ নেতাদের পকেটে পিস্তলও দেখা গেছে। মোট ১৫-২০ জন ওই দলে ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে হুমকিদাতারা ফিরে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে নুরুল হক নূরু বলেন, “রাশেদকে নিয়ে আমার রুমে ছিলাম। এর মধ্যে লিমন ফোন দিয়ে থ্রেট দেয়, হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে। আমরা নাকি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। একপর্যায়ে ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি ফোন নিয়ে বলেন, ‘ছাত্রদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে মারছি। তোদের মতো পোলাপানকে খেয়ে দিতে দুই সেকেন্ডও লাগবে না। তোগো রে গুলি কইরা মারি নাই শুধু কিছু সিনিয়রের নিষেধ ছিল বলে। তা না হলে তোদের মতো কুলাঙ্গারদের রাখতাম না এই দেশে। তবে তোরা বাঁচবি না। কিছুদিন পর প্রজ্ঞাপনটা জারি হোক। দেখি তোদের কোন বাপ বাঁচায়।’ তিনি আরো বলেন, এর ১০ মিনিট পর তারা রুমে এসে বলে, ‘তোরা মা-বাবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে নে। তোরা বাঁচবি না। তোদের গুলি করে মারব।’ এ সময় তারা আমাকে মারতেও আসে। তারা আমার মোবাইলও নিয়ে যায়। আমরা এখন জীবননাশের শঙ্কায় আছি। হুমকিদাতা ছাত্রলীগের নেতাদের সন্ত্রাসী উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে আমাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাউকে গ্রেফতার করেনি। কেন করেনি সেটা আমরা জানি না।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি বলেন, এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। ও আমার পাশের রুমে থাকে। আমার এক ছোট ভাইয়ের আইডি হ্যাক করে বিভিন্ন গ্রুপকে দেয়। পরে তার সঙ্গে এই বিষয়ে বািবতণ্ডা হয়। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা এবং শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক। আমি তাকে বলেছি, আন্দোলন করতেছস ঠিক আছে। অন্য কোনো ঝামেলায় জড়াবি না। আর মহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী বলেন, তাকে কিছু করা হয়নি। সে ইস্যু বানাচ্ছে।

এসব ঘটনার পর গতকাল বুধবার সরকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা। আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তারা এ নিরাপত্তা চান। সমাবেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের দুই যুগ্ম আহ্বায়ককে হত্যার হুমকিদাতা ছাত্রলীগ নেতাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।

গতকাল বুধবার দুপুর ১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ মিছিলের পর তারা সাধারণ ডায়েরি করতে শাহবাগ থানায় গেলেও ওসি আবুল হাসান তাদের ডায়েরি নেননি। তবে ওসি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান।

সমাবেশে হাসান আল মামুন বলেন, সরকারের ইমেজ নষ্ট করার জন্য একটি স্বার্থান্ব্বেষী মহল এসব (হত্যার হুমকি) কাজ করেছে। হুমকিদাতাদের কোটাধারী আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, তারা চায় না কোটার যৌক্তিক সংস্কার হোক। এ ছাড়া তিনি সরকারের কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রজ্ঞাপন আকারে বাস্তবায়নের দাবি জানান।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, আমাকে কেউ অফিসিয়ালি অভিযোগ করেনি। কেউ অভিযোগ করলে দেখব।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলনে নামে সংগঠনটি। ৮ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও আন্দোলনে যোগ দেয়। আর ১২ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো কোটার দরকার নেই।’ সবশেষ গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম জানিয়েছেন, এ বিষয়ের সারাংশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিগগির এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তবে শিক্ষার্থীরা এ আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না। তারা গত সোমবার প্রজ্ঞাপনের দাবিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। সন্ধ্যায় তারা রাজপথের আন্দোলন স্থগিত করলেও বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads