• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
অসহায় ৬ কোটি মানুষ

বিভিন্ন সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কার্যক্রম

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ

অসহায় ৬ কোটি মানুষ

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ১৯ মে ২০১৮

সারা দেশে ৪৯৪ উপজেলার ১৬৯টিতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স পরিষেবা অনুপস্থিত। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ফায়ার স্টেশন, আধুনিক যন্ত্রপাতি আর জনবল সঙ্কটে চলছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কার্যক্রম।

অতি প্রয়োজনীয় এ পরিষেবা সম্প্রসারণে চার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নতুন ২৬২ ফায়ার স্টেশন স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে সারা দেশে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৮৭। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক মেজর শাকিল নেওয়াজ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নতুন প্রকল্প শেষ হলে অগ্নিনির্বাপণ পরিষেবার আওতায় আসবে পুরো দেশ।

নিজ কার্যালয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রশিক্ষিত বাহিনী অগ্নিকাণ্ড, লঞ্চডুবি, ভূমিকম্প, বন্যাসহ যেকোনো দুর্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রানা প্লাজা ধস, ভাষানটেক বস্তির অগ্নিকাণ্ডসহ বড় বড় ঘটনায় ঝুঁকি নিয়ে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। সমস্যা হচ্ছে প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। মঞ্জুরিকৃত জনবল ৯ হাজার হলেও বাস্তবে আছে ৮ হাজারের কাছাকাছি।’

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহে বিভাগীয় স্টেশনসহ ৬৪ জেলায় ৩২৫টি ফায়ার স্টেশন আছে। এসব স্টেশন তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। প্রথম শ্রেণীভুক্ত ৩৫, দ্বিতীয় শ্রেণির ২৭ এবং তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত  স্টেশনে লোকবলের সংখ্যা ১৫ থেকে ১৬।

জনসংখ্যার তুলনায় বিদ্যমান লোকবল অপ্রতুল দাবি করে বাহিনীর আইটি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মবিন বলেন, ‘দেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটি। আমরা মাত্র ৯ হাজার জনবল দিয়ে ৩২৫ উপজেলার ১০ থেকে ১১ কোটি মানুষকে জরুরি এ সেবা দিতে পারলেও লোকবল আর স্টেশনের অভাবে বাকি এলাকার বাসিন্দাদের সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না।’ 

সেবার আওতা সম্প্রসারণ ও দ্রুততর করতে দরকার আধুনিক যন্ত্রপাতি ও যানবাহন। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স যেসব যানবাহন, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করছে সেগুলো হচ্ছে স্নোরকেল, টিটিএল, ইমারজেন্সি টেন্ডার, পানিবাহী গাড়ি, পাম্প টানা গাড়ি, পোর্টেবল পাম্প, বিশেষ পানিবাহী গাড়ি, ফোম টেন্ডার, ব্রেকডাউন ভ্যান, লাইট ইউনিট, কেমিক্যাল টেন্ডার, ফায়ার ফ্লোট, রেসকিউ স্পিডবোট, কোল্ড কাট কোবরা, টু হুইলার ওয়াটার মিস্ট, ফর্ক লিফ‌ট, ক্রেন, ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ কমান্ড ভেহিক্যাল, অ্যাম্বুলেন্স ও স্পিডবোট অ্যাম্বুলেন্স। অত্যাধুনিক আরো যন্ত্রপাতি সংযোজনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

যেভাবে চলে কার্যক্রম : ফায়ার স্টেশনের প্রধান কাজ জরুরি প্রয়োজনে জনবল ও গাড়ি প্রস্তুত রাখা। বেশিরভাগ কাজই অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা এবং রোগী পরিবহন সম্পর্কিত। বাসাবাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানাসহ যেকোনো স্থানে অগ্নিনির্বাপণে বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত থাকেন। বাহিনীর অন্যতম পলিসি অগ্নিনির্বাপণের চেয়ে অগ্নি-প্রতিরোধ উত্তম। এ জন্য পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শিল্প-কারখানা ও স্থাপনায় ব্যবহূত দাহ্য পদার্থের মাত্রানুযায়ী অগ্নিঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাপণী ব্যবস্থা পরিমাপ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ ও প্রতিরোধ নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ ও মহড়ার ব্যবস্থা। অগ্নি-দুর্ঘটনাসহ যেকোনো দুর্ঘটনায় আটকে পড়াদের আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে অল্প সময়ে উদ্ধারে এবং উদ্ধার-পরবর্তী সেবা দিয়ে থাকে ফায়ার সার্ভিস। নৌ-দুর্ঘটনায় বা যেকোনোভাবে পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে রয়েছে ডুবুরি বাহিনী।

বছরে দেড় লাখ মানুষকে প্রশিক্ষণ : অগ্নিনির্বাপণ থেকে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় বাহিনীর সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। এ দাবি  ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আলী আহম্মেদ খানের। বাংলাদেশের খবরকে তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে প্রতিবছর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অন্তত দেড় লাখ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তৎপরতাও।

ফায়ার সার্ভিসের প্রধান আরো জানান, গত ৬ বছরে দেশে প্রায় ৮৮ হাজার অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ১৪০০ মানুষের, আহত হয়েছেন অন্তত ৫ হাজার। সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এসব অগ্নিকাণ্ডের অন্যতম কারণ সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতার অভাব। এসব দুর্যোগ মোকাবেলায় গিয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যরাও হতাহতের শিকার হয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads