• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে ভুল বাড়ছে

পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে ভুল বাড়ছে

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ

পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে ভুল বাড়ছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ জুন ২০১৮

কয়েক বছর ধরে যথাসময়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যেই ঘোষণা করা হচ্ছে ফলাফলও। যথাসময়ে সব করতে গিয়ে একই ভুল বার বার করছেন শিক্ষা বোর্ড ও পরীক্ষার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তারা।

তবে ভুল যারই হোক না কেন, এর খেসারত দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া প্রতি বছরই গুরুত্বপূর্ণ দুই পাবলিক পরীক্ষায় উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার আবেদনও বাড়ছে। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ফলও পরিবর্তন হচ্ছে। এতেই বোঝা যায়, উত্তরপত্র মূল্যায়নে ভুল বাড়ছে।

চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে। এতে শুধু ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডেই নতুন করে আরো ২৯৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ ছাড়া ফেল থেকে পাস করেছে ১৯২ জন। অন্য বোর্ডগুলোও আলাদাভাবে এই ফল প্রকাশ করেছে। সেখানেও এমন পরিস্থিতিই বিরাজ করছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে অসন্তুষ্ট হয়ে চলতি বছর ঢাকা বোর্ডে মোট ৬৩ হাজার ৪২৯ জন শিক্ষার্থী ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৪৬টি খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিল। এর মধ্যে প্রথমে ফেল করা ১৯২ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর গ্রেড পয়েন্ট বেড়েছে ১ হাজার ৯৯০ শিক্ষার্থীর। গত ৬ মে এসএসসির ফল প্রকাশের পর পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন গ্রহণ করা হয়।

এ ছাড়া মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণে ২৪৮ শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। এতে ফেল করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছে ১০১ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়ার তালিকায় উঠেছে ৩২ জন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, দাখিলের ফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য এ বছর ২১ হাজার ৭৫৯ পরীক্ষার্থী আবেদন করেছিল। এজন্য ৩৫ হাজার ৯০৪টি উত্তরপত্র পুনরায় নিরীক্ষণ করা হয়েছে। গত ৬ মে চলতি বছরের দাখিল পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছিল। এতে জিপিএ-৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩৭১।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, যে ভুলগুলো হচ্ছে ন্যূনতম দায়িত্বশীল লোক হলে তা হওয়ার কথা নয়। তবু উত্তরপত্র মূল্যায়নে ভুলগুলো হচ্ছে। এ ধরনের ভুল কাঙ্ক্ষিত নয়। যেহেতু বার বার একই ভুল হচ্ছে তাই আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা এবার আমরা নেব।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরশীল সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বেডু) ২০১৭ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার মূল্যায়িত উত্তরপত্র পর্যালোচনায় শিক্ষকদের গাফিলতি ধরা পড়ে। এর কারণও অনুসন্ধান করে বেডু বিশেষজ্ঞরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানায়। এতে বলা হয়, প্রশিক্ষিত পরীক্ষকদের বাদ দিয়ে অন্য শিক্ষকদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া, প্রধান পরীক্ষকের অবহেলা, পরীক্ষকদের দায়িত্বহীনতা, নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে ত্রুটিপূর্ণ উত্তরপত্র মূল্যায়ন হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, শিক্ষকদের নমুনা উত্তরপত্র দেওয়াসহ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে সঠিকভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়নে। এরপরও ত্রুটি আসা মানে শিক্ষকদের গাফিলতি আছে। এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বেডুর গবেষণা কর্মকর্তারা জানান, নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষকদের মূল্যায়নের পর প্রধান পরীক্ষকরা মূল্যায়নের সত্যতা যাচাই করেন। আগে প্রধান পরীক্ষকরা কত শতাংশ উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন তার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। গত এসএসসি পরীক্ষা থেকে প্রধান পরীক্ষকদের ১০ শতাংশ উত্তরপত্র মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়। এ কারণেই বিষয়টি ধরা পড়েছে।

গবেষকদের মতে, পরীক্ষক ও প্রধান পরীক্ষকরা হয়তো বুঝেই ভুল করেছেন। আবার অনেকে হয়তো পদ্ধতিটি না বুঝেই ভুল নম্বর দিয়েছেন। কেউ কেউ হয়তো খামখেয়ালি করে নম্বর দিয়েছেন। আসলে প্রকৃত নম্বর দেওয়া একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের অনেক শিক্ষকই দক্ষ নন। শিক্ষকরা উত্তরপত্র মূল্যায়নে মনোযোগী হলে এত ব্যবধান হতো না। অনেক শিক্ষা বোর্ড প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়নের ফলে বিষয়টি ধরা পড়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads