• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
‘রাজধানীকে গামলায় পরিণত করা হয়েছে’

সেচে সেচে জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাবে না পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা

সংরক্ষিত ছবি

বাংলাদেশ

জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেই

‘রাজধানীকে গামলায় পরিণত করা হয়েছে’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ জুন ২০১৮

ঢাকার চারপাশে শহর রক্ষা বাঁধের নামে রাজধানীকে গামলায় পরিণত করা হয়েছে। এখন গামলা থেকে পাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে পানি অপসারণ করা হচ্ছে। সেচে সেচে জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাবে না। এমনটাই মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সেবা সংস্থাগুলো পরিকল্পিত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সংস্থাগুলো তাদের ইচ্ছামতো প্রকল্প নিচ্ছে, কাজ করছে। কিন্তু সেগুলো জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো কাজে আসছে না। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত ‘রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি উদ্যোগ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সহসভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আকতার মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যার পর শহরকে বাঁধ দিয়ে ঢাকাকে গামলা তৈরি করে দেওয়া হলো। এখন রাস্তা থেকে ফ্লাইওভার পর্যন্ত পানি জমে। মাত্র ৩৫ মিলিমিটারের পানি হজম করতে পারে না এ শহর। প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে খাল-ড্রেন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। খালকে আগের চিত্রে ফিরিয়ে আনতে হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ওয়াসার এমডির ক্ষমতার খুঁটি কোথায়? নিশ্চয় সরকার। তাহলে কেন জলাবদ্ধতা কমছে না। দেশে বড় বড় বিল্ডিং হবে, ফ্লাইওভার হবে, কিন্তু যানজট কমবে না। জনগণ সুফল পাবে না। একে উন্নয়ন বলা যাবে না।’

বিস্তর অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমাদের রাস্তার লেভেল এক নয়, এ কারণে নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

ঢাকা ওয়াসা পরিচালক শহীদ উদ্দিন বলেন, ২০১১ সাল থেকে আমরা ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে এক হাতে নেওয়ার জন্য বলে আসছি। একাধিক সংস্থা কাজ করায় একটু সমস্যা হচ্ছে। আর বৃষ্টির পর পানি নিষ্কাশনের যে লাইন আছে, তাকে সেই লাইন দিয়ে তার গন্তব্যে পৌঁছতে যে সময় লাগে শুধু সেই সময়ই জলাবদ্ধতা থাকে।

গৃহায়ন ও গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান মুন্সি বলেন, ‘ওয়াসার দাসেরকান্দি স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কথা ১০ বছর ধরেই শুনে আসছি। কিন্তু বাস্তবায়ন নেই।

ডিএনসিসি সচিব দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দুই সিটিতে আরো ১০টি জোন বাড়ানো হয়েছে।

সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধে জলাবদ্ধতার বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা এবং ওয়াসার ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারা, ভূ-উপরিস্থ ড্রেন পরিষ্কার না থাকা, ড্রেনেজ চ্যানেল ডি-লিংক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সঠিক ব্যবস্থাপনা না করা, শক্ত নগর পরিসর ও রান-অফ ওয়াটার না থাকা, খাল ও পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়া।

এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে- জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানের পূর্ণ বাস্তবায়ন। লেক সংরক্ষণ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী বৃষ্টিপাত ধারণ করা। সব বক্স-কালভার্ট ভেঙে উন্মুুক্ত করে দেওয়া। সব খাল, স্টর্ম ড্রেন ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের ব্যবস্থা রাখা। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা করা ইত্যাদি। অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রুবেল স্বাগত বক্তব্য দেন। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক, বেসরকারি সংস্থা ডরপ’র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আমির খসরু প্রমুখ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads