• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
হাজার মানুষ একসঙ্গে ইফতার করেন হাইকোর্টের মাজারে

সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে লাল ও নীল রঙের প্লাস্টিকের বড় গামলা

সংরক্ষিত ছবি

বাংলাদেশ

‘ভালো লাগে, তাই মাজারের ইফতারে আসি’

হাজার মানুষ একসঙ্গে ইফতার করেন হাইকোর্টের মাজারে

  • কামাল মোশারেফ
  • প্রকাশিত ০৩ জুন ২০১৮

আসরের নামাজের পরই সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে লাল ও নীল রঙের প্লাস্টিকের বড় গামলা। প্রতিটি গামলায় সাজানো হচ্ছে বড় বস্তা থেকে আনা মুড়ি আর বিশাল দুটি ডেকচিতে রান্না করা ছোলা। শরবতভর্তি জগ ও পানির গ্লাস সাজিয়ে রাখছে ছোট ছোট ছেলেরা। পাশেই বড় বড় ডেকচিতে শরবত বানানোর কাজে ব্যস্ত কয়েকজন। আপেল, মালটা টুকরো করে কেটে রাখছেন কেউ কেউ। গামলায় সাজানো হচ্ছে ইফতারের অন্যান্য উপকরণও। সময় যতই ঘনিয়ে আসছিল, ততই বাড়ছিল আয়োজনের তৎপরতা। এ দৃশ্য ‘হাইকোর্টের মাজার’খ্যাত রাজধানীর হজরত শাহ খাজা শরফুদ্দিন চিশ্তী (রহ.) ওরফে বাবা ওলি বাংলা মাজার প্রাঙ্গণের।

প্রতিবছরই পবিত্র রমজানের প্রতিটি দিনই এই মাজারে এটি চিরচেনা দৃশ্য। এমনিতেই সারাবছর এই মাজারে ভিড় থাকলেও রমজান মাসে ইফতারকে কেন্দ্র করে এই ভিড় বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে রোজাদাররা মাজারে আসতে শুরু করেন। উদ্দেশ্য, একসঙ্গে ইফতার করা। ইফতারে ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে শামিল হয়ে মিলেমিশে পরম তৃপ্তির সঙ্গে ইফতার করেন ধর্মপ্রাণ হাজারো মুসলমান।

ইফতারের এ বিশাল আয়োজন নিয়ে কথা হয় মাজারের খাদেম শফিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিটি গামলায় চারজন করে ইফতার করে। বিরানি ও তেহারির আয়োজন থাকলে গামলার একপাশে দেওয়া হয়।

কথা হয় হাইকোর্ট মাজার ও মসজিদ প্রশাসন কমিটির পক্ষ থেকে ইফতারের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার থেকে ১২শ’ রোজাদার এখানে ইফতার করেন। তবে বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার রোজাদারের সংখ্যা আরো বেশি হয়। নারীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে মাজারের ইফতারে। ২ থেকে ৩শ’ নারীও ইফতারে অংশ নেন। প্রায় ২০-৩০ জন স্বেচ্ছাসেবক রোজাদারদের সেবায় নিয়োজিত থাকেন। থাকেন খাদেম ও আনসার সদস্যরাও।

মাহবুবুর রহমান বলেন, এখানে পর্যাপ্ত ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিদিন এখানে ৬০ কেজি মুড়ি, ৫০ কেজি ছোলা, ৪০ কেজি খেজুর, ৪০ কেজি চিনি, ৪০ কেজি আপেল, ৪০ কেজি মাল্টা দেওয়া হয়। এ ছাড়া জিলাপি, পেঁয়াজু ও বেগুনিও প্রায় ১ মণ করে পরিবেশন করা হয়। থাকে বড় সাইজের ৮টি রুহ আফজা। বেগুনি, আলুর চপ, পেঁয়াজু ও কলা দেওয়া হয় তিনশ’ পিস করে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি যেসব ফল এবং ইফতারসামগ্রী নিয়ে আসেন সেগুলোও দেওয়া হয়। ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে একসঙ্গে ইফতার করেন নানা শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ।

হাইকোর্ট মাজারের ইমাম আহমেদ রেজা ফারুকি জানান, মাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে রমজানে প্রথমদিন থেকেই রোজাদারদের জন্য এ ইফতারের আয়োজন থাকে। এ জন্য প্রতিদিন ব্যবস্থাপনা কমিটির আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে মাঝেমধ্যে বিত্তবান এবং ভক্তরাও বিভিন্ন অঙ্কের টাকা অনুদান দিয়ে থাকেন।

মগবাজার থেকে ইফতারে অংশ নিতে আসা সরকারি চাকরিজীবী ইয়াকুব আলী ইসলাম বলেন, ‘শুক্রবার অফিস বন্ধ থাকায় জুমার নামাজ পড়তে মাজার মসজিদে এসেছি। আসরও এখানে পড়ে ইফতার করেছি। অনেক ভালো এবং সুন্দর আয়োজন। একপাত্রে চারজন ইফতার করেছি। কেউ কাউকে চিনি না। অনেক ভালো লাগছে।’

মাজারে ইফতার করতে এসেছেন রাজধানীর শনির আখড়ার বাসিন্দা রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই অন্তত দু-একবার ইফতার করতে আসি এখানে। ইফতার সামনে রেখে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এটাতে অনেক বরকত আছে। এ ছাড়া মাজারে অনেক ধরনের মানুষ আসে, তাদের সঙ্গে ইফতার করলে ভালো লাগে। তাই মাজারের ইফতারে আসি।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads