• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
পরিবেশ রক্ষায় ঝুঁকি বাড়ছে

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস

সংরক্ষিত ছবি

বাংলাদেশ

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস

পরিবেশ রক্ষায় ঝুঁকি বাড়ছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ জুন ২০১৮

পরিবেশ দূষণ বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশে এ মাত্রা উদ্বেগজনক। পরিবেশ রক্ষার আন্তর্জাতিক নানা সূচকে কিছু অগ্রগতি হলেও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। দূষিত পরিবেশের ভয়ানক প্রভাব বেশি পড়ছে জনস্বাস্থ্যে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। ফলে পরিবেশ রক্ষায় ব্যয় বাড়ছে সরকারের। একই সঙ্গে বাড়ছে ঝুঁকিও। অসচেতনতা ও অনিয়মে দেশের পরিবেশ নানামুখী বিপর্যয়ের শিকার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে বন ও বন্যপ্রাণী। পাশাপাশি অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পকারখানার দূষণ পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। এসব কারণে আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলেও পড়ছে দেশ। যার প্রভাবে ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ।

পরিবেশবিদদের অভিযোগ, খাল, বিল, জলাশয় ও বন দখল যথাযথভাবে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। প্রকৃতির অন্যতম উপাদান বন ও বন্যপ্রাণী। বিভিন্ন অঞ্চলের বন ও বন্যপ্রাণী মিলে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের প্রতিবেশ ব্যবস্থা। বন উজাড়ের ফলে বন্যপ্রাণীও ধ্বংসের পথে। বায়ু, পানি ও মাটি- সব ক্ষেত্রেই দূষণ দেশের মানুষের কাছে নতুন কোনো বিষয় না হলেও পরিস্থিতি এখন সঙ্কটে রূপ নিয়েছে বলে তাদের অভিমত।

অন্যদিকে পরিবেশ দূষণের কারণে হূদরোগ, স্ট্রোক ও ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। শুধু বায়ুদূষণের কারণে কত ধরনের রোগ হচ্ছে, এর সুনির্দিষ্ট কোনো বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা দেশে কখনো হয়নি।

বায়ুদূষণজনিত রোগের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বায়ুদূষণের কারণে মানুষ সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কিছু করতে গিয়েও স্বাস্থ্যহানিকর বাস্তবতার শিকার হচ্ছে। দেশে ৭০ লাখ হাঁপানি রোগী রয়েছে। শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার উদযাপন হবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস।

অন্যান্য দেশের মতো নানা আয়োজনে দিবসটি আজ উদযাপন করা হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে হবে নানা অনুষ্ঠান। ইউএন এনভায়রনমেন্ট এ বছর দিবসটির স্লোগান নির্ধারণ করেছে ‘প্লাস্টিক পুনঃব্যবহার করি, না পারলে বর্জন করি’। আর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘আসুন প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করি’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

পরিবেশ অধিদফতরের এক প্রতিবেদন মতে, দেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে গত এক দশক ধরে। ফলে গড়ে উঠছে শিল্পকারখানা, বন উজাড় করে বাড়ানো হচ্ছে কৃষিজমি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বন। সবচেয়ে বেশি বন উজাড় হয়েছে উচ্চ প্রবৃদ্ধির এক দশকেই। শিল্প অধ্যুষিত এলাকাতে বন উজাড়ের হার বেশি বলে পরিবেশ অধিদফতরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন মতে, শুধু গাজীপুরেই এক দশকে ধ্বংস হয়েছে প্রায় ৭৯ শতাংশ বনাঞ্চল। ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত উজাড় হওয়া বনভূমির প্রায় ৪০ শতাংশই কৃষিজমিতে রূপান্তর হয়েছে। এমনকি শিল্পায়নের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত নয় সুন্দরবনও।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বনভূমি কৃষিকাজে ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়ছে। তবে বনভূমিকে কৃষিজমিতে রূপান্তর করার ফলে দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশঝুঁকির দিকে এগুচ্ছে দেশ। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। এতে সরকারের ঝুঁকিও বাড়ছে।

তথ্য মতে, পরিবেশ রক্ষায় ও জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আসছে। সরকারের এসব পদক্ষেপ সারা বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণে সাফল্যের জন্য জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ অর্জন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি থেকে বিভিন্ন সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ প্রশংসা সনদ অর্জন করেছে।

বনায়নের লক্ষ্যেও সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। বৈশ্বিক ক্লাইমেট ইনভেস্টমেন্ট তহবিল থেকে বনায়নের কাজে অর্থ সংগ্রহ করছে সরকার। ইটিপিবিহীন পরিবেশ বিনষ্টকারী বিভিন্ন শিল্পকারখানার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। জলবায়ুর প্রভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।

তবে বিভিন্ন কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগও আছে। বৃক্ষরোপণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও বনভূমি সম্প্রসারণের ব্যাপারে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বন বিভাগ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বনাঞ্চল সৃষ্টির জন্য প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে। এ প্রকল্প নিয়েও আছে অভিযোগ। বিভিন্ন স্থানে মৌসুমের শেষ পর্যায়ে গাছের চারা রোপণ করা হলেও সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদাসীন। তাদের উদাসীনতায় বিভিন্ন স্থানে গাছের চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা ও রাস্তার পাশে গাছের চারা রোপণ না করেও টাকা আত্মসাৎ করা হয়, এমন অভিযোগও রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads