• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
আজ থেকে আমরণ অনশনে শিক্ষকরা

এমপিওভুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বাংলাদেশ

এমপিওভুক্তি দাবি

আজ থেকে আমরণ অনশনে শিক্ষকরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ জুন ২০১৮

স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তির দাবিতে আজ সোমবার থেকে আমরণ অনশন শুরু করছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। গতকাল রোববার পর্যন্ত দাবি পূরণ না হওয়ায় এ ঘোষণা দেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের অপর পাশে অবস্থান কর্মসূচি থেকে গতকাল ডলার বলেন, ‘আজকের (রোববার) মধ্যে ওই প্রতিশ্রুতির (এমপিওভুক্তি) বাস্তবায়ন না ঘটলে আগামীকাল (সোমবার) সকাল ১০টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকরা আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করবেন। এতে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার দায় সরকারকেই নিতে হবে।’

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় বলেন, ‘সারা দেশে পাঁচ হাজারের বেশি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে পাঠদান করে অত্যন্ত কষ্টকর ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকের চাকরির মেয়াদ আছে ৫ থেকে ১০ বছর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা উন্নয়নবঞ্চিত অবস্থায় রয়েছেন।’

তিনি বলেন, ১২ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ জারি করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতির সময় আরোপিত শর্তের সঙ্গে এই নীতিমালা সাংঘর্ষিক। তার কথায়, ‘২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দের কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা নেই। ফলে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা অত্যন্ত হতাশ ও আশাহত হয়ে পড়েছেন।’

রোববার প্রেস ক্লাব এলাকায় দেখা যায়, মূল সড়কেই পলিথিন বিছিয়ে শুয়ে-বসে লাগাতার কর্মসূচি পালন করছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। পাশেই রাখা তাদের ব্যাগ-ব্যাগেজ, গামছা-লুঙ্গি। কুড়িগ্রামের হাজিপাড়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষক আলী আকবর বলেন, ‘সবাই বলে আমরা (শিক্ষকরা) নাকি মানুষ গড়ার কারিগর। সেই আমরাই আজ দাবি আদায়ে রাস্তায় পড়ে আছি। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে এখানে অবস্থান করছি। বছরের পর বছর ধরে আমরা বেতন পাই না, পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। এ অভাবের জীবনেও এখানে এসে আন্দোলন করতে হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘টাকা তো বেশি নেই, এর মধ্যেই হোটেলে খেতে হয়। এক বেলা খাই, এক বেলা খাই না- এভাবেই রাস্তার পাশে অসহায় মানুষের মতো রাত কাটাচ্ছি আমরা। ২০০০ সাল থেকে একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করি, কিন্তু এখনো বেতন পাই না। জীবিকার তাগিদে শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষি কাজ করি। আমাদের ছাত্ররাও আজ ভালো ভালো জায়গায় কাজ করছে। আর আমরা রাস্তায় বসে এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করছি।’

আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরেক শিক্ষক গোলাম মোস্তফা এসেছেন দিনাজপুর থেকে। তিনি বলেন, ‘আমাদের তো এমনিতেই অভাব, এর মধ্যে আবার ১৫ দিন ধরে এখানে অবস্থান। থাকা-খাওয়ার ঠিক নেই। হোটেলে খাওয়ারও পর্যাপ্ত টাকা নেই। এর মধ্যে অলিগলির হোটেলে গিয়ে ২০-৩০ টাকার মধ্যে খাচ্ছি। এক বেলা খাই অন্য বেলা না খেয়ে থাকি, আর রাস্তায় পলিথিনের ওপরই ঘুমাই।’

নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে ১০ জুন থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকরা। একই দাবিতে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেছিলেন শিক্ষকরা। অবস্থান ও অনশন কর্মসূচির এক পর্যায়ে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান সেখানে গিয়ে শিক্ষকদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, সেখানে নতুনভাবে এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। এ কারণে এমপিওভুক্তির দাবিতে শিক্ষকরা আবারো রাজপথে নামেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads