• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
সাড়ে ৩ বছরের প্রকল্পে লাগছে বাড়তি চার বছর

সায়দাবাদ পানি শোধনাগার

সংরক্ষিত ছবি

বাংলাদেশ

পদ্মার পানি আসবে ঢাকায়

সাড়ে ৩ বছরের প্রকল্পে লাগছে বাড়তি চার বছর

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৩ জুলাই ২০১৮

পদ্মা নদী থেকে পরিশোধনের মাধ্যমে রাজধানীতে প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ২০১৩ সালের জুনে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষের কথা থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। পুনর্নির্ধারিত মেয়াদ শেষে বরাদ্দের ৬৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় করে মাঠ পর্যায়ে কাজ হয়েছে ৫৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। এ অবস্থায় ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার সময় বেঁধে দিয়ে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়। এটি অনুমোদন পেলে সাড়ে ৩ বছরের কাজ সাড়ে ৭ বছরে শেষ হবে।

দফায় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের খরচও বাড়ছে। ৩ হাজার ৫০৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরে অনুমোদন করা প্রকল্পটির খরচ প্রথম সংশোধনীতে নামিয়ে আনা হয় ৩ হাজার ৩৭৫ কোটি ১৭ লাখ টাকায়। দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে ব্যয় বাড়ছে ২৯৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। শতকরা হিসাবে যা ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে ১ হাজার ২৪৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আর সহায়তা হিসেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দেবে ২ হাজার ৪০৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ২২ কোটি টাকা ব্যয় হবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ওয়াসার তহবিল থেকে। শুরুতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে সরকারি ব্যয় বাড়ছে ১৭০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে চীনের সহায়তা ২ হাজার ৪১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা থেকে ৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা কমেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. তাকসিম এ খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ২০১৩ সালে একনেকে অনুমোদনের পর প্রকল্পটির কাজ শুরু হতে কিছুটা বাড়তি সময় লেগেছে। ঋণচুক্তির পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতেও বেশকিছু সময় চলে গেছে। প্রকল্পের মাঝ পর্যায়ে ভূমিকম্প নিরোধে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের মানদণ্ডে অসমতার বিষয়টি উঠে আসে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতেও বাড়তি সময় লাগে। তিনি আরো বলেন, সব ধরনের সমস্যা কাটিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গতি এসেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির আওতায় ৪২ মাসেই এর কাজ শেষ হবে। এ বিষয়ে একনেকের অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি সংশোধনের প্রয়োজন।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে ঢাকায় দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার ভূ-উপরিভাগের নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহ সম্ভব হবে। পদ্মা (যশলদিয়া) পানি শোধনাগার নির্মাণ (ফেজ-১) প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।

ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় পানি শোধনাগার, পাইপলাইন, ১০৪ একর জমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, পুনর্বাসন, বিভিন্ন সেবা স্থানান্তর, যানবাহন ক্রয়সহ অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হবে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে ঢাকা মহানগরীতে দৈনিক ২৩৫ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে ৭৮ শতাংশ সরবরাহ করে এ চাহিদার শতভাগ জোগান দেওয়া হচ্ছে। ভূ-উপরিভাগ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে চাহিদার মাত্র ২২ শতাংশ পানি। ভূগর্ভস্থ উৎসে অতিমাত্রায় নির্ভরতার কারণে ঢাকার পানির স্তর প্রতি বছর ২ থেকে ৩ মিটার নিচে নামছে।

প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়েছে, চীনের একটি প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিযুক্তি দিয়ে তাদের সঙ্গে ঢাকা ওয়াসা একটি চুক্তি করেছে। টার্ন-কি ভিত্তিতে কাজ শেষ করতে চুক্তির মেয়াদ ধরা হয়েছে ৪২ মাস। ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে এর মেয়াদ শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্পটির আওতায় বরাদ্দ ছিল ৮২১ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) এতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৮৬৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৩২০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। বরাদ্দের ৬৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় করে এ পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে কাজ হয়েছে ৫৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।

প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমানা প্রাচীর, নিরাপত্তা প্রাচীর ও অন্যান্য পূর্ত কাজে ব্যয়ের পরিমাণ ২৯ কোটি টাকা বেড়েছে। ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় বেড়েছে ১২৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আয়কর খাতে ব্যয় ১২০ কোটি টাকা কমলেও সিডি-ভ্যাট বেড়েছে ৩৭৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। অধিগ্রহণ করা জমির অধিবাসীদের পুনর্বাসনে ব্যয় বেড়েছে ৬৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া ভূমি উন্নয়নে ৪৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা খরচ বেড়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads