• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবার নামে হরিলুট চালাচ্ছে কাতার চ্যারিটি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন এনজিও সংস্থা

সংরক্ষিত ছবি

বাংলাদেশ

রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবার নামে হরিলুট চালাচ্ছে কাতার চ্যারিটি

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ২৯ আগস্ট ২০১৮

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন এনজিওর বিরুদ্ধে বরাদ্দের টাকা লুটপাটসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম, দুর্নীতির অন্যতম হিসেবে উঠে এসেছে ক্যাম্পে স্বাস্থসেবায় নিয়োজিত কাতার চ্যারিটির বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্যসেবায় বছরে এই এনজিওর বরাদ্দ ৮ কোটি টাকা। কর্মরত চিকিৎসকদের দাবি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করছে সংস্থাটি। এই অভিযোগ ওই এনজিওতে কর্মরত চিকিৎসকদের। তাদের অভিযোগ, অর্থ লুটের প্রতিবাদ করলেই চাকরিচ্যুতিসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। বিষয়টি ইতোমধ্যে ডাক্তারদের পেশাজীবী সংগঠন বিএমএসহ ঊর্ধ্বতন মহলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা।

জেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২১ নম্বর চাকমারকুল ক্যাম্পে কাতার চ্যারিটির মেডিকেল ক্যাম্পে ডাক্তার হিসেবে কর্মরত ছিলেন ডা. আয়েশা কবির। ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর এই ক্যাম্পে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দিলেও এ পর্যন্ত তাকে নিয়োগপত্র দেয়নি সংস্থাটি। হঠাৎ গত ১৫ আগস্ট তাকে ফোন করে জানানো হয় আর ক্যাম্পে আসতে হবে না এবং বলা হয় তার চাকরি নেই।

চাকরিচ্যুত ডা. আয়েশা করিব বলেন, ‘কাতার চ্যারিটির পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যেসব কথা হয়েছিল তারা তা ভঙ্গ করেছে। থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থাসহ টেকনাফের চাকমারকুল ক্যাম্পে ডাক্তার হিসেবে কাজ করার কথা কিন্তু তারা শুরু থেকে আমার সঙ্গে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছিল। সেখানে রোহিঙ্গাদের ওষুধ, পরীক্ষা বা আনুষঙ্গিক সব ধরনের সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা খুব অল্প কিছু দিয়ে বাকিটা ভুয়া কাগজ তৈরি করে বিল করে। আমি এতে প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে সেসব বিষয়ে নাক না গলাতে বলে। এ ছাড়া তারা রিলিফ, সোলার প্যানেল বসানোসহ অন্য সব কাজে মারাত্মক অনিয়ম করছে। মাঝে মধ্যে কাতার বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে উনাদের ডেলিগেট এলে অন্য এনজিও থেকে আরেকজন ডাক্তার ও আমাকে রাখা হয়। ডেলিগেটরা চলে গেলে সেই ডাক্তারও চলে যায়। এ পর্যন্ত নিয়োগপত্র এবং সম্মানী ভাতাও আমাকে পরিশোধ করেনি। আমার পরিবর্তে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাকেও ৫ দিন পর বিদায় করে দেওয়া হয়। পরে জানতে পারি অনিয়মের বিষয়ে কথা বলায় তাকেও চাকরিচ্যুত করা হয়। এ বিষয়ে আমি কাতার চ্যারিটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছি।’

চাকরিচ্যুত ডা. অপু মজুমদার জানান, ‘আমি ঢাকায় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরি করতাম। ১৩ আগস্ট কক্সবাজার থেকে কাতার চ্যারিটি নামের একটি সংস্থার কো-অর্ডিনেটর পরিচয়ে প্রণয় বাড়ৈ আমার সঙ্গে কথা বলে। আমাকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডাক্তার হিসেবে আসতে বলে। সেই হিসেবে আমি ১৫ আগস্ট যোগদান করি। যোগ দিয়ে দেখি তাদের প্রত্যেক কাজই প্রতারণা। ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সেবার জন্য নার্স, ফার্মাসিস্ট বা অন্যান্য কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও নামেমাত্র আছে, কাজে নেই। এ ছাড়া যেসব ওষুধ থাকার কথা সেগুলো নেই। কিন্তু অফিসের কর্মচারী ফরিদুল, মুসা, প্রণয় বাড়ৈ, রিপন আমাকে ভুয়া কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। আমি তাতে রাজি না হওয়ায় ২৩ আগস্ট আমাকে কক্সবাজার অফিসে ডেকে এনে মৌখিকভাবে চাকরি নেই বলে জানিয়ে দেয়। পরে আমি বিষয়টি কক্সবাজারে বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদকের কাছে জানাই।’

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাতার চ্যারিটি নামের সংস্থাটি শুরু থেকেই নানান ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তারা দৈনিক ৩০ জন রোহিঙ্গাকে ওষুধ দিলেও কাগজপত্রে দেখায় ১৫০ জন। আর রিলিফ কাজে রয়েছে মারাত্মক অনিয়ম। আর তাদের কাজের প্রধান হোতা হিসেবে কাজ করে ফরিদ, মুসা, সাব্বির ও রিপন নামের কর্মকর্তারা।

কক্সবাজার বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহাবুবুর রহমান বলেন, কাতার চ্যারিটিসহ বেশ কয়েকটি এনজিওর বিরুদ্ধে ডাক্তারদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা ভাবছি ভবিষ্যতে কাতার চ্যারিটিতে কোনো ডাক্তারই আর কাজ করবে না। যদি তারা সঠিক পথে না আসে।

এদিকে কাতার চ্যারিটির কো-অর্ডিনেটর প্রণয় বাড়ৈ ডাক্তারদের কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি স্বীকার করে বলেন, সেটা ঊর্ধ্বতন অফিসের বিষয়। আর ডা. আয়েশা কবিরকে বাদ দেওয়া হয়নি উনাকে আমাদের টঙ্গী হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। আর ডা. অপুকে তার খারাপ আচরণের জন্য বাদ দেওয়া হয়েছে। আর অন্য কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এদিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান বলেন, ‘কাতার চ্যারিটির বর্তমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না, তবে কোনো অনিয়ম করে থাকলে সে বিষয়ে যদি কেউ আমাকে অভিযোগ করে তাহলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads