• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
দুই শ্রেণির চাকরি কোটাহীন

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাস্তবায়ন হচ্ছে

দুই শ্রেণির চাকরি কোটাহীন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা উঠিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছে এ বিষয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। কমিটি তাদের এ প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছে। তবে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে কোটা থেকে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিলে আগামী মাসেই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে কোনো ধরনের কোটা থাকবে না। কিন্তু আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, ১০ শতাংশ রেখে বাকি কোটা বাদ দিতে হবে। তবে সরকার গঠিত কমিটি পুরো কোটাই উঠিয়ে দিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। আন্দোলনকারীরা কোটা উঠিয়ে দেওয়ার খবরে সন্তোষ প্রকাশ করলেও তিনটি দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। ছাত্রসমাজ বলেছে, কোটা উঠিয়ে দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি, হামলাকারীদের দ্রুত বিচার এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করলেই কেবল ছাত্ররা সব ধরনের আন্দোলন থেকে সরে আসবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিতে প্রবেশনারি পদ শুরু হয় ৯ম গ্রেড থেকে। এরপরের চারটি গ্রেড রয়েছে, যা আগে দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি হিসেবে ধরা হতো। তবে এখন শুধু গ্রেড দিয়ে এসব চাকরি বর্ণনা করা হয়। এই গ্রেডগুলোর আওতায় ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার উভয় চাকরিতেই বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ হয়ে থাকে। সর্বশেষ অষ্টম বেতন স্কেল অনুযায়ী নবম গ্রেডের মূল বেতন শুরু হয় ২২ হাজার টাকা থেকে।

কোটা ইস্যুতে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরির ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের নিয়োগে কোনো কোটা থাকবে না। কমিটি নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের সব পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করেছে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, রিপোর্ট অনেক বড় হলেও মোটা দাগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা উঠিয়ে দেওয়ারই সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে কমিটির প্রধান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এ বিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, এটা যেহেতু সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়, তাই এটা আদালতের রায়কে স্পর্শ করবে না, কোনো সমস্যা হবে না। মানে কোনো কোটাই থাকবে না।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের কোটার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শফিউল আলম বলেন, আমরা এগুলো যাচাইবাছাই করে দেখেছি। দেখেই বলেছি, এখন কোটা না থাকলেও চলবে। নবম থেকে ১৩ গ্রেডের বাইরে অন্যান্য গ্রেডে নিয়োগের বিষয়ে অর্থাৎ নিচের পদে নিয়োগের সময় কোটার কী হবে জানতে চাইলে শফিউল আলম বলেন, নিচেরগুলো আগে যা ছিল তাই থাকবে। আর এগুলো তাদের কর্মপরিধিতেও ছিল না। পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেওয়া হবে। অনুমোদন পেলে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। পরবর্তী মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়তো আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে হবে। সেখানে অনুমোদন পেলে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। ৪০তম বিসিএসে নতুন এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে কি না জানতে চাইলে শফিউল আলম বলেন, এতে (বিজ্ঞপ্তি) বলা আছে, সরকার যদি ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সে অনুযায়ী কোটা থাকবে।

সরকারি চাকরিতে দেশে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা আছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ, জেলা ও নারী কোটা ১০ শতাংশ করে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোটা পাঁচ শতাংশ এবং এক শতাংশ আছে প্রতিবন্ধী কোটা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রবর্তন করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর এই কোটার সুবিধা সন্তানদেরও দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তা নাতি-নাতনি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। আর সে সময় থেকেই প্রধানত জামায়াতপন্থিরা এই কোটা বাতিলের দাবিতে একাধিকবার আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হয়। তবে এবার কোনো বিশেষ কোটার কথা না বলে সরাসরি সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে গত ফেব্রুয়রিতে শুরু হয় আন্দোলন। তারা সব মিলিয়ে কোটা ১০ শতাংশ করার দাবি জানায়। গত ৮ থেকে ১১ এপ্রিল নানা ঘটনার পর ১১ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কোনো কোটাই থাকবে না। তবে গত ১২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী সংসদে এও বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। এখন এটি বাতিল হলে তিনি আদালত অবমাননায় পড়বেন। কিন্তু গতকাল মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, তারা আদালতের মতামত নিয়েছেন। সমস্যা হবে না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, সরকারি চাকরিতে বয়স বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads