• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ভোটের আগে ‘রুই-কাতলা’ ধরবে না দুদক

লোগো টিআইবি

বাংলাদেশ

ভোটের আগে ‘রুই-কাতলা’ ধরবে না দুদক

  • সাঈদ আহমেদ
  • প্রকাশিত ১৮ নভেম্বর ২০১৮

ভোটের আগে কোনো ‘রুই-কাতলাকে’ গ্রেফতার করবে না দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ‘চুনোপুঁটি’দের ধরপাকড়, তলব কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ-তৎপরতায়ও টেনে ধরা হয়েছে লাগাম। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ইঙ্গিত পেয়েই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। দুদকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে এ তথ্য। তবে কখনো দ্রুত চলা, আবার কখনো গতি কমিয়ে দেওয়া দুদকের নীতি হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার জার্মানিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক।

দুদক সূত্র জানায়, আইন দ্বারা পরিচালিত হয় স্বশাসিত স্বাধীন ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’। ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’কে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন’-এ রূপান্তর করা হয়। সেই সঙ্গে দেওয়া হয় কার্যক্রমের স্বাধীনতা। এ হিসেবে সরকার কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের আদেশ-নির্দেশ মানতে বাধ্য নয় এ প্রতিষ্ঠান। দুর্নীতিবিরোধী একমাত্র রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠান। ‘সাংবিধানিক’ পদ না হলেও তিন কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা পাচ্ছেন বিচারপতির সমান মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা। তবে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহূত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। বর্তমানে সরকারের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব মামলার বিচার চলছে তার মধ্যে ৪টিই দুদকের। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৭ বছর সাজা দেওয়া হয় দুদকের মামলায়। তারেকের শাশুড়ি ইকবালমান্দ বানুর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে দুদকের। আরাফাত রহমান কোকো মারা যান দুদকের মামলার আসামি থাকা অবস্থায়। জিয়া পরিবারের বাইরে দলটির সিনিয়র নেতা এম কে আনোয়ার, তরিকুল ইসলাম, এম শামসুল ইসলাম মারা গেছেন দুদকের মামলার আসামি তালিকা থেকে। জীবিতদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাদেক হোসেন খোকা, মির্জা আব্বাস, শাহজাহান সিরাজ, ইকবাল মাহমুদ টুকু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আসাদুল হাবিব দুলু, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এম মোর্শেদ খান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এমএ হাশেম, তাবিথ আউয়াল, মীর নাছির, আসলাম চৌধুরী, কাজী কামালের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা রয়েছে। চলছে মামলাগুলোর তদন্ত ও অনুসন্ধান। এর বাইরেও বিএনপির অনেক রাজনৈতিক নেতা, বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত রয়েছে। এসব অনুসন্ধান ও তদন্তের সূত্র ধরেই সম্প্রতি উপর্যুক্ত ব্যক্তিদের তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে কারাগারে যেতে হয়। এ ছাড়া সরকারদলীয় জোটের অংশীদার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে বিটুমিন ক্রয় দুর্নীতি মামলা নিষ্পত্তি না করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে দুই যুগ ধরে। নতুন করে সম্পদের অনুসন্ধান চলছে দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে। ধানমন্ডিতে জালিয়াতির মাধ্যমে বাড়ি দখলের মামলা চলছে জাপার অন্যতম শীর্ষ নেতা কাজী ফিরোজ রশীদের বিরুদ্ধে। এ মামলার তদন্ত এবং অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় দুদক তাদের তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ করে। পক্ষান্তরে সরকারদলীয় নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা থাকলেও সেগুলোর বিষয়ে দুদককে তেমন তৎপর দেখা যায় না। একইভাবে সাম্প্রতিক বৃহৎ ব্যাংকঋণ জালিয়াতির বিষয়েও দুদকের তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। ডিপফ্রিজে রাখা হয়েছে বড়পুকুরিয়া কয়লা চুরি মামলার তদন্ত, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সোনা চুরি, রিজার্ভ চুরি ও পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারি অনুসন্ধান। তবে বিএনপিপন্থি কয়েকজন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকের সংশ্লিষ্টতা থাকায় সক্রিয় রয়েছে প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারির অনুসন্ধান। দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান এবং দুর্নীতি মামলা তদন্তের একটি সময়সীমা (অনুসন্ধান ৪৫ কর্মদিবস, তদন্ত ৯০ কর্মদিবস) রয়েছে। যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে এ সময়সীমা বৃদ্ধির সুযোগও আছে। ফলে আলোচিত অনুসন্ধান-তদন্তগুলোর সময়সীমার প্রশ্নে সংস্থাটি নিজেদের সুবিধাজনক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নেয়। যখন খুশি কারো অনুসন্ধান-তদন্ত রকেট গতিতে সম্পন্ন করা, কারোর তদন্ত কচ্ছপ গতিতে চালানোর সংস্কৃতি দুদকে রীতিসিদ্ধ। এটি নির্ভর করে ব্যক্তির পরিচয়, পরিস্থিতি ও অদৃশ্য ইশারা-ইঙ্গিতের ওপর। আইনত স্বাধীন হলেও সরকারের অন্যান্য সংস্থার মতোই ‘পিক অ্যান্ড চ্যুজ’ সুবিধা দুদকের রয়েছে। এ কাজটি দুদক কখনো স্বপ্রণোদিতভাবে করে থাকে। কখনো করে অদৃশ্য ইশারায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিকদের তলব-জিজ্ঞাসাবাদ-গ্রেফতার না করার ইশারায় চলছে দুদক। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির চেষ্টা থেকে এ ইশারা আসে সংস্থাটির ওপর। তবে সক্রিয়তা প্রমাণে দুর্নীতিপ্রবণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান পরিচালনা, সভা-সেমিনার, সততা স্টোর উদ্বোধন এবং প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকার সিদ্ধান্ত রয়েছে। যদিও তথ্যটির সত্যতা স্বীকার করেননি কমিশন সচিব ড. শামসুল আরেফিন। বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, দুদক আইন এবং বিধি দ্বারা পরিচালিত স্বশাসিত ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। দুদক কখনো কারো ইশারা-ইঙ্গিতে পরিচালিত হয় না। আইনত তেমন সুযোগও নেই।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুদকের ‘পিক অ্যান্ড চ্যুজ’ করার সুযোগ নেই। তাহলে প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads