• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
পারিশ্রমিক পেতে ঘুষ দিলেন আনসাররা!

পারিশ্রমিক পেতে ঘুষ দিলেন আনসাররা!

ছবি : সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ

পারিশ্রমিক পেতে ঘুষ দিলেন আনসাররা!

  • বরিশাল ব্যুরো
  • প্রকাশিত ১২ জানুয়ারি ২০১৯

পারিশ্রমিকের টাকা পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র্রে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় দায়িত্বরত ৩২ হাজার ১২৪ জন আনসারের কাছ থেকে ৪০০ টাকা করে কমপক্ষে এক কোটি ২৮ লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ টাকা ঘুষ আদায় করেছেন উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বরিশালের উপপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন জাহিদুল ইসলাম নামে এক আনসার সদস্য। গত মঙ্গলবার তিনি এ অভিযোগ করেন।

এমন অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে বরিশাল আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ ফিরোজ আহমেদ বলেন, নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের বেশিরভাগ সদস্যই গ্রামের দরিদ্র মানুষ। তাদের খণ্ডকালীন নিয়োগ দেওয়া হয়। ১০ দিন মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের প্রত্যেককে সাড়ে চার হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আগে থেকেই আমরা উপজেলা কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছি, যাতে এই গরিব মানুষদের কাছ থেকে কোনো ধরনের ঘুষ গ্রহণ না করা হয়। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ আমার কানে এসেছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আশ্বাস দেন তিনি।

জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ২১টি আসনে এবার ভোটকেন্দ্র ছিল দুই হাজার ৬৭৭টি। প্রতি কেন্দ্রে ১২ জন আনসার সদস্য এবং দুজন গ্রুপ কমান্ডার দায়িত্ব পালন করেন। সেই হিসাবে বিভাগের ছয় জেলায় মোট ৩২ হাজার ১২৪ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত (কমান্ডার বাদে) ছিলেন। নির্বাচনকালীন ছয় দিন ডিউটি হিসাব করে প্রত্যেক আনসারের জন্য চার হাজার ৫৭৫ টাকা এবং গ্রুপ কমান্ডারদের প্রত্যেকের পাঁচ হাজার ৫৭৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। নির্বাচন শেষে ৬ দিন পর গত ৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে আনসারদের মধ্যে বরাদ্দকৃত টাকা বিতরণ করা হয়।

বরিশাল জেলার ছয়টি আসনে ৮০৫টি ভোটকেন্দ্র্রে আনসার সদস্য ছিলেন ৯ হাজার ৬৬০ জন। এর মধ্যে বরিশাল সদর আসনে ১৭৪ কেন্দ্রের দুই হাজার ৮৮ জন আনসার সদস্যের কাছ থেকে ৪০০ টাকা হারে ৮ লাখ ৩৫ হাজার ২০০ টাকা ঘুষ নিয়েছেন উপজেলা কমান্ড্যান্ট আফজাল হোসেন। এর থেকে ১০০ টাকা নিয়েছেন গ্রুপ কমান্ডাররা। আর বাকি টাকা আফজাল হোসেন এবং অন্য কর্মকর্তারা ভাগ করে নিয়েছেন। বিভাগের বাকি ৫টি জেলায় একইভাবে ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়েছে আনসারদের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকা। আনসার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বনিম্ন ৪০০ এবং সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়।

মুলাদী উপজেলার আনসার গ্রুপ কমান্ডার আবদুল মজিদ বলেন, নির্বাচনের ১৫-২০ দিন আগে আমাদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা নিয়েছেন আনসার অফিসের কর্মকর্তারা। ওই টাকা থেকে ১০০ টাকা দেওয়া হয়েছে গ্রুপ কমান্ডারদের। ৬ ডিসেম্বর আমাদের ছয় দিনের পারিশ্রমিক হিসেবে চার হাজার ৫৫৭ টাকা পরিশোধ করা হয়। তবে গ্রুপ কমান্ডাররা পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৭ টাকা।

অভিযোগকারী আনসার সদস্য জাহিদুল ইসলাম বলেন, তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এভাবে বিভাগের ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও বরগুনায় দায়িত্বরত আনসারদের কাছ থেকে ৪০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করা হয়। অভিযোগের ব্যাপারে সদর উপজেলা কমান্ড্যান্ট আফজাল হোসেন পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে বেশ কয়েকজন আনসার সদস্যদের কথোপকথনের রেকর্ড শোনালে তিনি চুপ হয়ে যান। পরে তিনি বলেন, অভিযোগ আংশিক সত্য। তবে আমি টাকা উঠিয়েছি এ কথা ঠিক নয়। অফিসের অন্য কেউ হয়তো কাজটি করেছেন। তাদের দায় আমার ওপর এসে পড়েছে। আমি হার্টের রোগী। দয়া করে এ নিয়ে লেখালেখি করবেন না।

বরিশাল রেঞ্জের পরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads