• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ

বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না

  • এস এম মুকুল
  • প্রকাশিত ৩১ মার্চ ২০১৯

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ঠিকই বলেছিলেন- ‘বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় পাঁচ দশকের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সে কথাই সত্যি হতে যাচ্ছে। বিশ্বের অর্থনীতি ও সামাজিক প্রায় সব সূচকে বাংলাদেশের ব্যাপক অগ্রগতি যেন এক অদম্য বাংলাদেশের কথাই জানান দিচ্ছে। আপন সংস্কৃতি, সামাজিক ও পারিবারিক ঐতিহ্য, ধর্মীয় এবং মানবিক মূল্যবোধ আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি সঙ্গে থাকে তাহলে এই বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আজকের বাংলাদেশ স্বাধীনতার চার দশকে যোগ্য নেতৃত্ব পেয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ কোটি তরুণকে সম্ভাবনার তপস্যায় জাগিয়ে তুলেছেন। আগামী দশকে যে তরুণ সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে তাদের সঠিক পথ দেখাতে পারলেই উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। যে যাই বলুন- যেভাবেই মূল্যায়ন করুন না কেন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন গবেষকদের বিবেচনায়  বাংলাদেশ ‘পরবর্তী ১১ উদীয়মান অর্থনীতি’র অন্যতম গন্তব্য বলে পরিগণিত হচ্ছে। স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে সবকিছু ঠিকঠাক চললে এই সময়ে মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে যেত বাংলাদেশ। কিন্তু প্রেক্ষাপট ভাবলে দেখা যাবে এই সাড়ে চার দশকে হাজারো প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করে আজকের স্থানে আসতে হয়েছে। এই গৌরবময় অর্জন সারা দেশবাসীর, আপামর  দেশজনতার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির হারের বিচারে বাংলাদেশ দ্রুততম প্রবৃদ্ধিসম্পন্ন দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। আইএমএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৭ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে যা ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার রাষ্ট্রীয় কর্মতৎপরতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো আধুনিকায়ন হচ্ছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের শীর্ষ পর্যায়ের  ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশের সৈনিকরা। বাংলাদেশের ক্রমশ শক্তিশালী হওয়া অর্থনীতির অন্যতম নির্দেশক ক্রমবর্ধমান ব্যাংক রিজার্ভ। বিশাল আকারের এই ব্যাংক রিজার্ভ সৃষ্টিতে অনবদ্য অবদান রাখছেন প্রবাসী বাঙালিরা। বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেছিলেন, এ দেশকে এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি বলা যাবে না। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাড-এর ‘স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিবেদন ২০১৬’ প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে,  আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে আসবে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ছে। সরকারি- বেসরকারি প্রথাগত চাকরির বাইরে স্ব-উদ্যোগে স্বাবলম্বী হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে।

অন্যদিকে দেশের গার্মেন্ট শিল্পে নিয়োজিত ৪ মিলিয়ন কর্মীর সিংহভাগই নারী। তাদের মতে, বর্তমান বিশ্বে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যে ১৮টি দেশ এগিয়ে আছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নির্মূলে বাংলাদেশের অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে।

নিউইয়র্কভিত্তিক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান সাচস ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের পরবর্তী ১১টি সম্ভাবনাময় দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করেছে। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে আমেরিকান আন্ডার সেক্রেটারি নিকোলাস বার্নস বলেছিলেন, বাংলাদেশ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ; যার ভবিষ্যৎ পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশে রয়েছে বর্ধিষ্ণু অর্থনীতি এবং মেধাবী জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের দীর্ঘ সময়ের বন্ধু ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত এনএস মুংক বাংলাদেশ সম্পর্কে বলেছিলেন, দেখেছি বাংলাদেশের মানুষের বহু গুণ আছে। বাংলাদেশে পানি আছে। সূর্যের আলো আছে। আছে বহু সম্পদ। তখন বিশ্বাস করেছি, দক্ষিণ এশিয়া  এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর পক্ষে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কাজেই সম্ভাবনার ক্ষেত্রে আমাদের রয়েছে অফুরন্ত উৎস। বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শাখার তথ্য অনুযায়ী, গার্মেন্ট পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বিতীয়। এক নম্বরে আছে অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি গার্মেন্ট পণ্য আমদানি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের এক রিপোর্ট অনুযায়ী চাল উৎপাদনের পরিমাণের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম দেশ। বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন চাল রফতানি করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। পণ্য রফতানিতে বিশ্বব্যাপী যে কয়টি দেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশ্বের ১৮৮টি দেশে প্রায় সাড়ে সাতশ ধরনের পণ্য রফতানি হচ্ছে। তবে শুধু রফতানিই বাড়ছে না, আমদানি কমিয়েও স্বনির্ভর হচ্ছে বাংলাদেশ। আশা করা হচ্ছে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের রফতানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। অথচ ১৯৭২ সালে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন। তখন ৭ কোটি মানুষের জন্য ওই খাদ্য পর্যাপ্ত ছিল না। এখন স্বাধীনতার ৪৮ বছরে দেশে জনসংখ্যা দ্বিগুণ ছাড়িয়ে প্রায় সতেরো কোটি হওয়ার পরও দেশে এখন খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে তিনগুণ বেশি। বলা যায়, এক সময়ের খাদ্য ঘাটতির দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি খাদ্য রফতানির পথে এগোচ্ছে। আবার দেশজ উৎপাদনে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদানও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্প উন্নয়নের সঙ্গে কর্মসংস্থান, কৃষি ও সেবা খাতের উন্নয়নের ফলে সামগ্রিক অর্থনীতি ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের মাটির নিচে লুকিয়ে আছে সম্পদের বিশাল ভান্ডার। শুধু এই খনিজ সম্পদ দিয়েই বাংলাদেশ সমৃদ্ধিশালী হতে পারে। পর্যটন শিল্পে রয়েছে বাংলাদেশের অফুরন্ত সম্ভাবনা। আমাদের আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। আছে বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য, স্থাপনা, ঐতিহ্যজড়িত পর্যটন স্পট রয়েছে দেশজুড়ে। আরো একটি বিশাল সম্ভাবনার দরজা খুলে গেছে। আমদানিনির্ভর বাংলাদেশ ক্রমশ একটি সমৃদ্ধ রফতানিকারক দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। রফতানির ক্ষেত্রে প্রচলিত পণ্যের সঙ্গে ব্যাপকভাবে অপ্রচলিত চা, চামড়া, সিরামিক থেকে শুরু করে মাছ, শুঁটকি, সবজি, পেয়ারা, চাল, টুপি, নকশিকাঁথা, বাঁশ-বেত শিল্পের তৈরি পণ্য, মৃৎশিল্প রফতানি হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মধ্যবিত্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে। সামনে এগিয়ে যেতেই হবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে হবে। তবে আপন সংস্কৃতি, সামাজিক ও পারিবারিক ঐতিহ্য, ধর্মীয় এবং মানবিক মূল্যবোধ আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি সঙ্গে থাকে তাহলে এই বাংলাদেশকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads