• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
কারাগারে ইয়াবা কারবারিদের বিলাসী জীবনযাপন

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ

কারাগারে ইয়াবা কারবারিদের বিলাসী জীবনযাপন

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ১২ মে ২০১৯

কারাগারে বিলাসী জীবনযাপন করছেন ইয়াবা কারবারিরা। জানা গেছে, কারাগারে এখন বেশির ভাগ ইয়াবা কারবারি নিজেদের মতো পরিবেশ গড়ে নিয়েছেন। তাদের ইচ্ছেমতো খাওয়া দাওয়া, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় মুখরোচক খাওয়া, থাকার জন্য বিশেষ স্থান নির্ধারণ, এমনকি ইচ্ছেমতো ঘুরাঘুরি, যেকোনো মুহূর্তে তাদের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ-সাক্ষাৎ এবং কারা হাসপাতালে থাকাসহ সব মিলিয়ে অনেকটা রাজকীয় জীবনযাপন করছেন ইয়াবা কারবারিরা।

মূলত বাইরে রেখে যাওয়া তাদের বিশাল সম্পদ এবং টাকার জোরেই সবকিছু সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে তারা কারাবরণকে বাইরে অভিযান, ক্রসফায়ার থেকে জীবন রক্ষা ও কালোটাকা সাদা করার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন বলেও মনে করছে সচেতন মহল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদ্য কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া দুজন বলেন, ‘আমরা এলাকার একটি মারামারি-সংক্রান্ত মামলায় কিছুদিন জেলে ছিলাম। সেখানে দেখেছি বর্তমানে ইয়াবা কারবারিদের রাজত্ব চলছে। সবদিকে ইয়াবা কারবারিদের অবাধ বিচরণ, সকাল-বিকাল আমাদের যে খাবার দেওয়া হয়, সেগুলো কোনো সুস্থ মানুষ খাওয়ার উপযুক্ত না। তবু আমাদের টাকা নেই, তাই কোনোভাবে খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়েছে।’

তারা বলেন, ‘তবে ইয়াবা কারবারিরা খায় মাংস, বড় মাছ এবং ভালো চালের ভাত। এর বাইরে তারা কারাগারে থাকা ক্যান্টিনে সিঙ্গারা, সমুচা, পাউরুটি, পরোটা যখন যা ইচ্ছা সব খেতে পারেন। তাদের জন্য কোনো বাধা নেই, তারা যখন যা ইচ্ছে খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু ইচ্ছেমতো করতে পারেন।’  জেল ফেরত এ দুজন আরো বলেন, এছাড়া রাতে ঘুমানোর সময় আমাদের জন্য যেখানে জায়গা থাকে সামান্য, কিন্তু তাদের জন্য অনেক বড় জায়গা। বালিশসহ সবকিছু দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। এমনকি অনেকে বাড়ি থেকে টেবিল ফ্যানও এনেছেন। আর কারাগারের হাসপাতালে সব ইয়াবা কারবারিরা। সেখানে কোনো সাধারণ রোগী নেই। এমনকি একটি সিটে ৩ জন করে ইয়াবা কারবারিরা ঘুমায়। তারা সেখানে জুয়া খেলায় পেতে ওঠেন। আর কোনো সাধারণ কয়েদির পান থেকে চুন খসলেই তাদের ওপর নেমে আসে অমানুসিক অত্যাচার।

এদিকে গতকাল শনিবার কক্সবাজার কারাগারের প্রধান ফটকের বাইরে গিয়ে বিভিন্নজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পুরো কারাগার এখন ইয়াবা কারবারিদের দখলে। একই চিত্র বাইরেও। সেখানে দর্শনার্থীদের বেশির ভাগই ইয়াবা কারবারিদের আত্মীয়-স্বজন। অনেকে দিনের পর দিন অপেক্ষা করলে দেখার সিরিয়াল পায় না। আবার ইয়াবা কারবারিরা তাৎক্ষণিক দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ পান। তারা যেকোনো খাবার বা কাপড়-চোপড় এমনকি ব্যবহারের সাবান, পারফিউমসহ নিতে পারেন।

জানা গেছে, জেলখানার পার্শ্ববর্তী এক আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারির বাড়ি রয়েছে। সেখান থেনে নিয়মিত খাবার যায় কারাগারে। সাধারণ মানুষের দাবি, ইয়াবা কারবারিদের টাকার কমতি নেই। তাই তারা চাইলে টাকার বিনিময়ে সবকিছু পারে। এতে কারাগারের সংশ্লিষ্টরাই জড়িত বলে জানান তারা।

এ সময় বাইরে অপেক্ষমাণ টেকনাফ এলাকার নিলুফার ইয়াসমিন নামে এক গৃহবধূর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তার স্বামী ইয়াবা মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন। তবে তিনি আত্মসমর্পণ করে নয়, বরং মাদক মামলায় আটক হয়েছে দুই বছরের বেশি হবে।

ওই গৃহবধূ জানান, স্বামীর ফোন পেয়ে কিছু নগদ টাকা দিতে এসেছেন। তবে সেই টাকার পরিমাণ কত তা জানাতে রাজি হননি তিনি। তবে তিনি জানিয়েছেন, প্রায় সময় স্বামীকে এভাবে টাকা দিতে হয়। কারণ, জেলের ভেতরে ভালো থাকতে গেলে টাকা লাগে। আর টাকা কীভাবে দেওয়া হয় জানতে চাইলে বলেন, সেটার অনেক পথ আছে।

এ ব্যপারে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট তাপস রক্ষিত বলেন, ‘এটা চিরন্তন সত্য টাকা দিলে অনেক কিছু হয়। কারাগারে ইয়াবা কারবারিরা আলিশান জীবনযাপন করছে এটা অনেকের কাছ থেকে শুনি। এটা করছে কারা কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে।’

এ আইনজীবী বলেন, ‘আমি মনে করি কারাগার হচ্ছে সংশোধনাগার। সেখানে যদি অপরাধীরা আলিশান জীবনযাপন করতে পারে তাহলে তার ভেতরে কোনো প্রভাব পড়বে না। পরে সে বাইরে আসলে তার ভেতরে কোনো পরিবর্তন আসবে না।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, যেসব ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করেছেন বা আগে থেকে কারাগারে আছেন তারা কেউ গরিব না, সবারই বিপুল সম্পদ ও টাকা আছে। সুতরাং সেসব টাকা নিজেদের জন্য ব্যবহার করবে এটাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। আর টাকা দিয়ে সবকিছু করা যায় এটা সবাই জানে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার কারাগারের জেল সুপার বজলুর রশিদ বলেন, কারগারে সবাই সমান, জেলের নিয়মের বাইরে কেউ কোনো সুবিধা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads