• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বিপিসি’র ২,০২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করছে না বিমান

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ

বিপিসি’র ২,০২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করছে না বিমান

২০২৩ সালের আগে পরিশোধ না করার দাবি

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২০ জুলাই ২০১৯

জ্বালানি তেলের দাম পরিশোধ করতে গড়িমসি করছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আওতাধীন সংস্থা পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড বিমানের কাছে জ্বালানি তেলের দাম বাবদ দুই হাজার ২৭ কোটি টাকা পাওনা। অথচ বিমান বলছে, ২০২৩ সালের আগে এই দায় পরিশোধ করতে পারবে না। বিমানের এই দাবিকে বিপিসি মামাবাড়ির আবদার মনে করছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও সরকারের সচিব মো. সামছুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিমান জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান। আমাদের সব ধরনের সহায়তা পাবে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিমানকে জ্বালানি তেল জেট এ-১ সরবরাহ করে বকেয়া বাবদ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বিপিসি। আমরা নানাভাবে তাগিদ দেওয়ার পরও এই অর্থ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।

এই কর্মকর্তা বলেন, বিমান তাদের মোট জ্বালানির ৩১ শতাংশ নিয়ে থাকে পদ্মা অয়েল থেকে। বাকি ৬৯ শতাংশ জ্বালানি যেসব দেশে ফ্লাইট চলাচল করে সেসব দেশ থেকে নিয়ে থাকে। সবার দেনা পরিশোধ করলেও বিপিসির পাওনা পরিশোধ করছে না প্রতিষ্ঠানটি।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিমান বিপিসি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে বিপুল পরিমাণের এই অর্থ পরিশোধ করতে আরো ৫ বছর সময় চাচ্ছে। সম্প্রতি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানেও বিমানের দেনা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠকটি শেষ হয়।

জানা গেছে, শিগগিরই বিমানের বহরে একটি উড়োজাহাজ যুক্ত হচ্ছে। আরো দুটি উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়া করছে বিমান। এসব দায় পরিশোধ করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে যাবে। এই অজুহাতে বিমান জ্বালানি তেলের দাম পরিশোধ করতে সময় চাচ্ছে। এদিকে বিমানকে আরো সাশ্রয়ী দরে জ্বালানি তেল দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিমানের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল, বিপিসি জেট এ-১ ফুয়েল বেশি দরে বিক্রি করছে বিপিসি। এর সুরাহা করতে শিগগিরই দুই প্রতিষ্ঠানের একটি সমঝোতা চুক্তি সই হতে যাচ্ছে।

বিমান সময়মতো অর্থ না দেওয়ায় পদ্মা অয়েল বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। কিন্তু তার জন্য সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাই পাওনা আদায়ে সহযোগিতা চেয়ে সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগে চিঠি দিয়েছে বিপিসি।

জানা যায়, শিগগিরই বিমানের সঙ্গে বিপিসির পাওনা ও জ্বালানির দরসংক্রান্ত একটি বড় সভা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে সম্পৃক্ত করা হতে পারে এই বৈঠকে।

বিমানের কাছে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ এই দায় তৈরি হয়েছে। তবে বিপিসি এখন আর বাকিতে জ্বালানি দিচ্ছে না। সাপ্তাহিক ভিত্তিতে পাওনা পরিশোধ করতে হচ্ছে বিমানকে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। মোট পাওনার মধ্যে মূল অর্থ এক হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা আর বাকি ৬৮০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা সুদ। বিপিসি সুদের হার ধরেছে গড়ে সাড়ে নয় শতাংশ। বিমান ছাড়া অন্য দেশি-বিদেশি কোম্পানি বিপিসির কাছ থেকে নগদ অর্থে জ্বালানি সংগ্রহ করে থাকে। গত আট বছরের পাওনা নিয়ে বিমানের সঙ্গে বিপিসির অনেক আলোচনা হলেও সমস্যার সুরাহা হয়নি। পরে বিপিসি, বিমান ও জ্বালানি বিভাগ মিলে একটি কমিটি করা হয়।

এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী সম্প্রতি সংসদে জানিয়েছেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ২০১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। এই অর্থবছরে বিমানের মোট আয় ছিল চার হাজার ৯৩১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ১৩৩ কোটি ১১ লাখ টাকা।

বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে একক বৃহত্তম ক্রেতা এবং জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় ১৫টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইটের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় কম দামে জেট ফুয়েল সরবরাহ করবে বিপিসি। নতুন ব্যবস্থায় শুধু তিনটি খাতে তেলের আমদানি ব্যয়ের বাইরে অর্থ দিতে হবে বিমানকে। এগুলো হলো-বিপিসির জন্য পাঁচ শতাংশ মার্জিন, ফিন্যান্সিং চার্জ ও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য একটি নির্দিষ্ট সারচার্জ। এ নিয়ম অনুসারে আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামে তেল কিনলে বিপিসিও বিমানের কাছে দাম কম রাখে। সে ক্ষেত্রে প্রতি মাসে জেট ফুয়েলের মূল্য নির্ধারণ করে বিপিসি। তবে বিমানের সাতটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হয় না। এ ক্ষেত্রে বিমানকে প্রচলিত বাজারমূল্য ও এর সঙ্গে অন্যান্য চার্জ দিয়েই তেল কিনতে হয়। প্রতি লিটার জ্বালানির দাম পড়বে ৫৬ সেন্টের কাছাকাছি। বিমান প্রতি মাসে পদ্মা অয়েলের কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকার জ্বালানি তেল কেনে।

জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উপমহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বলেন, বিপিসির সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমরা একটি সমাধান হয়তো পেয়ে যাব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads