• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
সমস্যার যথাযথ সমাধান করুন

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ

আদমজী ইপিজেডে শ্রমিক অসন্তোষ

সমস্যার যথাযথ সমাধান করুন

  • প্রকাশিত ১৩ জানুয়ারি ২০২১

শ্রমিকরাই আমাদের অর্থনীতি গতিশীল রাখার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। তাদের জীবনমানের কথা বিবেচনা করে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। শ্রম মজুরি, শ্রমঘণ্টা, ইনক্রিমেন্ট প্রভৃতি বিষয়ের ওপর ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করাও হয়েছে। কিন্তু কোভিড মহামারীর কারণে একটু ছন্দপতন ঘটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। যদিও সরকার প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে অনেকটা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেছে বা করছে, তবুও আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। গত ৯ জানুয়ারি শনিবার সকাল থেকে বকেয়া বেতন ও বন্ধ ফ্যাক্টরি খুলে দেওয়ার দাবিতে হাজারও শ্রমিক ইপিজেডের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করেন। বিষয়টি উভয় পক্ষের জন্যই দুঃখজনক।

আন্দোলনরত শ্রমিকদের ভাষ্য, আদমজী ইপিজেডের কুনতং অ্যাপারেলস লিমিটেডের (ফ্যাশন সিটি) শ্রমিকদের ৪ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। সেই বেতনের দাবিতে তারা সকাল ৭টা থেকে ইপিজেডের সামনের রাস্তায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিলেন। এ সময় মালিকপক্ষের কর্মকর্তারা ২০ জানুয়ারি তাদের পাওনা পরিশোধ করার আশ্বাস দেন। কিন্তু শ্রমিকরা এতে আশ্বস্ত না হয়ে অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যান। একপর্যায়ে তাদের ওপর আনসার ও ইপিজেডের নিরাপত্তাকর্মীরা লাঠিচার্জ শুরু করলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-শিমরাইল সড়ক অবরোধ করেন। আদমজী ইপিজেডের কুনতং অ্যাপারেলস লিমিটেড গত বছরের ১০ আগস্ট হঠাৎ ২ দিনের ছুটি ঘোষণা করে বন্ধ করে দেয়। তবে এরপরও শ্রমিকদের তিন থেকে চার হাজার টাকা করে বেতন পরিশোধ করে আসছিল মালিকপক্ষ। এ ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ ২০ জানুয়ারি বেতন দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এই আশ্বাস না মেনে সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ এসে শ্রমিকদের ওপর জলকামান দিয়ে পানি ছিটায় এবং ২১ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। সংঘর্ষ চলাকালে সংবাদ সংগ্রহ ও ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন ইপিজেডের আনসার ও নিরাপত্তাকর্মীরা। এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) সকালে একই দাবিতে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। ওই সময়ও আনসার ও ইপিজেডের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। যার কারণে প্রায় এক হাজার শ্রমিক সকাল ৮টায় আদমজী ইপিজেডের প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এরপরই আনসার ও ইপিজেডের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়।

শ্রমিক অসন্তোষ, কৃষকদের ন্যায্য অধিকারের বিষয়টি এখন বেশ লাইম লাইটে চলে এসেছে। কোভিডের কারণে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তার প্রভাব শ্রমিকদের ওপরও পড়ছে। কিন্তু শ্রমিকদের সরল জীবনে, সীমিত পাওনার ভেতর এই প্রভাব তারা কোনোভাবে মেতে নিতে পারছে না, পারার কথাও নয়। যার ফলে শ্রমিক অসন্তোষের খবর প্রায়ই পাওয়া যাচ্ছে।  পরিস্থিতি খেয়াল করলে বোঝা যাবে, ভূমিকাটা কেমন বা তাদের অসন্তোষের মাত্রা কেমন? তাদের অবরোধ থেকে সরিয়ে দিতে পুলিশ প্রশাসন টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করলে তারাও ইটপাটকেল ছোড়ে। এও লক্ষ করা যায়, এ সংবাদ যেন বাইরে প্রচার না হয় সেজন্য সাংবাদিকদের ওপরও এক ধরনের চড়াওয়ের দৃশ্য দেখা যায়। পুরো ঘটনাটিকে লিংকআপ করে যদি বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে এর থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। শ্রমিকের স্বার্থ, জীবনমান এবং কনট্রিবিউশন বিবেচনা করে সরকার, শ্রম মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ একটি সুবিধাজনক এবং শুভকর সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে এ আশা ব্যক্ত করি।

আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে এ ব্যাপারে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। কিন্তু সেই অর্থনীতি কাদের জীবনমান পরিবর্তন করল, এই প্রশ্নটির কোনো সদুত্তর আমাদের জানা নেই। একটা দেশের অগ্রগতি তো দাঁড়ায় সার্বিক বিষয়কে বিবেচনায় এনে। তখনই সেই উন্নয়নকে বুক ফুলিয়ে বলা যায়। সকল শ্রেণি পেশার মানুষের জীবনকে প্রাধান্য দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামত, এখনই উপযুক্ত সময়, পরিস্থিতি এখনো নাগালের ভেতরে আছে। যে সমস্যা সেগুলো সমাধান সম্ভব। ইতিবাচক সমাধানের অপেক্ষা আমাদের। আমাদের বিশ্বাস, এই ব্যাপারে অচিরেই সরকারের কুশলী পদক্ষেপ সমস্যার স্বস্তিদায়ক সমাধান বয়ে আনবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads