• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
মোস্তাফিজ ঝলকে রাজশাহীর জয়

উইকেট না পেয়েও জয়ের নায়ক রাজশাহীর মোস্তাফিজ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বিপিএল

মোস্তাফিজ ঝলকে রাজশাহীর জয়

  • স্পোর্টস রিপোর্টার
  • প্রকাশিত ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

জয়ের জন্য সমীকরণটা খুব বেশি জটিল ছিল না রংপুর রাইডার্সের। শেষ ১২ বলে তখনো দরকার মাত্র ১৮ রান। শেষ ওভারে তা গিয়ে দাঁড়ায় ১০ রানে। রংপুরের হাতে তখনো বাকি চার উইকেট। ক্রিজে আছেন মারকুটে ব্যাটসম্যান রিলে রুশো ও লোকাল বয় ফরহাদ রেজা। কিন্তু বল হাতে রাজশাহীর ভরসা তখন মোস্তাফিজুর রহমান। ডেথ ওভারে যিনি প্রায়ই চমক দেখান। তার ব্যত্যয় হলো না এবারো। প্রথম বলে রুশোকে দিলেন এক রান। স্ট্রাইকে গিয়ে যেন বিপদেই পড়ে গেলেন ফরহাদ রেজা। টানা তিন বল ডট। ব্যাটে বলে সংযোগ ঘটাতে সীমাহীন চেষ্টা, কিন্তু পারলেন না। পঞ্চম বলেও তাই। তারপরও পড়িমরি করে দৌড়ালেন ফরহাদ। শেষ বলে স্ট্রাইকে রুশো। কিন্তু মোস্তাফিজ ম্যাজিকে সব চূর্ণ। শেষ বলে ছক্কা হাঁকাতে পারলে ম্যাচটি হতে পারত টাই। কিন্তু তিনি নিতে পারলেন মাত্র এক রান। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সকে ৫ রানে হারাতে পেরে রাজশাহী শিবিরের উল্লাস ছিল বাঁধনহারা। উৎসবের মধ্যমণি অনুমিতভাবে পেসার মোস্তাফিজ। ৩৬ বলে অপরাজিত ৪২ রান করার সুবাদে ম্যাচসেরা রাজশাহীর জাকির হোসেন। কিন্তু আসল ম্যাচের নায়ক তো মোস্তাফিজই। ৪ ওভারে দিয়েছেন ১৭ রান। শেষ ওভারে তিন রান। দর্শকদের ম্যাচসেরা তাই এই কাটার মাস্টারই।

এর আগের ম্যাচে ঢাকা ডায়নামাইটসের কাছে মাত্র ২ রানে হেরেছিল মাশরাফির রংপুর। এবার রাজশাহীর কাছে ৫ রানের হার। ৫ ম্যাচে দুই জয়, তিন হার। অনেকটা ব্যাকফুটে রাইডার্স শিবির। অন্যদিকে চার ম্যাচে দুই জয়ে চলমান বিপিএলে লড়াইয়ের আভাস দিয়ে রাখল মিরাজের রাজশাহী কিংস। 

টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে রাজশাহীর সংগ্রহ ৮ উইকেটে ১৩৫ রান। জবাবে রংপুরের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৩০ রান। অথচ ম্যাচটি শুরু থেকেই হাতের মুঠোয় ছিল রংপুরের। গেইল ঝড় উঠতে উঠতে ওঠেনি। তারপরও মোহাম্মদ মিঠুন ও রিলে রুশোর ব্যাটিং রংপুরকে দিচ্ছিল জয়ের আভাস। কিন্তু শেষ ওভারের নাটকীয়তায় রংপুুরকে হতাশায় ডুবতে হয়।

জয়ের জন্য করতে হবে ১৩৬ রান। রংপুরের সামনে আহামরি স্কোর ছিল না। ওপেন করতে নামেন ক্রিস গেইল। সঙ্গে অধিনায়ক মাশরাফি। যা ছিল বড় চমক। কিন্তু মাশরাফি টিকতে পারেননি। রাব্বির বলে আউট হন শূন্য রানে। তবে ঝড়ের আভাস দিচ্ছিলেন গেইল। রাব্বির এক ওভারে দুই ছক্কা ও দুই চার হাঁকান তিনি। কিন্তু ওই ওভারের শেষ বলেই লং অনে সৌম্যের হাতে ক্যাচ তুলে দেন গেইল। ১৪ বলে ২৩ রান করে ফেরেন ক্যারিবীয় ব্যাটিংদানব। ৩১ রানে রংপুরের নেই দুই উইকেট।

এরপর মোহাম্মদ মিঠুন ও রিলে রুশো দলকে সামনের দিকে নিয়ে চলেন। দলীয় ৭১ রানের মাথায় বিদায় নেন মিঠুন। হাফিজের বলে ইভান্সের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে তিনি করেন ৩১ বলে দুই ছক্কায় ৩০ রান। আশা ছিল বোপারাকে নিয়ে। এবার পারেননি তিনি। ব্যক্তিগত দুই রানে হাফিজের বলে বোল্ড তিনি। হাওয়েলও নেন দ্রুত বিদায়। রুশোর সঙ্গে নাহিদুলের জুটি দলকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেয়। ১২ বলে ১৬ রান করে উদানার বলে আউট হন নাহিদুল। শেষ জুটিতে রুশো-ফরহাদ অবিচ্ছিন্ন থাকলেও আসেনি কাঙ্ক্ষিত জয়। আর সেটা শেষ ওভারে মোস্তাফিজের নয়নকাড়া বোলিংয়ের কারণে। ৪ বল খেলেও শূন্য রানে অপরাজিত ফরহাদ। তবে ৪৫ বলে তিন চারে ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৪ রানে অপরাজিত রিলে রুশো। রাজশাহীর হয়ে হাফিজ ও রাব্বি দুটি, উদানা নেন একটি উইকেট। মোস্তাফিজ উইকেট পাননি, তবে চার ওভারে দিয়েছেন সবচেয়ে কম রান, ১৭। ইকোনমি রেটে তার ধারেকাছে নেই কেউ।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি রাজশাহী। মেহেদী হাসান মিরাজের ওপেনিংয়ে নামার ফাটকা এদিন কাজে লাগেনি। মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে শূন্য রানে আউট হন শফিউল ইসলামের দারুণ ক্যাচে।

আরেক ওপেনার মুমিনুল হক ১৬ বলে ১৪ রান করে স্টাম্পড হন সোহাগ গাজীর বলে।

তিনে নামা সৌম্য সরকারের ব্যাটে ছিল ভালো কিছুর ইঙ্গিত। কিন্তু পূর্ণতা পায়নি সম্ভাবনা। ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৩ বলে ১৮ করে তিনি শিকার মাশরাফির। ষষ্ঠ ওভারে রাজশাহীর রান তখন ৩ উইকেট ৩৬।

ধুঁকতে থাকা দলকে উদ্ধার করেন মোহাম্মদ হাফিজ ও জাকির। চতুর্থ উইকেটে দুজন গড়েন ৫৪ রানের জুটি। রানের গতি যদিও বেশি ছিল না, কিন্তু দলকে ভদ্রস্থ একটি পর্যায়ে অন্তত নিতে  পেরেছেন দুজনে। ২৯ বলে ২৬ করে হাফিজ রান আউট হন রবি বোপারার সরাসরি থ্রোতে।

এরপর সুবিধা করতে পারেননি লরি ইভান্স। টুর্নামেন্টে প্রথমবার সুযোগ পাওয়া রায়ান টেন ডেসকাট রান আউট হন একটি ছক্কা ও চারে ১৪ রান করে। শেষ দিকেও আসেনি প্রত্যাশিত গতিতে রান। জাকির শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ বলে ৪২ রান করে। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে দুটি উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টে নিজের শিকার মাশরাফি নিয়ে গেছেন দশে। এছাড়া ফরহাদ রেজা দুটি, শফিউল ও সোহাগ গাজী নেন একটি করে উইকেট।

আজ বিপিএলের বিরতি। ঢাকার প্রথম পর্বের সমাপ্তি। আগামীকাল থেকে বিপিএলের ব্যাট-বলের লড়াই হবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। কাল দিনের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে খুলনা টাইটান্স ও রাজশাহী কিংস। সন্ধ্যার ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হবে কুমিল্লা ভাইকিংস ও সিলেট সিক্সার্স।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads