• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
গোপনে সব শেয়ার বেচলেন সেন্ট্রাল ফার্মার দুই পরিচালক

সেন্ট্রাল ফার্মা

সংরক্ষিত ছবি

পুঁজিবাজার

গোপনে সব শেয়ার বেচলেন সেন্ট্রাল ফার্মার দুই পরিচালক

  • আলতাফ মাসুদ
  • প্রকাশিত ২০ মে ২০১৮

সিকিউরিটিজ আইনে উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিজ কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচার ক্ষেত্রে পূর্বঘোষণার বাধ্যবাধকতা আছে। তবে সেন্ট্রাল ফার্মার দুজন পরিচালক সে আইন মানেননি। কোনো রকম পূর্বঘোষণা ছাড়াই গোপনে নিজেদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন তারা। মালিকানা পরিবর্তনের সংবাদে যখন কোম্পানিটির শেয়ার উচ্চ দরে বাজারে কেনাবেচা হচ্ছিল, ঠিক তখন তারা এ অবৈধ কাজটি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আলিফ গ্রুপের কাছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালকরা তাদের সব শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দেন এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই করেন। মালিকানা পরিবর্তনের এ সংবাদকে কেন্দ্র করে চুক্তির চার মাসের মধ্যে সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ারদর ১৬৫ শতাংশ বেড়ে যায় এবং সর্বোচ্চ ৩৬ টাকা ১০ পয়সায় ওঠে। যদিও শেষ পর্যন্ত ওই চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়।

কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য যখন আকাশছোঁয়া, তখন সেন্ট্রাল ফার্মার পরিচালক মো. রুকুনউজ্জামান ও পারভেজ আহমেদ ভূঁইয়া তাদের সব শেয়ার গোপনে বিক্রি করে দেন। সে সময় ওই দুই পরিচালক ৩৮ লাখ ৬৯ হাজার ৬৩৫টি শেয়ার বিক্রি করেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রুকুনউজ্জামান ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৫টি ও পারভেজ আহমেদ ভূঁইয়া ১৯ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫০টি শেয়ার বিক্রি করেন। পারভেজ আহমেদ ভূঁইয়া কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনসুর আহমেদের আত্মীয়।

বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিজ কোম্পানির ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। এর কম হলে উদ্যোক্তা পরিচালকরা শেয়ার বিক্রি বা স্থানান্তর করতে পারবেন না। এ হিসেবে সেন্ট্রাল ফার্মার উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি করার কোনো সুযোগ ছিল না। 

পরিচালক মো. রুকুনজ্জামান ও পারভেজ আহমেদ ভূঁইয়া কখন ও কীভাবে তাদের শেয়ার বিক্রি করেছেন, তা জানেন না সেন্ট্রাল ফার্মার শেয়ার ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা মো. কামাল। তিনি জানান, তারা তাদের পরিচালক পদ ত্যাগ করেছেন এবং তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও নেই।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৩০ জুন সেন্ট্রাল ফার্মার উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের পরিমাণ ছিল ৩০ শতাংশ। গোপনে দুই পরিচালকের শেয়ার বিক্রির পর উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ২৫ দশমিক ৮৯ শতাংশে নেমে আসে। তালিকাভুক্তির সময় তাদের হাতে কোম্পানির মোট শেয়ারের ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল।

পরিচালকদের গোপনে শেয়ার বিক্রির বিষয়টি সিকিউরিটিজ আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলে মনে করছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান। বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে কোম্পানি ও সংশ্লিষ্ট দুই পরিচালকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

লিস্টিং রেগুলেশন ২০১৫ অনুযায়ী, উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা নিজ কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করতে চাইলে স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিএসইসিকে লিখিতভাবে জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে সেন্ট্রাল ফার্মার ওই দুই পরিচালক নিজেদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রির সময় ডিএসইকে কিছুই জানাননি। এ কারণে ডিএসইও বিষয়টি নিউজ আকারে প্রকাশ করতে পারেনি। ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর বিলম্বের কারণে চুক্তিটি বাতিলের কথা জানায় সেন্ট্রাল ফার্মা। যখন কোম্পানির শেয়ারদর নেমে আসে ২২ টাকা ৩০ পয়সায়।

২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস। সে সময় অভিহিত মূল্যে পুঁজিবাজার থেকে ১৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি। সেন্ট্রাল ফার্মার আয় কমে আসায় বর্তমানে শেয়ারদর নেমে এসেছে ১৪ টাকা ৮০ পয়সায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads