• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
মূলধনি মুনাফায় ১৫ শতাংশ কর পুনর্বিবেচনার দাবি ডিএসইর

সংগৃহীত ছবি

পুঁজিবাজার

মূলধনি মুনাফায় ১৫ শতাংশ কর পুনর্বিবেচনার দাবি ডিএসইর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ আগস্ট ২০১৮

স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার বিক্রি থেকে উদ্ভূত মূলধনি মুনাফার ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ কর পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ারহোল্ডাররা। ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা জানান, এটা বৈষম্যমূলক। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের শর্তে তারা মূলধনি মুনাফা থেকে কর অব্যাহতি চেয়েছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে সম্প্রতি এমন দাবি জানিয়েছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে এ বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

চলতি বছরের ১৪ মে টানাপড়েন শেষে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে শেনঝেন-সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত চীনা জোটের কাছে ব্লকড অ্যাকাউন্টে রক্ষিত এক-চতুর্থাংশ শেয়ার প্রায় ৯৪৭ কোটি টাকায় বিক্রির জন্য শেয়ার ক্রয়চুক্তি (এসপিএ) স্বাক্ষর করে ডিএসই। আয়কর অধ্যাদেশ অনুসারে শেয়ার হস্তান্তরের কারণে উদ্ভূত মূলধনি মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স দিতে হবে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডারদের।

২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি সিদ্ধান্তে মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণে স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট পার্লামেন্ট অনুমোদন দেয়, যা ২০১৩ সালের ২ মে থেকে কার্যকর হয়। ডিমিউচুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট অনুসারে স্টক এক্সচেঞ্জে ২৫ শতাংশ শেয়ার কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রির বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। এ ছাড়া তালিকাভুক্তির মাধ্যমে স্টক এক্সচেঞ্জের আরো ৩৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করতে হবে। অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ শেয়ার থাকবে স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের কাছে। শেয়ার বিক্রি থেকে যে মূলধনি মুনাফা হবে, তার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপ করে এনবিআর।  

জানতে চাইলে ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট মোস্তাক আহমেদ সাদেক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মূলধনি মুনাফার ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডারদের ওপর খড়গ চাপানো হয়েছে। যখন আয়কর আইনে এমন বিধান যুক্ত করা হয়, তখন আমরা বিষয়টি খেয়াল করিনি। এখন আমরা বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি যৌক্তিকীকরণের আশ্বাস দিয়েছেন। যেহেতু বাজারে তারল্য সঙ্কট রয়েছে, তাই আমরা ১৫ শতাংশ করারোপ থেকে অব্যাহতি চেয়ে পুরো অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছি। শতভাগ কর অব্যাহতি পাওয়া না গেলেও সাধারণ কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের মতো ডিএসইর শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫ শতাংশ হারে মূলধনি মুনাফায় কর নির্ধারণ করার দাবি জানানো হবে। বিএসইসিও এ বিষয়ে সমর্থন জানিয়ে সুপারিশ করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। 

আয়কর অধ্যাদেশ অনুসারে বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা মূলধনি মুনাফার ওপর শতভাগ কর অব্যাহতি সুবিধা পাচ্ছেন। এর বাইরে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ক্ষেত্রে শেয়ার হস্তান্তরের কারণে উদ্ভূত মূলধনি মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। আর আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ৫৩এন ধারায় বলা হয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষেত্রে শেয়ার হস্তান্তরের কারণে উদ্ভূত মূলধনি মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে।

আয়কর আইনের সংশ্লিষ্ট ধারার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা বলছেন, কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের মতো ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররাও একইভাবে এক্সচেঞ্জটিতে উদ্যোক্তা হিসেবে বিনিয়োগ করেছেন। অথচ কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ক্ষেত্রে মূলধনি মুনাফায় কর ৫ শতাংশ হলেও ডিএসইর শেয়ারহোল্ডারদের জন্য এটি ১৫ শতাংশ। এ ধরনের বিধানকে বৈষম্যমূলক হিসেবে আখ্যায়িত করে এক্সচেঞ্জটির শেয়ারহোল্ডাররা বলছেন, পুঁজিবাজার ও স্টক এক্সচেঞ্জের উন্নয়নের স্বার্থে কৌশলগত অংশীদারের কাছে শেয়ার বিক্রির ওপর প্রযোজ্য মূলধনি মুনাফার কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া দরকার। প্রয়োজনবোধে কৌশলগত অংশীদারের কাছে শেয়ার বিক্রির পুরো টাকাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার শর্তে কর অব্যাহতি চাওয়া হবে। তবে শতভাগ কর অব্যাহতি পাওয়া না গেলে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের মতো ৫ শতাংশ হারে কর দিতে আগ্রহী ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা।

এ বিষয়ে ডিএসইর সাবেক পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, মূলধনি মুনাফার ওপর স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডারদের যে কর ধার্য করা হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক। তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের তুলনায় তা অনেক বেশি। তিনি বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজড করতে সরকার আমাদের বাধ্য করেছে। এমনকি কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করার বিষয়েও বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। আবার আগামীতে স্টক এক্সচেঞ্জও তালিকাভুক্ত হবে। এসব বিবেচনায় মূলধনি মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ কর ধার্য করা বৈষম্যমূলক। আমাদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা তার কাছে কর কমানোর প্রস্তাব দেব। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের শর্তে কর পুরোপুরি অব্যাহতির প্রস্তাব দেওয়া হবে।

এদিকে চলতি মাসের শুরুতেই চীনা বিনিয়োগের অর্থ দেশে আসার কথা থাকলেও প্রক্রিয়াগত কারণে কিছুটা পিছিয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র জানিয়েছে, ঈদের পরই বিনিয়োগের অর্থ চলে আসবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি কৌশলগত অংশীদারদের প্রস্তাব সংবলিত টেন্ডার বাক্স উন্মোচন করে ডিএসই। দরপত্র প্রক্রিয়ায় কৌশলগত অংশীদারের জন্য সংরক্ষিত ডিএসইর ১৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ শেয়ারের এক-চতুর্থাংশ শেয়ার কিনতে চীন ও ভারতে দুটি কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাব জমা হয়। এর মধ্যে শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের চীনা কনসোর্টিয়াম ডিএসইর প্রতি শেয়ারের জন্য ২২ টাকা হারে ৯৯২ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব করে। তবে মধ্যবর্তী সময়ে সর্বশেষ হিসাব বছরের জন্য বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ায় ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের ভ্যালুয়েশন কিছুটা কমে যায়, যা চূড়ান্ত এসপিএতে সমন্বয় করা হয়েছে।

চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছ থেকে এখন ডিএসই প্রতিটি শেয়ারের জন্য ২১ টাকা হারে প্রায় ৯৪৭ কোটি টাকা পাবে। এর বাইরে তারা ডিএসইকে বিনামূল্যে বিভিন্ন কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে চীনা কনসোর্টিয়াম, যার মূল্য উল্লেখ করা হয় ৩০৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই) সাবসিডিয়ারি এনএসই স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন লিমিটেডের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম ডিএসইর একই পরিমাণ শেয়ারের জন্য ১৫ টাকা হারে ৬৭৬ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব করে। দর প্রস্তাব ও কারিগরি দিক বিবেচনায় ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চূড়ান্ত করেন। গত ১৪ মে রাজধানীর একটি হোটেল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে ডিএসই ও শেনঝেন-সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এসপিএ স্বাক্ষর হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads