• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
এবার মন্দ তালিকায় নর্দার্ন জুট

সংগৃহীত ছবি

পুঁজিবাজার

এবার মন্দ তালিকায় নর্দার্ন জুট

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ইভিন্স টেক্সটাইলসের পর আরো এক কোম্পানি মন্দ কোম্পানির তালিকা ‘জেড ক্যাটাগরি’তে স্থান নিয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া হিসাব বছরে বড় ধরনের লোকসানের কারণে নর্দার্ন জুট ম্যানুফাকচারিং কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে না পারায় জেড ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের পাটপণ্য রফতানির ওপর ভারতের অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কের কারণে লোকসানের মুখে পড়েছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিকালে নর্দার্ন জুটের পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানির লোকসানের কারণে ২০১৭-১৮ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশের সুপারিশ করেনি। ভারতে পাটপণ্য রফতানি করে ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে ৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে নর্দার্ন জুট। এ সময় শেয়ারপ্রতি লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ১৫ পয়সা। এর আগে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৬ পয়সা আয় সত্ত্বেও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা না দেওয়ার কারণে ইভিন্স টেক্সটাইলসকে জেড ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয় ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।

নর্দার্ন জুটকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করলেও গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানির শেয়ারদরে তেমন প্রভাব পড়েনি। আগের দিনের তুলনায় কোম্পানির শেয়ার দর ৭ টাকা ৪০ পয়সা কমে সর্বশেষ ৩১৫ টাকা ৯০ পয়সায় কেনাবেচা হয়েছে।

ভারতীয় জুট মিল মালিকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের পাটপণ্যে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আরোপ করে। অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের ফলে পাট সুতা রফতানিতে টনপ্রতি ৯৭ থেকে ১৬২ ডলার এবং চট ও বস্তায় ১২৫ থেকে ১৩৯ ডলার পর্যন্ত শুল্ক দিতে হচ্ছে। এর ফলে দেশের পাটপণ্য রফতানিকারক কোম্পানিগুলোর বিক্রয়জনিত ব্যয় বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে কাঁচামালের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এ খাতের কোম্পানিগুলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।  

এ বিষয়ে নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ভারতের অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কের কারণে প্রতিটন পাট রফতানিতে ৯৭ ডলার বেশি ব্যয় হচ্ছে। একই সময়ে সেখানকার বাজারে লো-কাউন্টের সুতার দামও কমে গেছে। আগে লো কাউন্টের যে সুতা বিক্রি হতো প্রতিটন ৮১০ ডলারে, সেটা এখন ৫৯৭ ডলারে নেমে এসেছে। এতে করে লো কাউন্টের প্রডাক্টে ১০০ ডলার করে লোকসান হচ্ছে। অন্যদিকে কাঁচামালের দাম আগে থেকেই বেড়ে গেছে। এসব কারণেই এখন পাট রফতানিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানি নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪ সালের পর থেকে বর্তমানে পাট সুতা থেকে কোম্পানির রফতানির আয় বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। সদ্য শেষ হওয়া হিসাব বছরেও রফতানিতে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে বিক্রি থেকে আয় বাড়লেও অ্যান্টি ডাম্পিং ছাড়াও উৎপাদন ও বিক্রয়জনিত ব্যয় বৃদ্ধির কারণে লোকসানে পড়েছে কোম্পানিটি। উৎপাদন ব্যয়ের পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে চলতি হিসাব বছরে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছে রফতানিমুখী এ কোম্পানিটি। অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।

প্রসঙ্গত পাটজাত পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার তুরস্ক। দ্বিতীয় হচ্ছে ভারত। সেখানে প্রায় ২ লাখ টন পাট সুতা, বস্তা ও চট রফতানি হয়। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টন হচ্ছে পাটসুতা। বর্তমানে মানভেদে প্রতিটন পাটসুতার গড় রফতানি মূল্য ৮০০ থেকে ৯০০ ডলার। অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কের কারণে এই মূল্যের ওপর ১৫০ ডলার পর্যন্ত শুল্ক দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বাজার টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশি রফতানিকারকরা অ্যান্টি ডাম্পিং বাবদ এ শুল্ক পরিশোধ করছেন। ফলে ভারতের বাজারে পাটপণ্য রফতানি করে মুনাফা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতের গেজেট অনুযায়ী, বাংলাদেশি পাটপণ্য রফতানিতে আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে। ভারতীয় মুদ্রায় এই শুল্কের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। একই সঙ্গে নেপালের পাটপণ্য রফতানির ওপর বিভিন্ন হারে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে ভারত। তবে নেপালের পাটপণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কের হার বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads