• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

চলছে ফেনীতে ওভারপাস নির্মাণ

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

ফেনীতে ওভারপাস নির্মাণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক তিন দিন ধরে কার্যত অচল

  • সৌরভ পাটোয়ারী, ফেনী
  • প্রকাশিত ১৩ মে ২০১৮

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফতেহপুর রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণকাজ চলছে। এ নির্মাণকাজের রেশ ধরে ১৫ দিন ধরে মহাসড়কের ফতেহপুর অংশে নিয়মিত যানজট লেগে আছে। তবে বৃষ্টি ও খানাখন্দের কারণে তিন দিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা চলবে আরো দু-তিন দিন। আগামী ১৫ মে মঙ্গলবার যান চলাচলের জন্য ওভারপাস খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছে, ওভারপাস খুলে দেওয়া হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

সরেজমিন কথা বলে জানা গেছে, ফেনীর ফতেহপুর রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণকাজ চলমান থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ যানজট কোনো কোনো সময় ১০০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত হচ্ছে। আধা ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে সাত-আট ঘণ্টা। বুধবার রাত ১২টা থেকে সৃষ্ট এ যানজটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ যানজট ছাড়েনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে বসে থেকে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন যাত্রী ও চালকরা। চট্টগ্রামমুখী গাড়িগুলো কিছুটা ধীরগতিতে চললেও ঢাকামুখী কোনো গাড়িই চলছে না। সড়কে আটকা পড়ে আছে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ কয়েক শ গাড়ি।

এদিকে যানজট এড়াতে কিছু বাস ও ট্রাক মিরসরাইয়ের বারৈয়ারহাট-করেরহাট হয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার অতিরিক্ত রাস্তা অতিক্রম করে ফেনী শহরে প্রবেশ করলেও মহাসড়কে প্রবেশ করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন চালকরা। অন্যদিকে যানজট এড়াতে কুমিল্লা দিয়ে লাকসাম-সোনাইমুড়ী-চৌমুহনী হয়ে মাঝেমধ্যে কিছু যান চলাচল করলেও, সেই সড়কেও যানজট ছড়িয়ে পড়েছে।

তারা বলছেন, সীতাকুণ্ড এলাকায় উল্টোপথে যান চলাচল করায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। মহাসড়কের ফেনী অংশ পার হতে সময় লাগছে সাত থেকে আট ঘণ্টা। অথচ স্বাভাবিক সময়ে এ রাস্তাটুকু পার হতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট।

হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ফেনীর ফতেহপুর এলাকার লেভেলক্রসিংয়ের ওভারপাস নির্মাণকাজের জন্য এ যানজট। তবে, যাত্রী ও গাড়িচালকদের অভিযোগ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফেনী পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে এ ভোগান্তি আরো বেড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্যামলী পরিবহনের চালক অভিযোগ করে বলেন, ‘যানজট নিয়ন্ত্রণের নামে পুলিশ চাঁদাবাজি করছে। এ যানজট কখন থেকে শুরু হয়েছে, তা বলতে পারব না। আমি মীরসরাই সদরে ভোর ৪টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত আছি। গাড়ি একচুলও এগোয়নি।’ এস আলম পরিবহনের যাত্রী চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, রাত ৯টায় ফকিরাপুল থেকে গাড়ি ছেড়েছে। সকাল ১০টা বাজে, এখনো চট্টগ্রামে পৌঁছাতে পারিনি।

মহাসড়ক ব্যবহারকারী ও স্থানীয়রা জানান, ফতেহপুর রেলওয়ে ওভারপাসের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে পুরো এক কিলোমিটার সড়ক। মহিপাল ছয় লেনের ফ্লাইওভার ও চার লেন সড়কের গাড়িগুলো ফতেহপুর গিয়ে এক লেন হয়ে যাওয়ায় মহাসড়কের উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের চট্টগ্রামের কুমিরা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত শতাধিক কিলোমিটার যানজটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রী ও চালকরা।

কভার্ডভ্যানের চালক রমজান আলী জানান, শুকনো মরিচ নিয়ে তিনি চট্টগ্রামের চকোরিয়া থেকে ফেনী আসতে সময় লেগেছে তিন দিন। পথে বোতলজাত পানি, কলা ও পা রুটি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেছি।

সি ল্যান্ড বাসের যাত্রী মাহমুদুল হক জানান, ঢাকা-ফেনী দূরত্ব তিন ঘণ্টা হলেও, যানজটের কারণে এখন ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা লাগছে। এ অসহ্য যন্ত্রণার কাহিনী বর্ণনা করার মতো নয়।

ফেনী সদর থানার ইনচার্জ রাশেদ খান জানান, দুর্ভোগ লাগবে আমরা রাতে শুকনো খাবার ও পানি বিলি করেছি। আশা করছি আগামী ১৫ মে থেকে যানজট কমবে। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

ফেনীর প্যানেল মেয়র স্বপন মিয়াজী সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সংসদ সদস্য নিজামউদ্দিন হাজারীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, নির্মাণাধীন রেল ওভারপাসের একটি অংশ আগামী ১৫ মে উন্মুক্ত করা হবে।

মহাসড়কে চাঁদাবাজি হচ্ছে না দাবি করে ফেনীর মহিপাল হাইওয়ে থানার ওসি মো. আবদুল আউয়াল বলেন, ‘ফেনীর রেলগেট এলাকায় মধ্যরাত হলেই রাস্তায় যানজট শুরু হয়। সেখানে রাস্তায় উন্নয়নকাজ চলায় রাস্তা একমুখী করা হয়েছে। রাতে মালবাহী ট্রাকের চাপ পড়লেই এ যানজট তীব্র হয়।’

এদিকে চট্টগ্রামের বার আউলিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আহসান হাবিব বলেন, ‘লরি ও ট্রাকচালকরা যানজটের জন্য অনেকাংশে দায়ী। যানজট দেখলেই রাস্তার পাশে গাড়ি ফেলে সরে পড়েন চালক, এতে রাস্তা সঙ্কুচিত হয়ে যানজট তীব্রতা পাচ্ছে। উল্টোপথে গাড়ি চালানোও যানজটের একটি বড় কারণ।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads