• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
আরো ২৫ দিনের কষ্ট!

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

আরো ২৫ দিনের কষ্ট!

  • চট্টগ্রাম ব্যুরো
  • প্রকাশিত ১৪ মে ২০১৮

ফেনীর মহিপালে রেল ওভারপাস নির্মাণকাজের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেশ কিছুদিন ধরে চলে আসা দুঃসহ যানজট আর দুর্ভোগ আরো কমপক্ষে ২৫ দিনের জন্য বাড়ছে। রোববার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিষয়টি জানিয়েছেন। এদিকে চলমান যানজটের নিরসন চেয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আজ সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাস না চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। একই সঙ্গে যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। রোববার দুপুরে আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাস মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এতে সমর্থন জানিয়েছে আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, আগামী ২৫ দিনের মধ্যে ফেনীতে ওভারপাস নির্মাণের কাজ শেষ হবে। কয়েক দিন তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। আগামীকাল মঙ্গলবার যান চলাচলের জন্য ফেনীর ফতেপুর এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস খুলে দেওয়া ও এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘এই রেল ওভারপাসের দুটি লেন রয়েছে। একটি পার্ট ১৫ মে উদ্বোধন হবে। এতে যানজট ও ভোগান্তি রিডিউসড হয়ে যাবে। সেনাবাহিনী আমাদের কথা দিয়েছে, এই ঈদের আগে রোজার মধ্যে কাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে। আগামী ২৪/২৫ দিনের মধ্যে তারা পুরো কাজটি শেষ করবেন।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীতে রেল ওভারপাস নির্মাণকাজের কারণে সেখানে একটি সরু রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে, যা মহাসড়কে চলাচলরত শত শত যানবাহনের জন্য একেবারেই অপর্যাপ্ত। এ কারণে কয়েকদিন ধরে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পর্যন্ত ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়ছেন হাজার হাজার যাত্রী। ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টা পর্যন্ত যানজটে আটকে থাকছে গাড়ি। চালক, হেলপার ও যাত্রীদের পানাহার এবং শৌচাগারের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি টানা বৃষ্টি ও খানাখন্দের কারণে মহাসড়কটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

ফেনী রেলওয়ে ওভারপাস প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, বছরের মার্চে সেনাবাহিনী ওভারপাস নির্মাণের তদারকির দায়িত্ব নেয়। সম্প্রতি বিরূপ আবহাওয়া ও অন্যান্য কারণে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি। যানজট নিরসনের ব্যাপারে কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের এসপি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হাইওয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ যানজট সরাতে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’ তবে তাদের এই প্রচেষ্টা খুব একটা কাজে দিচ্ছে না।

কয়েকদিনে এই মহাসড়কের যানজট ফেনীর ফতেপুর ছাড়িয়ে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে গিয়ে ঠেকেছে। পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার রাস্তা পেরুতে লাগছে ১৫-১৭ ঘণ্টা। যানজটের কারণে গন্তব্যের পথ পরিবর্তন করে উল্টোপথে ফিরে আসার ঘটনাও ঘটছে। আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন বলেন, ‘এ ধরনের যানজট চলতে থাকলে তা আগামী রোজা ও ঈদে আরো চরম আকার ধারণ করবে।’

আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন ট্রাক ও কভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম আসতে আমার ১৪ ঘণ্টা লেগেছে। তাও ঘুরপথে অলিগলি দিয়ে।’ চট্টগ্রাম পরিবহন ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতা নুরুল আবছার বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন। যেকোনো মূল্যে এ মহাসড়কের যানজট নিরসন করতে হবে।’

চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মৃণাল চৌধুরী রোববার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘চারদিন ধরে মহাসড়কে যে ভয়াবহ যানজট চলছে তাতে সেখানে গাড়ি চালানোর অবস্থা নেই। আমি আগেই দাবি জানিয়েছিলাম, ফেনীর ফতেপুরে নির্মাণাধীন ওভারপাসের পাশে দুটি পৃথক বিকল্প সড়ক তৈরি করে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করার। একই সঙ্গে টোল প্লাজাগুলোয় পণ্যবাহী ও অন্যান্য যানবাহন একই সিরিয়ালে না রেখে আলাদাভাবে টোল নেওয়ার দাবিও জানিয়েছিলাম আমরা।’

যানজট নিরসনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয় ২০০৬ সালে। নানা কারণে মাঠপর্যায়ে কাজ পিছিয়ে পড়ায় ২০১৬ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। অপরদিকে মহাসড়কটির ফেনী রেলক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। শিপু বিপিএল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়। প্রতিষ্ঠানটি তিন বছরে মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ শেষ করায় আল আমিন কনস্ট্রাকশন নামে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকল্পের কাজের তদারকি করছে।

অভিযোগ রয়েছে, ওভারপাস নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনায় যানজট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি যানজটের কারণ চিহ্নিত করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সওজ অধিদফতরকে যেসব নির্দেশনা দিয়েছিল সেগুলোও মানা হয়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads