• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ঈদযাত্রায় এবারো সড়কপথে ভোগান্তির শঙ্কা

আসন্ন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েছে

সংরক্ষিত ছবি

যোগাযোগ

ঈদযাত্রায় এবারো সড়কপথে ভোগান্তির শঙ্কা

সড়কপথে ঢাকা ছাড়বে ৬০ লাখ মানুষ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০১ জুন ২০১৮

ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের প্রতিবারের মতো এ বছরও সড়কপথে দীর্ঘ যানজট আর দুর্ভোগে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। মহাসড়কে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ, ৪০ শতাংশ সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশাসহ কয়েকটি কারণে এ আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঈদযাত্রায় সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর আশ্বাসেও ঠিক ভরসা মিলছে না। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে, ভাঙাচোরা সড়ক, দীর্ঘ যানজটের কারণে এবারো ঈদে মহাসড়কে দুর্ভোগে পড়তে হবে ঘরমুখো যাত্রীকে। ওই সময় বৃষ্টি হলে মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসড়কের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়কের। আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হলেও সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগ (এইচডিএম) বলছে, এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়ক ও জেলা সড়কের এক-চতুর্থাংশই ভাঙাচোরা। সংস্থাটির সাম্প্রতিক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি গত বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সড়ক-মহাসড়কের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে। ‘ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ : নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় বলা হয়, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলমান থাকায় প্রায় সময় যানজট হচ্ছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রবেশপথ যানজটমুক্ত করতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চার লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলছে। এতে ওই মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হলেও এ মহাসড়কের সুফল আটকে গেছে কাঁচপুর এবং মেঘনা ও গোমতী সেতু ও টোলঘরে। সম্প্রতি এ চিত্র ফেনীর ফতেহপুরে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক রাজধানী ঢাকার সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার সড়ক যোগাযোগের মাধ্যম। গোলড়া বাসস্ট্যান্ড ও সবজির পাইকারি বাজার, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, বানিয়াজুড়ি বাসস্ট্যান্ড, উথুলি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানবাহন এলোপাতাড়ি রাখায় যানবাহনের জট লেগে যায়।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের শেখ জামাল সেতু থেকে কলাপাড়ার পাখিমারা বাজার পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়ক অত্যন্ত নাজুক। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পটিয়া, শান্তিরহাট, দোহাজারী, কেরানিহাট, চকরিয়া মেইন রোড এলাকায় সরু রাস্তায় তীব্র যানজটের পাশাপাশি চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।

তাছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শেষ হলেও সুফল আটকে দিয়েছে অবৈধ পার্কিং ও বাজার। এদিকে পাবনা-নগরবাড়ী মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বিটুমিন ও পাথর উঠে গেছে। সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা থেকে গাইবান্ধার রহবল পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটারের ২৫ কিলোমিটার অংশ খানাখন্দে ভরা। বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের নন্দীগ্রামের জমাদারপুকুর থেকে গাড়িদহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) জরিপে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর মহাসড়কগুলোর অবস্থা কিছুটা উন্নত হয়েছে। তবুও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তা যথেষ্ট নয়।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেও সড়কের এই উন্নতিতে সন্তুষ্ট নন। গত মঙ্গলবার দুপুরে মন্ত্রী নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘দেশের সর্বত্র সড়ক-মহাসড়কগুলোর যে চিত্র, তাতে আমি মন্ত্রী হিসেবে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। সারা দেশের সড়ক ও মহাসড়কের জরুরি মেরামত কাজ আগামী ৮ জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে দেশে সড়ক ব্যবস্থাপনা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক ভালো।’

এর একদিন আগে গত সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা জানিয়ে ঈদযাত্রায় স্বস্তির আশ্বাস দেন। ওইদিন ওবায়দুল কাদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী রেলওয়ে ওভারপাসের দু’লেন ইতোমধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে এখন আর যানজট হচ্ছে না। ১৫ জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হবে।

এদিকে বাংলাদেশের খবরের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন সড়কের বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মির্জাপুর বাইপাস সড়কের একটি অংশে খানাখন্দের কারণে গাড়ির গতি কমে যায়। মহাসড়কের শুভুল্লা, আকলিমতলা, পাকুল্লা, জামুর্কি, আমলাপাড়া এবং করাতিপাড়ায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব সেতুর কাছে এসে যানবাহনের গতি কমে যায়। টাঙ্গাইল বাইপাস থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত সড়কে কাজ চলার পাশাপাশি এ অংশেও কয়েকটি সেতু নির্মাণাধীন। এছাড়া পুরনো সেতুগুলোর অ্যাপ্রোচ রোড ভাঙা। তাই যানবাহন চলে ধীরে। এলেঙ্গা বাজার অংশেও যানবাহন ধীরে চলে। সব মিলিয়ে ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ রুটে চলাচলরত কয়েকটি দূরপাল্লার বাসের চালক।

অপরদিকে সওজ সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির আওতায় সারা দেশে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়ক ক্যাটাগরিতে ২১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। আসন্ন ঈদ ও নতুন অর্থবছর উপলক্ষে পুরো সড়কের ১৭ হাজার ৯৭৬ দশমিক তিন কিলোমিটারের ওপর জরিপ করেছে সংস্থাটি।

তিন হাজার ৮২১ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কের মধ্যে এইচডিএম জরিপ করেছে তিন হাজার ৭৬০ দশমিক ৮ কিলোমিটারের ওপর। এর মধ্যে দুই হাজার ১৪৮ দশমিক ৬ কিলোমিটার মহাসড়ক ভালো, ৮১৩ কিলোমিটার মহাসড়ক মোটামুটি, ৩৭৬ দশমিক ১ কিলোমিটার মহাসড়ক দুর্বল, ১৮৩ দশমিক ২ কিলোমিটার মহাসড়ক খারাপ এবং ২৩৯ দশমিক ৯ কিলোমিটার মহাসড়কের অবস্থা খুব খারাপ।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদযাত্রায় প্রতিবছর প্রায় এক কোটি ১৫ লাখ মানুষ রাজধানী ছেড়ে যান। এর মধ্যে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ যান সড়কপথে। কিন্তু ওই সময় যে পরিমাণ যাত্রীর চাপ থাকে, সে পরিমাণ পরিবহন নেই। এর সঙ্গে সড়কের দুরবস্থার কারণে যানজট আরো দীর্ঘ হয়। তিনি আরো বলেন, এ বছরও বিভিন্ন স্থানে সড়কের দুরবস্থার খবর পাচ্ছি। অতি দ্রুত এর মেরামত করা না হলে ঈদযাত্রায় মানুষের আনন্দ মলিন হয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, সারা দেশে সড়কের অবস্থা খারাপ। আসন্ন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় যদি এখনই ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে মানুষের ঈদ আনন্দ মাটি হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads