• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
সকালের পানি সরেনি বিকালেও

ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় গতকাল সকালের বৃষ্টিতে বাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জমে হাঁটুপানি। মিরপুরের কাজীপাড়া সড়কে চলে নৌকা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

সকালের পানি সরেনি বিকালেও

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ০১ জুন ২০১৮

মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি মানেই রাজধানীজুড়ে চরম জলাবদ্ধতা। এমন চিত্র এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৈশাখের শুরু থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশেই এ বছর আগাম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মাত্র তিন ঘণ্টাতেই রাজধানীতে ঝরেছে ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি, যা এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। ভারী এই বৃষ্টিতে রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। সকাল ৯টার পর আর বৃষ্টি না হলেও অনেক জায়গায় বিকাল ৪টা পর্যন্ত পানি জমে থাকতে দেখা যায়। তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতেই রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় দেখা যায় হাঁটুসমান পানি। আর কোথাও তা ছাড়িয়েছে কোমরের সীমানা। মোটরযান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়া কাজীপাড়া এলাকায় রাস্তায় নৌকা চলতেও দেখা যায়। ভারী বর্ষণে পানি জমেছে মগবাজার ফ্লাইওভারের উপরও। ফ্লাইওভারের জলনিষ্কাশন পাইপের মুখ আটকা থাকায় এবং নিচেও পানি সরার ব্যবস্থা অকার্যকর থাকায় এমন জলাবদ্ধতা দেখা যায়।

এমন বৃষ্টিতে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসের শুরুতেই নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। সকালের আকস্মিক এই বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে অফিসগামী মানুষকে। ঘর থেকে বের হয়েই পড়তে হয়েছে বৃষ্টির কবলে। আর বৃষ্টি থামলেও থেমে থাকেনি ভোগান্তি। জলাবদ্ধতার কারণে সকাল থেকেই অধিকাংশ সড়কে ছিল পরিবহন সঙ্কট।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালের বৃষ্টিতে রাজধানীর মিরপুর, শ্যামলী, পল্লবী, তালতলা, মোহাম্মদপুর এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। মিরপুর এলাকা রূপ নেয় বদ্ধ জলাশয়ে। মিরপুর ১০ নম্বর এলাকা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রোকেয়া সরণি পরিণত হয়েছিল ঢেউ তোলা নদীতে। পুরো সড়কে জমে ছিল হাঁটু অবধি পানি, যা কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা এলাকায় কোমর পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। এই সড়ক ও এর আশপাশের অলিগলিতে বিকাল ৪টা পর্যন্তও পানি জমে থাকতে দেখা যায়। একই চিত্র ছিল জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে পোস্ট অফিস পর্যন্ত। রাস্তা ফুটপাথ ছাপিয়ে এই সড়কের পানি প্রবেশ করে আশপাশের ভবনগুলোর নিচতলায়। পানিতে তলিয়ে যায় দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ থেকে ঢাকা উদ্যান পর্যন্ত রাস্তাটিতেও জমে হাঁটুসমান পানি। জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে কালশী, উত্তরা জসীম উদ্দীন মোড়, মহাখালী থেকে সৈনিক ক্লাব, চেয়ারম্যান বাড়ি হয়ে বনানী কাকলী পর্যন্ত সড়কেও। এক থেকে দেড় ফুট পানি জমে যায় বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিতে। বিকালেও সরেনি ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, ইসিবি চত্বর, কালশী, মিরপুর-১, ২, ১০, ১১, ১২ নম্বর এলাকার জমে থাকা পানি।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর, শুক্রাবাদ, সোবহানবাগ, শঙ্কর, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, জুরাইন, মতিঝিল, দিলকুশা, আরামবাগ, মানিকনগর, দৈনিক বাংলা মোড় এলাকায় জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে।

বঙ্গভবন এলাকা থেকে গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে হাঁটুসমান পানি জমে গতকালের বৃষ্টিতে, যা বিকাল ৫টা নাগাদও জমে থাকতে দেখা যায়।

কচুক্ষেত এলাকার নিবাসী প্রকৌশলী আল আমিন মিশু বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বাসা থেকে ধানমণ্ডি অফিস পর্যন্ত যেতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। রাস্তায় পানি জমে থাকায় ব্যক্তিগত মোটরবাইক নিয়ে বের হতে পারিনি। কিন্তু রাস্তায় বের হয়ে দেখি হাঁটুসমান পানি জমে আছে। ভ্যানে করে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাওয়ার পর সেখান থেকে বাসে চড়ি। বিকালে বাসায় ফেরার সময়ও দেখি একই অবস্থা।

এদিকে কাজীপাড়া এলাকায় ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করায় বাসসহ বেশ কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা বন্ধ হয়ে আটকা পড়ে। এতে ওই সড়কে জলজটের পাশাপাশি সৃষ্টি হয় যানজটও।

সকালে অধিকাংশ অফিসমুখী নগরবাসীকে ভ্যান, রিকশায় করে চলাচল করতে দেখা যায়। জলাবদ্ধতা ও পরিবহন সঙ্কটের কারণে মিরপুর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রিকশা ভ্যান ছাড়া অন্য কোনো পরিবহন ছিল না বললেই চলে। মানুষের এমন ভোগান্তিকে পুঁজি করে বেড়ে যায় রিকশা ভাড়াও।

এদিকে মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভ্যান রিকশার পাশাপাশি নৌকা চলতেও দেখা যায়। জনপ্রতি ৫০ টাকা করে যাত্রী পারাপার করেছে তারা।

তবে জলাবদ্ধতা ও তা নিরসনের বিষয়ে কোনো উত্তর নেই দুই সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসার কর্তাদের মুখে। উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহুল ইসলাম জানান, আগাম বৃষ্টির কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে বেশকিছু কাজ চলমান রয়েছে, তবে তা আকস্মিক বৃষ্টির কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ওয়াসার পক্ষ থেকে আগেই আমরা জানিয়েছিলাম, রাজধানীতে মুষলধারে দুই-তিন ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই বড় ধরনের জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এমন স্বীকারোক্তি আমাদের অপারগতা হিসেবে দেখছি না। আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনে বেশকিছু কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। গত বছর যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা বেশি ছিল সেসব এলাকায় এখন পর্যন্ত তেমন জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি। মতিঝিল আরামবাগ এলাকায় গত বছর কোমর পানি জমেছে। এ বছর ওইসব এলাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে, কিন্তু পানি বেশিক্ষণ জমে থাকছে না।

এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, বৃষ্টির এমন প্রবণতা থাকতে পারে রোববার পর্যন্ত। পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads