• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
মালিক সমিতির নির্দেশেই বাস চলাচল বন্ধ

রাজধানীতে ৮ম দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসকামি যাত্রিরা। ছবিটি রবিবার সকাল আটটায় রাজধানীর ফার্মগেট থেকে তোলা

ছবি : তানভীর আহমেদ ছিদ্দিকী

যোগাযোগ

মালিক সমিতির নির্দেশেই বাস চলাচল বন্ধ

ঢাকাসহ সারা দেশে নজিরবিহীন দুর্ভোগ

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ০৫ আগস্ট ২০১৮

নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মাঝে যান চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। নিরাপত্তার অজুহাতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো চলেছে এই অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট। গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালিক সমিতির নির্দেশেই বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লাসহ রাজধানীর গণপরিবহন। মালিক-শ্রমিকদের এই কর্মসূচির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে জনগণকে।

রাজধানী থেকে গত শুক্র ও শনিবার দিনে কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। নৈশকোচও বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে গতকাল। শুক্রবার রাতে কিছু নৈশ পরিবহন চলাচল করে। একই চিত্র দেশের অন্যান্য জেলায়ও। রাজধানীর সঙ্গে বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ বন্ধ থাকার পাশাপাশি অন্যান্য জেলারও আন্তঃবাস সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল শনিবার হানিফ এন্টারপ্রাইজের প্রধান কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তকর্তা শেখ সাইদুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘মালিক সমিতির নির্দেশে শুক্রবার থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কবে থেকে বাস চলাচল শুরু হবে বলতে পারি না।’

অঘোষিত ধর্মঘট চলায় রাজধানীর গাবতলী, শ্যামলী, কল্যাণপুর, কলাবাগান কাউন্টারগুলোয় এসে অনেক যাত্রীকেই ফিরে যেতে হয়েছে। ঢাকা থেকে দিনাজপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে মতিঝিলের কাউন্টারে গিয়ে বিপাকে পড়েন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মেহেরুল্লাহ মিঠু। নতুন করে নৈশকোচ বন্ধ রাখার ঘোষণায় এমন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, ‘দিনে কোনো গাড়ি ছাড়ছে না বা নাও ছাড়তে পারে সেজন্য রাতের গাড়িতে যাওয়ার জন্য কাউন্টারে আসি। কিন্তু সবগুলো কাউন্টার থেকেই বলছে নাইটকোচও বন্ধ আছে। এই মুহূর্তে ট্রেনের টিকেটও পাওয়া যাবে না।’

বিপাকে পড়তে হয়েছে ব্যবসায়ী ইব্রাহিম কবিরকেও। রাজবাড়ী যাওয়ার উদ্দেশ্যে কল্যাণপুর কাউন্টারে গিয়ে নৈশকোচ বন্ধের বিষয়টি তিনি

 

 

মালিক সমিতির নির্দেশেই বাস চলাচল বন্ধ

 

 

 

জানতে পারেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা তো গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়নি। তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ির শৃঙ্খলা আনতে চেষ্টা করছে। আর এই অজুহাতে মালিক-শ্রমিকরা বাস বন্ধ করে দিয়ে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলেছে।’

আন্তঃজেলা বাস সার্ভিস বন্ধ থাকায় রাজধানীর গুলিস্তানে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় হাজার হাজার যাত্রীকে। নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের মতো ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর যাত্রীরা বাস না পেয়ে চড়ছেন পিকআপ ভ্যান ও মাইক্রোবাসে। এতে তাদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শনিবারও চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে। গত শুক্রবার দু-একটা বাস চললেও শনিবার সকাল থেকে অভ্যন্তরীণ কোনো রুটেই চলেনি বাস। সকাল ৯টা মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের নির্দেশেই বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। চলছে না সরকারি গণপরিবহন বিআরটিসির বাস সার্ভিসও। সারি সারি বাস পার্ক করে রেখে অলস সময় পার করতে দেখা যায় চালক-হেল্পারদের।

মোহাম্মদপুর-খিলগাঁও রুটের মিডলাইন পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তায় ছাত্ররা বাস আটকে দিচ্ছে, ভাঙচুর করছে, ড্রাইভার, হেল্পারকে মারধর করছে। তাই মালিকদের নির্দেশেই গাড়ি বন্ধ রাখা হয়েছে।’

তবে গণপরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবির সঙ্গে একমত নন সাধারণ মানুষ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মোহাম্মদপুর আল্লাহ করীম জামে মসজিদের সামনে ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, কোনো বাস আটকে দেওয়া হচ্ছে না। কাউকে মারধর করা হচ্ছে না। দেখা হচ্ছে, ড্রাইভারের লাইসেন্স আছে কি না। রিকশা, প্রাইভেটকার, মোটরবাইক আলাদা আলাদা সারিতে চলতে বলছি।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নগরবাসী ভোগান্তিতে পড়ছে না বরং পরিবহন মালিক-শ্রমিকরাই ভোগান্তিতে ফেলছে এমন অভিযোগ মোহাম্মদপুর নূরজাহান রোডের বাসিন্দা সৈয়দ আশিকুর রহমানের। তিনি বলেন, ‘রুটগুলোয় এলোমেলো গাড়ি চলাচল, যত্রতত্র পার্কিংয়ের জন্য দীর্ঘ যানজট লেগে যেত। কিন্তু এখন ছাত্ররা ট্রাফিক পুলিশের কাজ করছে। কিছু কিছু রোডে গাড়ি ধীরে চলছে কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকছে না।’

বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফর বেটার বাংলাদেশের গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ মারুফ আহমেদ বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন শিক্ষার্থীরা করছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। প্রথমদিকে তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিল। কিন্তু এখন স্বেচ্ছাসেবীদের মতো যে কাজ তারা করছে, এতে ভোগান্তি কমেছে। কিন্তু কিছু অসাধু গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা অঘোষিত ধর্মঘট ডেকে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলছে। তাদের উদ্দেশ্য জনগণকে এটা দেখানো যে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জন্যই এমনটা হচ্ছে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads