• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
সুহিলপুর-রামপুর সড়কের বেহাল দশা ভোগান্তিতে ২০ হাজার মানুষ

ক্যাপশন : চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে সুহিলপুর বাজার টু রামপুর বাজার গ্রামীন সংযোগ সড়কের প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশে খানা-খন্দ, জলাবদ্ধতা ও কাদা মাড়িয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে হয়।

ছবি -বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

সুহিলপুর-রামপুর সড়কের বেহাল দশা ভোগান্তিতে ২০ হাজার মানুষ

  • মো. মহিউদ্দিন আল আজাদ
  • প্রকাশিত ০৬ আগস্ট ২০১৮

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের সুহিলপুর বাজার থেকে রামপুর বাজার গ্রামীন সংযোগ সড়কের প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশের বেহাল দশায় তিন গ্রামের মানুষসহ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর ভোগান্তি চরমে। উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়ন ও ৪নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়ন সংযোগ এই সড়কের সুহিলপুর গ্রাম থেকে শাহপুর পর্যন্ত যানবাহন চলাতো দূরের কথা পায়ে হেঁটে চলাও কষ্টকর। বিশেষ করে টানা বৃষ্টি ও ভারী বর্ষণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এ দূর্ভোগ নিত্য সঙ্গী। টানা ও ভারী বর্ষণে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার পথচারী, শিক্ষার্থী ও ছোট ছোট যানবাহন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। তবে সবচেয়ে বেশী দূভোর্গ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থী, রোগী ও গর্ভবতী মা, বোনদের। সড়কটি কাচাঁ, খানা-খন্দে কদমাক্ত ও জলাবদ্ধতা এবং কয়েকটি স্থানে সরু হওয়ায় এ্যম্বুলেন্সসহ ছোট যানবাহন চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্ভর এ এলাকায় স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও সুহিলপুর গ্রাম থেকে শাহপুর পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তার কোন কাজ হয়নি বলে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ, এলজিইডি রাস্তার কথা বলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও কোন কাজ করা হয়না। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে নিজস্ব উদ্যোগে স্থানীয়রা কিছু ইট, বালু ও মাটি দিয়ে খানা-খন্দ ভরাট করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।

সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, সুহিলবাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্ভর এলাকা। এখানে সুহিলপুর এবিএস ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা, সুহিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়, সুহিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুহিলপুর হাফেজীয়া ও এতিমখানা মাদ্রাসা, খাকবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সুহিলপুর বাজারে আসার জন্য শাহপুর, বাউড়া পশ্চিম পাড়া, সুহিলপুর পশ্চিম পাড়া, সুহিলপুর মধ্য পাড়া, খাকবাড়িয়া পশ্চিম পাড়া, খাকবাড়িয়া মধ্য পাড়া, সুহিলপুর পূর্ব পাড়া গ্রামের প্রায় সহ¯্রাধীক শিক্ষার্থী ও প্রায় ২০ হাজার এলাকাবাসী সুহিলপুর বাজার টু রামপুর বাজার সড়কটির উপর নির্ভরশীল। বর্ষা মৌসুমে টানা ও ভারি বৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার পথচারী, শিক্ষার্থী ও ছোট ছোট যানবাহন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির তিন কিলোমিটার কাচাঁ অংশের দীর্ঘদিন কোন ধরণের কাজ না হওয়ায় ১২ ফুট প্রশস্তের এ সড়কটির কোন কোন অংশে মাত্র ৩/৪ ফুটে গিয়ে ঠেকেছে। বিশেষ করে সুহিলপুর হাওলাদার বাড়ী, সরকার বাড়ী, মাস্টার বাড়ির সামনে রাস্তাটি এতটাই সরু হয়েছে যে এখানে রিক্সা ছাড়া অন্য যানবাহন চলাচলে অযোগ্য। টানা ও ভারী বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানা-খন্দে পানি জমে কদমাক্ত হয়ে পড়েছে। সড়কের পাশর্^বর্তী পুকুর ও খাল পাড়ে প্যালাসেটিং না থাকায় বিভিন্ন স্থানে সড়কটি দিন দিন সরু হয়ে পড়ছে।

দীর্ঘদিন রাস্তাটি পাকাকরণ ও সংস্কার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সুহিলপুর বেপারী বাড়ির মৃত ওমর আলী পন্ডিতের ছেলে সত্তোরর্ধ্ব মো. আব্দুল হাই বলেন, পাকাকরণ-তো দূরের কথা, আজ পর্যন্ত সড়টির এ অংশে কোন কাজ হয়নি। জানিনা মৃত্যুর আগে রাস্তাটি পাকাকরণ দেখবো কিনা। আমরা যারা বয়স্ক আছি, তারা এবং ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বর্ষাকালে চলতে পারিনা।

হাওলাদার বাড়ির মৃত আমিন মিয়ার ছেলে মো. ফারুক হোসেন (৪৮) জানান, রাস্তাটি পাকাকরণ ও সংস্কারের জন্য কতবার ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছি, তার কোন হিসাব নেই। উপজেলায় পর্যন্ত গিয়েছি, সেখানেও আশার বাণী বলতে কিছুই শুনিনি।

সুহিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার ও সোহরাব হোসেন, নবম শ্রেনীর রহিমা আক্তার, অষ্টম শ্রেনীর শান্তা, সপ্তম শ্রেনীর মেহেদী হাসান এবং সুহিলপুর এবিএস ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার আলিমের শিক্ষার্থী জিহাদ ও দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী তানজিনার সাথে কথা হলে তারা জানান, বৃষ্টি হলে রাস্তায় খানা-খন্দ, পানি-কাদা মাড়িয়ে স্কুলে/মাদ্রাসায় যেতে হয়। প্রতিনিয়ত কোন না কোন শিক্ষার্থী পা পিছলে দূর্ঘটনার শিকার হয়। আর টানা ও ভারি বৃষ্টি হলে আমাদের স্কুল/মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

সুহিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন টিটু বলেন, এই রাস্তা দিয়ে আমার প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী স্কুলে আসে। বর্ষায় রাস্তাটি ব্যবহারে অনুপযোগি হয়ে পড়ে। তাই রাস্তাটি জরুরি ভিত্তিতে পাকাকরণ প্রয়োজন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ সফিকুল ইসলাম মীরের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, রাস্তাটি এলজিইডি’র। উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, তারা কাজটি করবে। গত বছর ১ কিলোমিটার পাকাকরণের বরাদ্দ হয়েছিলো। কি কারনে বরাদ্দটি বাতিল হয়েছে, তা আমি জানিনা।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু রাস্তাটি জনগুরুত্বপূর্ণ, সেহেতু ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে রাস্তাটি পাকাকরণের উপযোগি করে দেয়া হবে। প্রয়োজনে রাস্তার পাশে খাল ও পুকুর পাড়ে প্যালাসেটিং করা হবে।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. আজিজুল হক জানান, প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায় রাস্তাটি পাকাকরণ হয়নি। নতুন তালিকায় পাকাকরণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলজিইডি’র রাস্তা হলেও জনস্বার্থে ইউনিয়ন পরিষদ সংস্কার কাজ করতে পারে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়–য়া বলেন, রাস্তাটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তিনি তাৎখনিক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বিষয়টি দেখার নির্দেশনা প্রদান করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads