• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
আন্দোলনের পর বিআরটিএ’র চিত্র

বিআরটিএতে প্রবেশের জন্য বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ির লাইন

ছবি : সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

আন্দোলনের পর বিআরটিএ’র চিত্র

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৯ আগস্ট ২০১৮

বাংলাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন ছিল, তা শেষ হওয়ার পর ঢাকা এরই মধ্যে অনেকটা আগের রূপে ফিরে এসেছে। সড়কে অব্যবস্থাপনা ঠেকাতে শুরু করা হয়েছে ট্রাফিক সপ্তাহ। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় কিংবা রাস্তার মোড়ে মোটরসাইকেল ও গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করছেন দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই রোববার শুরু হয় ট্রাফিক সপ্তাহ এবং এরপর থেকে দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে (বিআরটিএ) বেড়ে গেছে বিভিন্ন ধরনের গাড়ির ভিড়। বিআরটিএ বাংলাদেশে যানবাহনের লাইসেন্স দেয়া সহ বেশ কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক কাজ করে।

বুধবার দুপুরের দিকে বিআরটিএ’র মিরপুর কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা গেল বাস, প্রাইভেট কার, জিপসহ বিভিন্ন গাড়ির দীর্ঘ লাইন। দুটো গেটের সামনেই দেখা যায় বিআরটিএ’র কর্মকর্তা ও পুলিশের উপস্থিতি। গাড়িগুলো যেন শৃঙ্খলা বজায় রেখে এক গেট দিয়ে ঢুকতে পারে এবং বের হওয়ার সময়ও যাতে কেউ লাইন না ভাঙে, সেই চেষ্টাই করতে দেখা যায় কর্মকর্তাদের। কার্যালয়ের ভেতরেও ছিল মোটরসাইকেল ও গাড়িসহ মানুষের বিপুল সমাগম।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিআরটিএ'র একাধিক কর্মকর্তা জানান, কয়েকদিন ধরে যেসব গাড়ি এসে বিআরটিএতে ভিড় জমাচ্ছে তাদের বেশিরভাগই আসছে ফিটনেস ও লাইসেন্স সংক্রান্ত কাগজ ঠিক করাতে। আবার কেউ এসেছেন ডিজিটাল নম্বর প্লেট, ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন কার্ড করাতে, কেউবা এসেছেন লার্নার কার্ডের জন্য। তবে গাড়ির ফিটনেস ও লাইসেন্স এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত কাজ করাতেই এসেছেন বেশিরভাগ মানুষ। প্রতিটি বুথেই ছিল চোখে পড়ার মতো ভিড়। বিআরটিএ’র ভাষ্য অনুযায়ী, হঠাৎ করেই ভিড় বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গেইটের বাইরেও ছিল সুযোগসন্ধানীদের ভিড়। এরা দালাল যারা পয়সার বিনিময়ে দ্রুত কাজ করিয়ে দেয়।


‘ভিডিওতে কথা বলা যাবে না’

বিআরটিএ-এর কর্মকর্তাসহ যেসব সাধারণ মানুষ সেবা নিতে এসেছেন তাদের অনেকের সঙ্গে বিবিসি কথা বলতে চেয়েছে একটি ফেসবুক লাইভ করার জন্য। ‘ভিডিও হলে কথা বলা যাবে না’, এমন কথা বলে প্রায় সবাই সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে 'অফ দ্য রেকর্ড' অর্থাৎ নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই কথা বলেছেন। সদ্য লাইসেন্স নেয়া এক ভদ্রলোক যেমন বলছিলেন, "আপা কথা বলতেতো এখন ভয় লাগে, কিছু বলবো না, যদি ধরে নিয়ে যায়"।

কয়েকজন বলছিলেন, ‘বিআরটিএ-তে কোনো কাজ ঠিকভাবে করা যায় না, এখানে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। এজন্য এখানে দালালদের ধরে মানুষ’। বিভিন্ন বুথসহ ওই এলাকার আশেপাশের রাস্তাতেও ছিল বিআরটিএ’র সেবা প্রত্যাশীদের ভিড়। যে কয়েকজনের সাথে কথা বলতে পেরেছি তাদের মধ্যে কোম্পানির গাড়ির কাগজ ঠিক করতে আসা মানুষ ছিলেন। আবার কেউ হয়তো অফিসের কর্মকর্তা, কেউবা কোম্পানির ড্রাইভার। এতদিন কি তাহলে সঠিক কাগজপত্র ছাড়াই কোম্পানির গাড়ি চলেছে? - এমন প্রশ্নে হেসেছেন তারা। হেসেছেন বিআরটিএ-এর একজন পরিদর্শকও। সড়কে চলাচল করা বেশিরভাগ গাড়িরই যে ফিটনেস সনদ নেই বলে অভিযোগ রয়েছে, তাদের হাসিতে হয়তো তারই প্রমাণ মিললো আরো একবার।

সড়কে নামছে না ফিটনেসবিহীন গাড়ি

বাস মালিকেরা বলছেন, যেসব গাড়ির সঠিক কাগজ নেই সেগুলো তারা ঠিক করতে দিয়েছেন। আর শুধুমাত্র সেই সব গাড়িই রাস্তায় নেমেছে, যেগুলোর ফিটনেস সার্টিফিকেট রয়েছে। ঢাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর চলমান ট্রাফিক সপ্তাহে ফিটনেসবিহীন গাড়ি অথবা লাইসেন্সবিহীন চালকদের যেভাবে ধরা হচ্ছে, তাতে আসন্ন ঈদের সময় গাড়ির সংকট হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিআরটিএ কর্মকর্তারা অবশ্য মনে করেন এবার বাসের সংকট হতে পারে।

বিআরটিএ’র সড়ক নিরাপত্তা বিভাগ জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক আন্দোলনের পর পুলিশি তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিআরটিএ’র মোবাইল কোর্টের কার্যক্রমও বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিআরটিএ-তে হঠাৎ করে এত চাপ সামাল দেয়ার জন্য সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত অফিস খোলা রাখা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষও বলছে, তারা ঠিক সময়ে গাড়ির কাগজপত্র দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।

‘এই প্রবণতা কতদিন চলবে?’

ফিটনেস সনদ হয়ে গেলেও গাড়ির স্বাস্থ্য আসলেই ঠিকঠাক আছে কি-না বা আদৌ গাড়িগুলোর আয়ুষ্কাল আছে কি-না, তা অবশ্য সরেজমিনে পরীক্ষা করে দেখার মত সক্ষমতা বিআরটিএ-এর নেই বলেই জানা গেছে। সেখানকার লোকজন জানালেন, ফি জমা দিলে পরিদর্শক খালি চোখে দেখে গাড়ির সনদ দিয়ে দেন। অনেক সময় সব গাড়ির শুধু হুড একবার খুলে দেখারও সময় হয় না পরিদর্শকদের।

আর সেকারণে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন এসেই যাচ্ছে যে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট ও প্রফেশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স করানোর যে হিড়িক পড়েছে, তা হয়তো কিছুদিন পরেই আবার থেমে যাবে। যেমন তাহসীন আব্দুল্লাহ নামে একজন বলছিলেন, ‘চালকেরা এখন লাইসেন্স নেয়া শুরু করেছে, এটা ভালো। তবে প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক কতদিন চলবে এই প্রবণতা?’

সড়কে মৃত্যুর ঘটনা আমাদের দেশের নতুন কোনো চিত্র নয়, তবে সম্প্রতি ফুটপাতে দাড়িয়ে থাকা দুই শিক্ষার্থীর বাসের চাপায় মৃত্যুর ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে নাড়া দিয়েছে। ওই ঘটনার পর আবারো সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি সামনে চলে আসে । চালকদের লাইসেন্স না থাকা, লাইসেন্স তৈরির প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, অদক্ষ চালক, ট্রাফিক আইনের প্রয়োগে উদাসীনতা, বিপজ্জনক ড্রাইভিংয়ের উপযুক্ত শাস্তির বিধান না থাকা - এসব বিষয়গুলো নিয়েও প্রশ্ন জাগে জনমনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাইভেট গাড়ির একজন চালক যেমন বলছিলেন, ‘প্রশিক্ষণ ছাড়া যারা গাড়ি চালায়, লাইসেন্স ছাড়া যারা গাড়ি চালায়, তারাই উল্টাপাল্টা গাড়ি চালায়। তারাতো কিছুই জানে না। গাড়িরওতো কোনো ঠিক-ঠিকানা নাই - এজন্যই তো দুর্ঘটনা হয়।’

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে অনেকের মন্তব্য ছিল, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভালো হইছে। ভুয়া লাইসেন্সধারীদের এখন ধরতেছে’। তবে এখন বিআরটিএতে গাড়ির উপচে পড়া ভিড় দেখে মিরপুর এলাকারই অনেকে সন্দিহান এই কড়াকড়ি কতদিন থাকবে তা নিয়ে। একজন মন্তব্য করলেন, ‘গাড়ির সত্যিকারের কাগজ কতজন করাবে, আসলেই দক্ষ চালক হিসেবে লাইসেন্স দেয়া হবে কি-না, গাড়ির ফিটনেসের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কতদিন শক্ত থাকবে, সেটা হবে দেখার বিষয়’। তবে বুধবারে যে চিত্র দেখেছি, বৃহস্পতিবারে শেষ বেলা পর্যন্তও তা বজায় ছিল বলেই খবর পেয়েছি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads