• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
সুখবরের সঙ্গে আছে শঙ্কাও

আসন্ন ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষ সড়কপথে যানজটের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

সড়কপথে ঈদযাত্রা

সুখবরের সঙ্গে আছে শঙ্কাও

 বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ বাড়বে

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ১৭ আগস্ট ২০১৮

আসন্ন ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষ সড়কপথে বড় ধরনের দুর্ভোগ ছাড়া যাতায়াত করতে পারবে, এমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের কাজের অগ্রগতি এবং ২৩টি সেতু উদ্বোধন হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে নির্ঝঞ্ঝাট যাতায়াতের আশা জেগেছে। তবে ঢাকা থেকে মহাসড়কের চার লেন এলাকা পর্যন্ত পৌঁছানো এবং এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুতে উঠতে যানজটের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুয়েক জায়গায় ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই যানজট তৈরি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গোমতী সেতু অংশকে ঘিরে। সেখানে প্রতিদিন দীর্ঘ যানজট হচ্ছে। এ পথে কাঁচপুর সেতু ঘিরেও মাঝে মাঝে যানজট হয়। তাই ঈদের ছুটিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট বাড়ার আশঙ্কা থাকছে। অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে ফেরি চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় যাত্রা ও ফিরতি যাত্রার সময়সূচির বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। পদ্মার কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌপথে নাব্য সঙ্কটে ফেরি চলাচলে প্রায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পারাপারে সময় বেশি লাগছে। শরীয়তপুরের ইব্রাহীমপুর-চাঁদপুর হরিণাঘাট নৌপথে ফেরি সঙ্কট লেগেই আছে। মহাসড়কে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ও সড়কের পাশে পশুর হাটও দুর্ভোগের কারণ হতে পারে। বৃষ্টি হলে এ দুর্ভোগ অনেক গুণ বেড়ে যাবে।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষে বিশেষ কোচ সার্ভিস গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে চালু হওয়ায় সড়কে যানবাহনের চাপ আরো বেড়ে গেছে। ঈদুল আজহায় থাকে কোরবানির পশু বোঝাই ট্রাক। তাই ঈদুল ফিতরের তুলনায় এ সময় সড়কে যানবাহনের চাপ বেশি থাকে। বিভিন্ন জেলা থেকে বাংলাদেশের খবরের প্রতিনিধিরা জানান, রাজধানীর সঙ্গে জেলাগুলোর যোগাযোগের অধিকাংশ সড়কেই সৃষ্টি হয়েছে ছোটবড় গর্ত ও খানাখন্দ। কিছু কিছু সড়ক গত ঈদুল ফিতরের আগে সংস্কার করা হলেও তা আড়াই মাসের মধ্যেই যা-তা অবস্থা। তবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া মহাসড়কটির চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ অনেকটা শেষের পথে। ইতোমধ্যে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত ২৩টি সেতু, গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব সেতুর উদ্বোধন করেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের অন্যতম যানজটপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত মির্জাপুরের ধেরুয়া রেলক্রসিং এলাকায় নির্মাণাধীন উড়াল সেতুর একাংশ আগামীকাল শনিবার খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় আসন্ন ঈদযাত্রা যানজটমুক্ত হবে বলে আশা করছেন উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে চলাচলকারী বাসের চালকরা।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশের অধিকাংশ জায়গায় ছোটবড় খানাখন্দ, প্রশাসনের সমন্বয়হীন সংস্কার ও বিভিন্ন প্রকল্পের চলমান কাজে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি রয়েছে। থাকছে যানজট। ঈদযাত্রায় তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের সিনিয়র এএসপি সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে গাজীপুরের ভোগড়া এলাকার বর্ষা সিনেমা হলের পাশে, চৌধুরীবাড়ির সামনে ভোগড়া বাইপাস মোড়ের দক্ষিণে বাসন সড়ক, মালেকের বাড়ি এবং চেরগাআলী এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি টঙ্গীর আনারকলি এলাকায় মহাসড়ক উঁচুকরণের কাজ ও তারগাছ মার্ক ফিলিং স্টেশনের সামনে কার্পেটিং কাজের কারণে যানজট তৈরি হচ্ছে। ভোগড়া বাইপাস মোড়ের পাশে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ড্রেনেজসহ ওই প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।

গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ডি. একেএম নাহীন রেজা বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে পানি সরানোর উপযুক্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই এ মহাসড়কের পাশে পানি জমে যায়। ভারী বৃষ্টি হলে তা মহাসড়কের মূল অংশে চলে যায়।

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১০৫ কিলোমিটার অংশের অধিকাংশ যানবাহন চলাচলের জন্য মোটামুটি উপযোগী হলেও সড়কের কিছু কিছু জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট গর্ত। আর  দাউদকান্দি গোমতী সেতুর কাছে অতি বর্ষণে মাটি সরে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় তা যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ঈদযাত্রায় বৃষ্টি সে বিড়ম্বনা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার  বলেন, জেলার মহাসড়ক ও প্রধান তিনটি আঞ্চলিক মহাসড়ক মেরামত করে চলাচলযোগ্য করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ঈদযাত্রা তেমন একটা সুখকর নাও হতে পারে দৌলতদিয়া-মোংলা জাতীয় মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে। দেশের চতুর্থ বৃহত্তম এই জাতীয় মহাসড়কটি যুক্ত হয়েছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া থেকে ফরিদপুর (গোয়ালচামট)-মাগুরা-ঝিনাইদহ-যশোর-খুলনা ও বাগেরহাটের মোংলা (দিগরাজ) পর্যন্ত। প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কের ফরিদপুর থেকে মাগুরা পর্যন্ত কিছু অংশ ভোগান্তিতে ফেলছে চালক যাত্রীদের। আর যশোর থেকে খুলনার ফুলতলা পর্যন্ত জাতীয় এই মহাসড়কের অংশটুকু পুরোটা চলাচলের অনুপযোগী অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে সিরাজগঞ্জের তিনটি মহাসড়কই অবস্থা করুণ। সদ্য কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হলেও তা উঠতে সময় লাগেনি এক মাসও। সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলার আওতায় ঢাকা-বগুড়া, নগরবাড়ী-বগুড়া ও হাটিকুমরুল বনপাড়া মহাসড়ক মিলে ৭৬ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-নগড়বাড়ী-বগুড়া মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ জেলার অংশের ৪৫ কিলোমিটার এবং হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের ১০ কিলোমিটার অংশে ছোটবড় গর্তসহ অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।

জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ জানান, কার্পেটিংসহ মহাসড়কের যেসব স্থানে গর্ত হয়েছে, সেগুলো কোরবানি ঈদের আগে সংস্কার করা হবে।

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পুঠিয়া ও ঝলমলিয়া বাজার এলাকায় মহাসড়ক বেহাল অবস্থায় রয়েছে। প্রতিনিয়তই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। রাজশাহীর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা জানান, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পুঠিয়া এবং ঝলমলিয়া বাজারে রাস্তার টেন্ডার হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের দিকে কাজ শুরু হতে পারে।

এদিকে সড়কের এমন বেহাল দশায় ঈদযাত্রার ট্রিপ পরিচালনা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। হানিফ পরিবহনের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবস্থাপক সাইদ আহমেদ বলেন, ঢাকা-পাটুরিয়া-খুলনা রুটে ফেরিঘাটের একটা ভোগান্তি তো রয়েছেই। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয় যশোর থেকে খুলনার প্রায় ৫৫ কিলোমিটার রাস্তায়। এখানেই আমাদের সময় নষ্ট হয় প্রায় তিন ঘণ্টা। 

দেশের অন্যান্য মহাসড়কেরও বেহাল দশার কারণে বাসের সময়সূচির বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সোহাগ পরিবহনের রাজধানীর কলাবাগান কাউন্টার কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদের যাত্রীদের টিকেট কেনার সময়ই আমরা জানিয়ে দিয়েছি, বাস নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ছাড়ার সম্ভাবনা কম। তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্তও কোচের শিডিউল পরিবর্তন হতে পারে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads