• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
জয়দেবপুর-চন্দ্রা-এলেঙ্গা চার লেন আটকা অব্যবস্থাপনায়

অব্যবস্থাপনার মধ্যে চলছে জয়দেবপুর-চন্দ্রা-এলেঙ্গা চার লেন কাজ

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

জয়দেবপুর-চন্দ্রা-এলেঙ্গা চার লেন আটকা অব্যবস্থাপনায়

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ১৭ আগস্ট ২০১৮

পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সদস্য ছয় দেশের জাতীয় আয় বছরে সাত হাজার কোটি ডলার স্বপ্ন দেখিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় গঠন করা হয়েছিল সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) জোট। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ধারণা দিয়েছিল, এর কার্যক্রমের আওতায় অবকাঠামো খাতের ৪৬ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা বাড়বে। বাংলাদেশে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৭০ লাখ মানুষের। তবে সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিপুল প্রত্যাশার সাসেক কার্যক্রমের আওতায় নেওয়া এক প্রকল্পে অযাচিত সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। কাজে ধীর গতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প : জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়কের চার লেনে উন্নীত করার কাজের মেয়াদ দুই দফায় বাড়ানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পুনর্নির্ধারিত সময় ২০২০ সালের মধ্যেও এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে সন্দিহান আইএমইডি। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের এপ্রিলে ২ হাজার ৭৮৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় দুই দফায় সংশোধন করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যয় উন্নীত হয়েছে ৫ হাজার ৯৯৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকায়। প্রকল্পটি শেষ করতে বাড়তি ব্যয় হবে ৩ হাজার ২০৯ কোটি ৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে ব্যয় বেড়েছে ১১৫ শতাংশ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় সম্প্রতি প্রকল্পটির নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করে আইএমইডি। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় জানা যায়, শুরু থেকেই অব্যবস্থাপনা পিছু ছাড়েনি প্রকল্পটির। ২০১৩ সালের এপ্রিলে অনুমোদন পেলেও কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। ভূমি অধিগ্রহণ এখনো চলছে। শুরুতে যথাযথ পরিকল্পনার অভাবই প্রকল্প বাস্তবায়নে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আইএমইডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকল্পটি নেওয়া হলেও সে কাজে তদারকির অভাব ছিল। প্রতিবেদন পর্যালোচনা না করেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। ভুলত্রুটি মূল্যায়ন করা হয়নি। এতে সড়কের বিভিন্ন বাঁক সরলীকরণের বিষয়টিও নেই। ভূমি অধিগ্রহণেও অনেক ভুলভ্রান্তি রয়েছে। ফলে কিছু ক্ষেত্রে ঠিকাদার এখনো ভূমি বুঝে পায়নি। 

আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, সড়কটি এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। সার্ক হাইওয়ের করিডোর ও সাসেক রোড করিডোরের অংশ হওয়ায় এডিবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাও এতে অর্থায়ন করছে। এদিকে এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার সাসেক-২ প্রকল্পের আওতায় চার লেনে উন্নীত করার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। রংপুর থেকে লালমনিরহাট হয়ে বুড়িমারী পর্যন্ত সড়কটির বাকি অংশও পরবর্তী সময়ে চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ভারত, নেপাল ও ভুটান এ সড়কের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবে। তাই জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন।

আইএমইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনের আলোকে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর প্রয়োজনীয় সব অঙ্গ বিবেচনা না করে ২ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকায় মূল প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রস্তুত করে। ৫ হাজার ৯৯৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার সংশোধিত প্রকল্পে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৩৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এ হিসেবে পাঁচ বছরে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৩৪ শতাংশের কম। প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে আরো ৩ হাজার ৯৬৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে। তবে কাজে ধীরগতি, অতিবৃষ্টি, ঠিকাদারদের অদক্ষতা এবং নিম্নমানের প্রকল্প ব্যবস্থাপনার কারণে এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে সন্দিহান আইএমইডি।

সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রকল্পের আওতায় প্রতি কিলোমিটার চার লেনে উন্নীত করতে ২১ কোটি ৩২ লাখ থেকে ২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। মূল প্রকল্পে কোনাবাড়ী ফ্লাইওভার, চন্দ্রা ফ্লাইওভার, লতিফপুর রেলওয়ে ওভারপাস, সোহাগপুর (ধেরুয়া) রেলওয়ে ওভারপাস ও রাবনা ফ্লাইওভার ছিল। ২য় সংশোধনীতে নাওজোর ফ্লাইওভার, শফিপুর ফ্লাইওভার, চন্দ্রা লুপ, কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক ফ্লাইওভার, লতিফপুর রেলওয়ে ওভারপাস, গোড়াই ফ্লাইওভারসহ মোট ৬টি ফ্লাইওভার, ১৩টি আন্ডারপাস ও ডানপাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য ৫১ কিলোমিটার পৃথক লেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রতিটি প্যাকেজে বিদেশি ঠিকাদারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ নিয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান। তবে পরিদর্শনে একটি ছাড়া কোনো প্যাকেজেই বিদেশিদের পায়নি আইএমইডি। নির্মাণ কাজেও নানা অভিযোগ উঠে এসেছে তাদের পরিদর্শন প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, পানি নিষ্কাশনে সড়কের পাশে ড্রেন থাকলেও ড্রেনের পানি নামানোর নালা নেই অনেক জায়গায়। রাস্তার পাশের কবরস্থান-মসজিদ সরানো যায়নি। নির্মাণ কাজ চলাকালীন প্রয়োজনীয় সতর্কতার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাতেও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আলোর ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আর দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পের কাজ চলায় ধুলাবালিতে জনদুর্ভোগ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads