• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসছে আগস্টেই

নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া যাত্রী উঠানামা বন্ধ করা হচ্ছে

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসছে আগস্টেই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ আগস্ট ২০১৮

রাজধানীর গণপরিবহন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে সচেষ্ট সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বল্প সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চলাচলের সময় সব গণপরিবহনের দরজা বন্ধ রাখা, নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া যাত্রী উঠানামা বন্ধ করা, বাসের ভেতর চালক ও হেলপারের বৃত্তান্ত প্রদর্শন, চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্টের ব্যবস্থা রাখা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সংক্রিয় ও রিমোট কন্ট্রোলড অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালুর মতো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পাশাপাশি নানা উদ্যোগ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের ‘ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন’ সংক্রান্ত এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা গেছে, ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে গত বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সভায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে অন্তত ডজন খানেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে পরিবহন ব্যবস্থাপনায় চারটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- শহরে চলাচলকালে সব গণপরিবহনের দরজা বন্ধ রাখতে হবে। নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া যাত্রী উঠানামা করা যাবে না। গণপরিবহনের দৃশ্যমান দু’টি স্থানে চালক ও হেলপারের ছবিসহ নাম এবং চালকের লাইসেন্স নম্বর ও মোবাইল নম্বর প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। সব মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীকে বাধ্যতামূলক হেলমেট পরিধানের পাশাপাশি সিগন্যালসহ আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। মহাসড়ক বা দূর পাল্লার বাসে চালক এবং যাত্রীদের জন্য সিটবেল্ট স্থাপন ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। বিআরটিএ এবং বাংলাদেশ পুলিশ এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে।

সড়ক ব্যবস্থাপনায়ও ৯টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে- আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে রাজধানীর যেসব স্থানে ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস রয়েছে সেসব স্থানের উভয় পাশের ১০০ মিটারের মধ্যে রাস্তা পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস ব্যবহার করবে তাদের ‘ধন্যবাদ’ কিংবা ‘প্রশংসাসূচক’ সম্বোধনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাসে প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ২০ আগস্টের মধ্যে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা এবং ৩০ আগস্টের মধ্যে বাইরে আয়নার ব্যবস্থা করতে হবে। ১৮ আগস্টের মধ্যে শহরের সব সড়কে জেব্রা ক্রসিং ও রোড সাইন দৃশ্যমান করে ফুটপাত দখলমুক্ত ও অবৈধ পার্কিং এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। সড়কের নাম ফলক দৃশ্যমান স্থানে সংযোজন করতে হবে। ট্রাফিক সপ্তাহে চলমান কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে। দুই সিটি করপোরেশন ও ডিএমপিকে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে।

সিটি করপোরেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত ট্রাফিক সিগন্যালে সয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগনাল ব্যবস্থাপনা পুলিশকে হস্তান্তর করতে হবে। শহরে রিমোট কন্ট্রোল অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগনালিং চালু করতে হবে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিএনসিসি ও ডিএমপিকে সময় দেওয়া হয়েছে। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনিষ্পন্ন বাংলাদেশ পুলিশ থেকে পাওয়া ‘জনবল’ বিষয়ক প্রস্তাবের সব সিদ্ধান্ত সমন্বয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ফোকাল পয়েন্টে কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ এবং উত্তর সিটি করপোরেশন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে। দুই সিটি করপোরেশনকে রোড ডিভাইডারের উচ্চতা বৃদ্ধি বা স্থানের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া মহাখালী ফ্লাইওভারের পর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ন্যূনতম দুটি স্থানে স্থায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি দৈবচয়নের ভিত্তিতে যানবাহনের ফিটনেস এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা নেওয়া হবে। শহরের অন্যান্য স্থানেও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী অস্থায়ী অনুরূপ কাজের জন্য মোবাইল কোর্ট বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ঢাকা জেলা প্রশাসন, ডিএমপি ও বিআরটিএকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

স্কুল সময়ে যেখানে সেখানে রাস্তা পারাপার বন্ধেও সভায় আলোচনা হয়েছে। এ জন্য শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিষ্ঠান ছুটি বা শুরু হওয়ার আগে অপেক্ষাকৃত বয়ঃজ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী, স্কাউট এবং বিএনসিসির সহযোগিতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্টানকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও লাইসেন্স নিয়েও সভায় আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে চারটি- সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, ফিটনেস সনদ দেওয়ার আগে পরিবহন দেখানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রুটপারমিট বা ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলোকে দ্রুত ধ্বংস করার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। পাশাপাশি লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ‘লার্নার’ সনদ দেওয়ার সময় ড্রাইভিং টেস্ট নেওয়া যেতে পারে বলেও মতামত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উত্তীর্ণদের দ্রুত লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘাটতি থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করতে হবে। সভায় নেওয়া এসব সিদ্ধান্ত জনসাধারণকে অবহিত করার জন্য গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নিতে তথ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সভায় আগামীকাল শনিবার ১৮ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি), স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব, প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর মার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও মহাপরিচালক (জিআইই্উ) এয়ারপোর্ট সড়ক হতে নগর ভবন পর্যন্ত ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়ক পরিদর্শন করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) এসব বিষয়ে সমন্বয় করবেন। সভা থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে করণীয় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলোকে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং যানজট নিরসনে এর আগে গৃহীত পদক্ষেপগুলো গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট আবার বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বরাবর উপস্থাপন করবে।

বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (বিআরটিসি), বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসক, বাংলাদেশ স্কাউট, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন এবং শিক্ষা ও তথ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads