• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
বে টার্মিনাল প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হচ্ছে

বে-টার্মিনাল

সংরক্ষিত ছবি

যোগাযোগ

বে টার্মিনাল প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হচ্ছে

ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা

  • শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম
  • প্রকাশিত ০৪ অক্টোবর ২০১৮

চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হবে শিগগির। প্রথম পর্যায়ে করা হবে ট্রাক টার্মিনাল ও ডেলিভারি ইয়ার্ড তৈরির কাজ। প্রকল্পের জায়গা নিয়ে সব জটিলতা কেটে যাওয়ায় এখন কাজ শুরু করতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মোট ৯০৭ একর জমির ওপর বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে বেসরকারি মালিকানাধীন ৬৮ একর জমি অধিগ্রহণের মূল্য বাবদ ৩৫২ কোটি ৬২ লাখ টাকা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আশা করছি এর বাইরে ৮৩৯ একর সরকারি খাস জমি হস্তান্তরের বিষয়েও দ্রুত সিদ্ধান্ত হবে। তিনি বলেন, বেসরকারি মালিকানাধীন জমিগুলো বুঝে পাওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকায় বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০০৬ সালে। কিন্তু চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনাপত্তি, বিভিন্ন সংস্থার সনদ পাওয়া ও  জায়গা অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতাসহ নানা কারণে চলে যায় দীর্ঘ সময়। যে কারণে উদ্যোগ গ্রহণের দীর্ঘ এক যুগ পরও মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

বন্দর সূত্র জানায়, বে টার্মিনাল নির্মাণের সমীক্ষা কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সেখানে একটি ১ হাজার ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, ১ হাজার ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার টার্মিনাল ও ৮৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের আরেকটি কন্টেইনার টার্মিনাল স্থাপন করা হবে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, পিপিপি এবং জিটুজি পদ্ধতিতে বে টার্মিনাল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। ভারত, সিঙ্গাপুর, চীন, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বেশ ক’টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বে টার্মিনাল নির্মাণ ও তার অপারেশনাল কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাও পেশ করেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকায় বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০০৬ সালে। কিন্তু চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনাপত্তি, বিভিন্ন সংস্থার সনদ পাওয়া ও  জায়গা অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতাসহ নানা কারণে চলে যায় দীর্ঘ সময়। যে কারণে উদ্যোগ গ্রহণের দীর্ঘ এক যুগ পরও মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

বেসরকারি মালিকানাধীন জমিগুলোর অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ডেলিভারি ইয়ার্ড ও ট্রাক টার্মিনাল তৈরির কাজ শুরু করা হবে। এটি সম্পন্ন হলে বে টার্মিনাল থেকেই পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হবে। বর্তমানে এলসিএল কন্টেইনারের পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয় জেটি থেকে। পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার ট্রাক জেটিতে প্রবেশ করে। সন্ধ্যায় পণ্য ডেলিভারি পেতে এসব ট্রাককে বন্দরে ঢুকতে হয় সকাল থেকে। তাতে বন্দরের অপারেশনাল কাজে নানা সমস্যা হয়। বে টার্মিনালে ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণ সম্পন্ন হলে জাহাজের হুক পয়েন্ট থেকে সরাসরি সেখানে এলসিএল কন্টেইনার নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখান থেকে মাল সরবরাহ করা হবে। ফলে অন্তত দৈনিক পাঁচ হাজার ট্রাককে বন্দর জেটিতে প্রবেশ করতে হবে না। ফলে নগরীতে প্রতিদিন বন্দরকেন্দ্রিক যে যানজট সৃষ্টি হয় তারও নিরসন হবে।

বে টার্মিনাল প্রসঙ্গে চিটাগং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আমদানি-রফতানি কার্যক্রম যে হারে বাড়ছে সে তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়েনি। ফলে আমদানি-রফতানি খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাসাধারণ। এ অবস্থায় বে টার্মিনাল প্রকল্পকে অগ্রাধিকার প্রকল্প বিবেচনায় দ্রুত বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বন্দর সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগর তীরে পতেঙ্গা সিইপিজেডের পেছন থেকে দক্ষিণ কাট্টলীর রাশমনি ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাস্তবায়ন করা হবে বে টার্মিনাল প্রকল্প। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে অধিক ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো ও জেটিতে জাহাজ প্রবেশে জোয়ার-ভাটার যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে বে টার্মিনালে তা থাকবে না। এখন বন্দর জেটিতে ৯ দশমিক ৫ মিটারের বেশি গভীরতা নিয়ে জাহাজ জেটিতে আসতে পারে না। বে টার্মিনালে পানির গভীরতা বেশি থাকায় ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ অনায়াসে ভিড়তে পারবে। বর্তমানে বন্দর জেটিতে যে পরিমাণ জাহাজ বার্থিং নিতে পারে বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে তার দ্বিগুণ জাহাজ বার্থিং নেওয়া সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads